কাছাড়ে ৭২তম প্রজাতন্ত্র দিবসের মূল ভাষণে আসাম আন্দোলন-অসমিয়া স্বাভিমানের উল্লেখ থাকলেও ব্রাত্য ভাষাশহিদ ও বরাকের উন্নতি
৭২তম প্রজাতন্ত্র দিবস উদযাপন উপলক্ষে প্রশাসন আয়োজিত অনুষ্ঠানে কাছাড়ে পতাকা উত্তোলন করেন মন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্য। প্রায় এক ঘন্টার ভাষণে তিনি রাজ্য সরকারের নানান কাজের খতিয়ান তুলে ধরেন। ভাষণের শুরুতেই আসাম আন্দোলনের শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান এবং সরকার কিভাবে শহিদদের পরিবারের সুরক্ষা নিয়ে ভাবছে সেটা উল্লেখ করেন। পাশাপাশি অসমিয়া স্বাভিমান রক্ষা, রাজ্যের বিভিন্ন জনজাতির উন্নতির পরিকল্পনা, সরকারের বিভিন্ন ঘোষনার পুনরাবৃত্তি, কোভিড যোদ্ধাদের সম্মান জানানো, ইত্যাদি তার ভাষণে স্থান পায়। বরাক নদীর উপর একটি সেতুর কাজ শুরু হয়েছে এবং বায়োডাইভাসিটি পার্কের কথা বলা ছাড়া বিমানবন্দর, লজিস্টিক পার্ক, মিনি সেক্রেটারিয়েট ইত্যাদির কাজের অগ্রগতি বা নতুন সেতু নিয়ে কোনও কথাই বলেননি সরকারের প্রতিনিধি মন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্য। এদিকে টানা এক ঘণ্টার বেশি রোদে দাঁড়িয়ে মাথা ঘুরে পড়তে শুরু করে স্কুলের ছাত্রীরা। তবে তারা পরে নিজেদের সামলে কুচকাওয়াজে অংশ নেয়।
নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী সকাল ৯টায় পুলিশ প্যারেড ময়দানে পতাকা উত্তোলন করেন বন, মীন এবং আবগারি বিভাগের মন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্য। তার সঙ্গে ছিলেন জেলাশাসক কীর্তি জল্লি এবং পুলিশ সুপার বিএল মিনা। এরপর ভাষণের শুরুতেই তিনি বলেন, “আসাম আন্দোলনের শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে আমাদের সরকার। ১০ ডিসেম্বর দিনটিকে বিশেষভাবে পালনের পাশাপাশি শহিদদের পরিবারের সদস্যদের আর্থিক সাহায্য করছি আমরা। অসম চুক্তি অনুযায়ী বিদেশিদের আটক করা, সীমান্তের জমি বিবাদ মেটানোর এবং খোলা সীমান্ত সিল করার কাজে আমাদের সরকার সচেষ্ট ছিল, অতীতে অন্যান্য সরকার এব্যাপারে উদাসীন ছিল।” তবে তার এক ঘণ্টার বেশি ভাষণে বরাকের ১১ শহিদের উল্লেখ আসেনি।
তিনি বলেন, “রাজ্যের ছয়টি উপজাতি জনগোষ্ঠীর সুরক্ষার জন্য ইতিমধ্যে সরকার বিরাট অঙ্কের অর্থ দিয়েছে এবং আগামীতে তার থেকেও বেশি আর্থিক সাহায্য দেওয়া হবে। রাজ্যের খিলঞ্জিয়াদের জমির পাট্টা দেওয়ার ব্যাপারে আমাদের সরকার প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। মুখ্যমন্ত্রী সবসময় বলেন জাতি-মাটির সুরক্ষার কথা। অহমিয়া স্বভিমান রক্ষার ক্ষেত্রে আমাদের সরকার যে ভূমিকা নিয়েছে সেটা প্রশংসার যোগ্য। অসমের জনসংখ্যার প্রায় ১৭ শতাংশ চা বাগান জনজাতির মানুষ, তাদের উন্নতির জন্য অনেক টাকা খরচ করা হয়েছে, বিদ্যালয়, শৌচাগার ইত্যাদি বানিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাগানের ছেলে মেয়েদের চাকরি পাইয়ে দিতে বিশেষ ভুমিকা নিয়েছে আমাদের সরকার। তাদের স্বাস্থ্যের জন্য বিশেষ প্রকল্প চালু করা হয়েছে।”
