Also read in

সম্প্রীতির বার্তা: রাম মন্দির নির্মাণের কাজে ৫০ হাজার টাকা দিলেন ওসি সাহাব উদ্দিন, সাধুবাদ জানালো বিশ্ব হিন্দু পরিষদ

অযোধ্যায় রাম মন্দির নির্মাণের শিলান্যাস করেছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তবে রামের ভক্তরা চাননা সরকারের টাকায় মন্দির নির্মাণ হোক, ভক্তরা নিজের সাধ্যমত আর্থিক অনুদান দেবেন এবং সেই টাকায় মন্দির নির্মাণ হবে। শ্রীরামচন্দ্র জন্মভূমি তীর্থ ক্ষেত্র ট্রাস্টের পক্ষ থেকে এমনটাই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এবং এতে সম্মতি দিয়েছে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। ১৫ জানুয়ারি থেকে সারাদেশে শুরু হয়েছে রাম মন্দির নির্মাণের অর্থ সংগ্রহ প্রক্রিয়া। অনেকেই স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে এসে সাধ্যমত অর্থ দান করছেন।

কাছাড় জেলার ধলাই থানার অফিসার ইনচার্জ সাহাব উদ্দিন বড়ভূইয়া এবং তার পরিবারের সদস্যরা রাম মন্দির নির্মাণের জন্য ৫০ হাজার টাকা দান করে এক বিরল ধর্মনিরপেক্ষতা এবং সম্প্রীতির বার্তা দিয়েছেন।

যেখানে সমাজের কিছু শ্রেণীর মানুষ বারবার রাম মন্দিরকে ঘিরে নানান ধর্মীয় উস্কানিমূলক কথা বলছেন, সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে একজন ইসলাম ধর্মাবলম্বী ব্যক্তি হওয়া সত্ত্বেও রাম মন্দির নির্মাণের জন্য অর্থ দান করে ভাতৃত্ববোধের বার্তা দিয়েছেন সাহাব উদ্দিন বড়ভূঁইয়া।

বৃহস্পতিবার দুপুরে স্ত্রী ও দুই শিশু কন্যাকে সঙ্গে নিয়ে নরসিংপুরের সংঘ কার্যালয়ে উপস্থিত হন সাহাব উদ্দিন বড়ভূঁইয়া। নিজের উপার্জনের অর্থ থেকে ৫০ হাজার টাকা রাম মন্দির নির্মাণের জন্য দান করেন তিনি। এতে অনেকেই তাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। শুধুমাত্র অর্থ দান করা নয় বরং এই কাজটির মাধ্যমে তিনি ধর্মীয় সৌহার্দ্য এবং ভাতৃত্ববোধের এক সুন্দর বার্তা দিয়েছেন।

অনেকেই সাধ্যমত রাম মন্দির নির্মাণের অর্থ দিচ্ছেন আবার কেউ কেউ বিষয়টাকে বেশ বড় করে প্রচার করছেন। কিন্তু সাহাব উদ্দিন বড়ভূইয়া এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তার নিজের উপার্জিত অর্থ থেকে ৫০ হাজার টাকা দান করেন। এব্যাপারে নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে তিনি বলেন, “ছোটবেলা থেকেই রাম মন্দির নির্মাণের পক্ষে ছিলাম কারণ এটা শুধু একটা ধর্মীয় ব্যাপার নয়, আমি বিশ্বাস করি ভারতীয় ঐতিহ্যের অংশ। আমার ধর্মীয় পরিচয় অন্য হলেও এই কাজে যোগদান করতে পারছি এটাই ভাল লাগছে। ভারতবর্ষ সম্প্রীতির দেশ আমরা চাই সবাই একে অন্যের পাশে থেকে দেশকে উন্নত করবো।”

রাম জন্মভূমি নিধি সমর্পণ অভিযান সমিতির ব্যানারে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সদস্যরা অনুদান সংগ্রহের কাজ শুরু করেছেন। এতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন উদয় শঙ্কর গোস্বামী, সান্তনু নায়েক, স্বপন শুক্লবৈদ্য, সুব্রত দাস, অশেষ ভট্টাচার্য্য, জয়দীপ পাল সহ অন্যান্যরা। তারা সাহাব উদ্দিন বড়ভূইয়ার এই কাজকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। তারা বলেন, “আমরা প্রথম থেকে বলে আসছি, কাউকে অর্থ দেওয়ার জন্য জোর করা হবেনা, তবে স্বতঃস্ফূর্তভাবে শ্রদ্ধা সহকারে এগিয়ে এসে কেউ দান করলে সেটা গ্রহণ করা হবে। অযোধ্যায় রাম মন্দির শুধু হিন্দু ধর্মের একটি মন্দির নয়, এটি ভারতীয় ঐতিহ্যের অংশ। ইন্দোনেশিয়ার মত ইসলামিক দেশে এখনো রামায়ণ চর্চা রয়েছে, তাদের বিমান পরিষেবার নাম রাখা হয়েছে ‘গরুর’। মা সরস্বতী বা গণেশের মূর্তি তাদের সংসদভবনে স্থান পায়। ভারতবর্ষে আমরা এধরণের সৌহার্দ্য দেখতে চাই। শুধু সাহাব উদ্দিন বড়ভূইয়া নন, ইসলাম ধর্মের অনেকেই ছোটখাটো অনুদান দিচ্ছে এবং আমরা অত্যন্ত শ্রদ্ধা সহকারে সেটা গ্রহণ করছি। কেউ কেউ এমনটা বলেছেন, তাদের পূর্বপুরুষরা হিন্দু ছিলেন ফলে রামচন্দ্রের প্রতি তাদের মনে গভীর শ্রদ্ধা রয়েছে। আমরা চাই এই সম্প্রীতির বার্তা আরও ছড়িয়ে পড়ুক।”

প্রাথমিক পর্যায়ে বলা হয়েছিল বরাক উপত্যকায় ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত অর্থ সংগ্রহ প্রক্রিয়া চলবে তবে এখন সেটা আরেকটু বৃদ্ধি করার পরিকল্পনা নিয়েছে রাম জন্মভূমি নিধি সমর্পণ অভিযান সমিতি।

Comments are closed.