Also read in

মূল্য নিয়ন্ত্রণে শিলচরে 'মাছের মজলিস', "ফাটক বাজারে ৫০০ টাকা দাম হলে আমরা ৩৫০ টাকায় দেবো," বললেন পরিমল

মাছ উৎপাদনকারী এবং ক্রেতাদের মধ্যে দাঁড়িয়ে মুনাফা লুটছেন কিছু মধ্যভোগী ব্যবসায়ী, ফলে মাছের দাম অযৌক্তিক ভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই ধারা ভেঙে দিয়ে দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে শিলচরে ‘মাছের মজলিস’ নামে এক খুচরো বিক্রির কাউন্টার শুরু করেছে রাজ্যের মীন বিভাগ। মীন-মন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্য বৃহস্পতিবার দুপুরে নিজে কাউন্টারটি উদ্বোধন করেন। তার সঙ্গে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শিলচরের বিধায়ক দিলীপ কুমার পাল, ডিআইজি দিলীপ কুমার দে, জেলাশাসক কীর্তি জাল্লি সহ অন্যান্যরা। মন্ত্রী নিজের হাতে অতিথিদের বোয়াল-কাতলা-চিতল ইত্যাদি মাছ উপহার দেন।

এই রিটেল মাছের দোকানের মাধ্যমে রাজ্যে ‘ফিশারি অন হুইল’ পদ্ধতিতে মানুষের বাড়িতে মাছ পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রাথমিকস্তরে তিনজন ব্যবসায়ীকে মাছ বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার জন্য বাইক এবং গাড়ি দেওয়া হয়েছে। ৮৮৭৬৪১১৩৫৫ নম্বরে ফোন করে বাড়িতে বসেই নায্যমূল্যে টাটকা মাছ কিনতে পারবেন মানুষ। প্রাথমিক স্তরে সীমিতভাবে পদ্ধতিটি শুরু হলেও আগামীতে একটি ধারা গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। এতে স্থানীয় যুবকদের কাজের সুযোগ দেওয়ার পাশাপাশি ভালো গুণগত মানসম্পন্ন মাছ বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার একটি পরিবেশ গড়ে উঠবে।

সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে পরিমল শুক্লবৈদ্য বলেন, “কৃষি ক্ষেত্রের মতই মাছ বিক্রির ক্ষেত্রেও মধ্যভোগীরা দীর্ঘদিন ধরে উৎপাদনকারীদের ঠকিয়ে আসছেন এবং তাদের কার্যকলাপের জন্য বাজারে মাছের অত্যধিক দাম। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি সরাসরি উৎপাদনকারীদের থেকে মাছ এই কাউন্টারে পাঠাবো, তাদের ন্যূনতম লাভ পাইয়ে দিয়ে টাটকা মাছ জনগণের হাতে তুলে দেব। এতে উৎপাদনকারীরা লাভবান হবেন এবং ক্রেতারা সুলভ মূল্যে ভালো মাছ খেতে পারবেন। নিয়ন্ত্রিত মূল্যে মাছ বিক্রি হবে, ফলে কালোবাজারির জায়গা থাকবেনা। রাজ্যে এখনও মাছের কোনও নির্ধারিত মূল্য নেই, আমরা প্রথমে উৎপাদনের দিকে নজর দিয়েছি, আগামীতে বিভিন্ন মাছের ক্ষেত্রে এলাকাভিত্তিক নির্ধারিত মূল্য ঠিক করার পরিকল্পনা রয়েছে। যে মাছ ফাটক বাজারে ৫০০ টাকা প্রতি কিলো বিক্রি হচ্ছে, আমাদের এই কাউন্টারে ৩৫০ টাকায় বিক্রয় করা সম্ভব হবে। এতে পুরো বাজারের উপর প্রভাব পড়বে এবং মাছের দাম ধীরে ধীরে কমে আসতে শুরু করবে। এমনটা করতে পারলে দুই পক্ষেরই লাভ হবে এবং মধ্যভোগি দালালরা কাউকে ঠকাতে পারবেনা।”

কিছুদিন আগে পরিমল শুক্লবৈদ্য বলেছিলেন বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে ভারতের মাটিতে মাছ পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে এবং এর আড়ালে অবৈধ জিনিসপত্র ভারতে পাচারের সম্ভাবনা রয়েছে। আবারও এই কথার পুনরাবৃত্তি করে তিনি বলেন, “আমাদের রাজ্যে মাছের উৎপাদন এত বেশি বেড়েছে, এখন আর বাইরে থেকে মাছ আনার প্রয়োজন নেই। তবু কিছু কিছু এলাকায় দেখা যাচ্ছে চালানি মাছ অত্যন্ত কম দামে বিক্রি হচ্ছে। আমরা প্রাথমিক তদন্ত চালিয়ে দেখেছি বাংলাদেশ থেকে আগরতলা হয়ে এই মাছগুলো ভারতে ঢুকেছে। এই মাছগুলো বাংলাদেশে যে দামে বিক্রি হয় তার থেকে অনেক কম দামে কাছাড় জেলার বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি হচ্ছে। তার মানে মাছ বিক্রি করে ব্যবসার উদ্দেশ্য নয়, মাছের আড়ালে নিশ্চয়ই অবৈধ সামগ্রী পাচার হচ্ছে। সামগ্রীগুলো মাছের পেট থেকে বের করে মাছ জলের দামে বাজারে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। আমরা ইতিমধ্যে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি এবং বরাক উপত্যকার তিন জেলার পুলিশের সঙ্গে এব্যাপারে কথা হয়েছে, এসব আটকাতে আগামীতে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”

জেলাশাসক কীর্তি জাল্লি বলেন, “বাঙালিদের বুদ্ধিদীপ্ততার সঙ্গে কেউ মোকাবেলা করতে পারেনা, এমনটাই বলা হয়। এর পেছনে কারণ হচ্ছে বাঙালিরা মাছ খান। আজ রাজ্য সরকার যে উদ্যোগ নিয়েছেন এর ফলে শুধুমাত্র উন্নত গুণগত মানসম্পন্ন মাছ জনগণের হাতে তুলে দেওয়ার পাশাপাশি রোজগারের রাস্তা খুলে যাবে। অনেক যুবক এই উদ্যোগের সঙ্গে জড়িত হয়ে রোজগারের নতুন পথ খুঁজে পাবে। এছাড়া উৎপাদনকারীদের হাতে অনেক বেশি লাভ গিয়ে পৌঁছবে। আমি আজ সরকারকে এর জন্য ধন্যবাদ দিতে চাই।”

বিধায়ক দিলীপ কুমার পাল এবং ডিআইজি দিলীপ কুমার দে তাদের ভাষণে মন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্য এবং রাজ্য সরকারের প্রশংসা করেন।

Comments are closed.