Also read in

প্রজাতন্ত্র দিবসে দিল্লিতে স্বচক্ষে রাফালের 'এয়ার-শো' দেখার অনুভূতি জানালেন শিলচরের অরিত্র ধর

এই বছর প্রজাতন্ত্র দিবসে দিল্লিতে আয়োজিত অনুষ্ঠানের মুখ্য আকর্ষণ ছিল রাফাল বিমানের ‘এয়ার-শো’, টিভির পর্দায় ভারতবর্ষ সহ বিশ্বের অসংখ্য লোক ভারতীয় সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে রাফাল বিমানের কেরামতি দেখেছেন। তবে শিলচরের ছেলে অরিত্র ধর নিজের চোখে দিল্লির রাজপথে দাঁড়িয়ে রাফালের ‘এয়ার-শো’ দেখার সুযোগ পেয়েছেন। তিনি আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক, এবছর এনসিসি সদস্য হিসেবে অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার সুযোগ পান। অনুষ্ঠানের পর দিল্লি থেকে ফোনে নিজের অনুভূতি জানান।

আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ছাত্র হিসেবে দিল্লির রাজপথে প্রজাতন্ত্র দিবসের প্যারেডে অংশ নেওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। রাজ্যের চারজন ছাত্রকে এই বছর এই সুযোগটি দেওয়া হয়েছে, বরাক উপত্যকা থেকে একমাত্র তিনিই এরমধ্যে ছিলেন। প্রায় এক মাস আগে তারা দিল্লি চলে যান এবং সেখানে বিভিন্ন ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী হওয়ার সুযোগ হয়। ২৪ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রনে তার মুখোমুখি বসার সুযোগ হয়। ২৬ জানুয়ারি নিজের চোখে গণতন্ত্র দিবসের প্যারেড দেখেন, বিভিন্ন রাজ্যের ট্যাবলো দেখার পাশাপাশি ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিভিন্ন কার্যকলাপ খুব কাছে থেকে দেখার সুযোগ হয় তার।

তিনি বলেন, “একজন দেশভক্ত যুবক হিসেবে আমি সবথেকে বেশি রোমাঞ্চ অনুভব করি ভারতীয় সেনাবাহিনীর কার্যকলাপগুলো দেখে। ছোটবেলা থেকেই টিভির পর্দায় সেগুলো দেখে অত্যন্ত আনন্দ পেতাম। কিন্তু চোখের সামনে ভারতীয় সেনাবাহিনীর অস্ত্র শস্ত্র প্রদর্শন এবং তাদের শৌর্য দেখার অনুভূতিই আলাদা। শুধু আমি নয় যতজনই আসাম থেকে বা দেশের অন্যান্য জায়গা থেকে এসেছি এই মুহূর্তের সাক্ষী হওয়ার পর আমাদের মনে হয়েছিল আমরাও একদিন ভারতীয় সেনায় যোগ দেব। তবে এদিনের সব থেকে ঐতিহাসিক মুহূর্ত ছিল রাফাল বিমানের ‘এয়ার-শো’ দেখার সুযোগ পাওয়া। আমরা আগে থেকেই জানতাম ৯০০ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টার গতিতে এটি চলতে পারে। যখন বিমানটি চালু হয়, দূর থেকে আমরা দেখতে পাই, এরপর ঝড়ের গতিতে বেরিয়ে যায় তারপর আকাশের উপর বিভিন্ন কারুকার্য প্রদর্শন করে। এটা দেখে স্তম্ভিত হয়ে যাই, হয়তো ভাষায় বোঝানো যাবেনা অনুভূতি কেমন ছিলো। অবশ্যই এটা জীবনের সেরা মুহূর্ত। যদি কোনদিন সুযোগ পাই এবং পরিশ্রম করে সফলতা অর্জন করতে পারি তবে ভারতীয় সেনায় যোগ দিতে ইচ্ছুক।”

গণতন্ত্র দিবসের প্যারেড এবছর একটু অন্যরকম ছিল, সেটা করোনা ভাইরাসের জন্য। এবছরের মুখ্য অতিথি ছিলেন বৃটেনের প্রধানমন্ত্রী, তবে তিনি পরিস্থিতির জন্য শেষ মুহূর্তে ভারত সফর বাতিল করেন। ভিতরের পরিবেশ কেমন ছিল এটা জানাতে গিয়ে অরিত্র বলেন, “আমরা যেদিন থেকে দিল্লি গেছি, বারবার বলা হয়েছে সামাজিক দূরত্ব এবং অন্যান্য প্রটোকল মানতেই হবে। তাই খুব একটা বেশি ঘোরাফেরা করতে পারেনি অথবা বাইরে থেকে আসা অতিথিদের সঙ্গে কথা বলা হয়নি। এদিন সকালে অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য ভোর চারটে নাগাদ অনুষ্ঠানস্থলে যেতে বলা হয়। পুরো অনুষ্ঠান চলাকালীন খুব কড়া নিয়ম রাখা হয়েছিল, ফলে অনেকে দূর থেকে দেখলেও সামনে গিয়ে কথা বলার সুযোগ হয়নি। তবে এই মুহূর্তের সাক্ষী হওয়া অবশ্যই আমার জীবনের একটি বড় ঘটনা।”

অত্যন্ত সাধারণ ঘর থেকে উঠে আসা অরিত্র ধর ভালো ছাত্র এবং সংগঠক হওয়ার পাশাপাশি একজন সংস্কৃতিপ্রেমী এবং সমাজসেবী হিসেবে পরিচিত। মা-বাবার আদর্শ এবং তার বেড়ে ওঠার পরিবেশের জন্যই তিনি বরাবর একজন ভদ্র এবং নম্র ব্যক্তি হিসেবে নিজেকে তুলে ধরেন। শিক্ষক থেকে সহপাঠী, বন্ধু এবং যার সঙ্গেই তার পরিচয় হয়, প্রত্যেকে তাকে পছন্দ করেন। আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেওয়ার পর তিনি নিরপেক্ষ মনোভাব নিয়ে এগিয়ে গেছেন। একসময় নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন এবং আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। ছাত্র হিসেবে সরকারের বিভিন্ন নীতির ব্যাপারে কথা বললেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তার অত্যন্ত প্রিয় ব্যক্তি। আসাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম কোন ছাত্র হিসেবে দিল্লিতে আয়োজিত গণতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন তিনি। শুধুমাত্র শিলচর শহর নয়, গোটা বরাক উপত্যকাকে তিনি গর্বিত করেছেন।

Comments are closed.

error: Content is protected !!