বন মন্ত্রী হিসেবে পরিমল শুক্লবৈদ্য দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুনাম অর্জন করতে সমর্থ হয়েছেন। বন বিভাগের কার্যকলাপ নিয়ে তিনি বলেন, “কাছাড় জেলার ধলাই সহ রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় পার্ক গড়ে তোলা ছাড়াও বন্যপ্রাণীদের সুরক্ষা, রাজ্যের গাছপালা সুরক্ষা, বনাঞ্চল এলাকা বৃদ্ধি ইত্যাদি ক্ষেত্রে আমরা বিশেষ মনোযোগ দিয়েছি। এর ফলস্বরূপ ২২১ বর্গ কিলোমিটার বনাঞ্চল বৃদ্ধি পেয়েছে। বৃদ্ধি পেয়েছে পশুপাখিদের সংখ্যাও। এরই সঙ্গে আমরা পর্যটন শিল্পকে উন্নত করতে চাইছি। কাজিরাঙ্গা সহ রাজ্যের বেশ কয়েকটি এলাকাকে পর্যটনের ক্ষেত্রে পরিণত করতে আমাদের বিশেষ পরিকল্পনা রয়েছে।” তবে এই ক্ষেত্রেও তিনি বরাক উপত্যকার কোনও পর্যটন ক্ষেত্রের নাম উল্লেখ করেননি।
আসাম আন্দোলনের শহিদদের শ্রদ্ধা জানানো, নামঘরের উন্নতি, বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানকে পরিকাঠামোগতভাবে উন্নত করা, ইত্যাদি বেশ কিছু কথা তিনি তাঁর ভাষণে উল্লেখ করেন। কৃষকদের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “রাজ্য সরকার কৃষকদের ট্র্যাক্টর দিয়েছে উন্নত মানের বীজ দিয়েছে এবং আগামীতে তাদের উন্নতমানের বাজার গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে। বাংলাদেশের সঙ্গে কথা হয়েছে, ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক সীমান্ত হাট বানানোর পরিকল্পনা রয়েছে। রাজ্যের গ্রামাঞ্চলগুলোকে প্রকাশ্যে মলমূত্রত্যাগ-বিহীন করতে বিশেষ পরিকল্পনা নিচ্ছে সরকার। করোনা পরিস্থিতিতে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে ছাত্রছাত্রীরা অনলাইনে ক্লাস করছে, আগামীতে স্মার্ট ক্লাসরুম ইত্যাদির বড়োসড়ো পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। রাজ্যের প্রধান ভাষা গুলোকে উন্নত করার ক্ষেত্রে বিশেষ ভাবে কাজ করছে সরকার।”
ঘন্টাখানেক তার ভাষণ চলাকালীন রোদে দাঁড়িয়েছিল বিভিন্ন বিদ্যালয় থেকে আসা ছাত্রছাত্রীরা। রোদে দাঁড়িয়ে এক সময় বেশ কয়েকটি ছাত্রী মাথা ঘুরে পড়তে শুরু করে। তবে তাদের শারীরিক অবনতি হয়নি সঙ্গে থাকা শিক্ষক এবং সহপাঠীরা এগিয়ে এসে তাদের সাহায্য করে। ভাষণ শেষে তারা প্যারেডে অংশ নেয়।
শিলচরের সাংসদ রাজদীপ রায় ছাড়া সেদিন অনুষ্ঠানে যোগ দেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কবীন্দ্র পুরকায়স্থ, ডিআইজি দিলীপ কুমার দে, বিধায়ক দিলীপ কুমার পাল, উপাধ্যক্ষ আমিনুল হক লস্কর, শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ ডাঃ বাবুল বেজবরুয়া এবং অধীক্ষক ডাঃ অভিজিৎ স্বামী সহ বিভিন্ন আমন্ত্রিত অতিথি এবং সরকারি আধিকারিকরা।
এরপর দুইজন স্বাধীনতা সংগ্রামীদের শ্রদ্ধা জানান মন্ত্রী পাশাপাশি প্যারেড পরিদর্শন করেন। বিভিন্ন সরকারি বিভাগের তরফে এদিন ট্যাবলো সাজিয়ে প্রদর্শন করা হয়। পরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ৭২তম প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠান শেষ হয়।
Comments are closed.