
দেউলিয়া ঘোষিত হতে পারে কাছাড় ও নগাঁও কাগজকল, মঙ্গলবার ফের এনসিএলটি-র শুনানি, সরকারের অগ্নিপরীক্ষা
কাছাড় এবং নগাও কাগজ কল পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়ায় ন্যাশনাল কোম্পানির লো ট্রাইবুনাল (এনসিএলটি) ৮ বার তাদের শুনানি পিছিয়েছে। মঙ্গলবার আরেক দফা শুনানির তারিখ রয়েছে অথচ সরকারের পক্ষে এখনও দুই কাগজ কল পুনরুদ্ধার নিয়ে কোনও প্রস্তাব বা প্রপোজাল তুলে ধরা হয়নি। গতবছর ১০ সেপ্টেম্বর রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে এনসিএলটি-র কাছে চিঠি লিখে দুই মাস সময় চাওয়া হয়েছিল, তবে এর প্রায় ৬ মাস পেরিয়ে গেলেও সরকারের তরফে পুনরুদ্ধার পরিকল্পনা দেওয়া হয়নি। এদিকে ২২ জানুয়ারি কাগজ কলের কর্মচারী সংগঠনের একটি মামলার শুনানির দরুন দিল্লি হাইকোর্টের তরফে এনসিএলটি-কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তারা যেন কাছাড় ও কাগজ কলের শুনানির ক্ষেত্রে আর দেরি না করেন, একটা সিদ্ধান্তে উপনীত হন। এই দিক থেকে মঙ্গলবার শুনানির তারিখ আবার পিছিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কম। যদি রাজ্য সরকার শুনানিতে অংশ না নেয় অথবা পর্যাপ্ত যুক্তি তুলে না ধরে, তাহলে দুই কাগজ কলকে দেউলিয়া ঘোষণা করে বিক্রির নির্দেশ দিতে পারে এনসিএলটি।
সোমবার শিলচরে কাছাড় এবং নগাঁও কাগজ কলের জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটি, এইচপিসি পেপারমিল রিভাইব্যাল অ্যাকশন কমিটি এবং কাগজ কল কর্মীদের পরিবারের তরফে এক সাংবাদিক সম্মেলন আয়োজন করা হয়। এতে অংশ নিতে গিয়ে মানবেন্দ্র চক্রবর্তী বলেন, ‘৮ বার এনসিএলটির শুনানির তারিখ পিছিয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী যদি সরকার শুনানির সময় কাগজ কল পুনরুদ্ধারের কোনও পরিকল্পনা তুলে ধরতে না পারে, তাহলে এগুলোকে দেউলিয়া ঘোষণা করে বিক্রির নির্দেশ দেবে এনসিএলটি। গতবছর আসাম সরকার নিজের তরফেই ট্রাইব্যুনালের কাছে সময় চেয়েছিল। সেই সময় পাওয়ার পর এব্যাপারে কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি, শেষমেষ আরেক শুনানির তারিখ চলে এসেছে। সম্প্রতি কাছাড় পেপার প্রজেক্ট ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন বনাম ইউনিয়ন অফ ইন্ডিয়ার একটি মামলার শুনানির প্রক্রিয়া চলছিল। সেখানে দিল্লি হাইকোর্ট এনসিএলটিকে স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন, তারা যেন আগামীর তারিখে একটা সিদ্ধান্তে উপনীত হন, আর যাতে দেরি না হয়। এনসিএলটি যদি হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে মঙ্গলবার একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হয়, সেক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া পুনরুদ্ধার পরিকল্পনা। সম্প্রতি একই ধরনের মামলায় কেরালা সরকার তাদের এলাকায় কাগজ কল পুনরুদ্ধারের দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিয়েছে। সরকারের প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছে এনসিএলটি। একইভাবে অসম সরকার যদি কোনও পরিকল্পনা তুলে ধরতে পারতো, তাহলে হয়তো এনসিএলটি এতে সম্মতি দিত। তবে আগামী কালকের শুনানির পর যদি তেমন কোনও সম্ভাবনা চোখে না পড়ে, তাহলে কাগজ কল দুটোকে দেউলিয়া ঘোষণা করতে সময় লাগবে না। এমনটা হলে পুরো সম্পত্তি বিক্রি করে দিতে পারে এনসিএলটি।”
পাশাপাশি তারা দুই কাগজ কলের ৮০ জন মারা যাওয়া কর্মচারীর বিদেহী আত্মার শান্তিতে ১১ ফেব্রুয়ারি ‘ধর্মীয় শোক মিছিল’ করবেন বলে আবার জানিয়ে দেন। তারা বলেন, “কলের ৮০ জন মৃত কর্মচারীর আত্মার শান্তির উদ্দেশ্যে ২৫ জানুয়ারি এক মোমবাতি মিছিল করা হয়েছিল। তবে গণতন্ত্র দিবস এবং করোনা পরিস্থিতির ইত্যাদি অজুহাত দেখিয়ে প্রশাসন অনুমতি দেওয়ার পরেও মিছিল আটকে দিয়েছিল প্রশাসন। এবার অসমাপ্ত মিছিল পূর্ণ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ১১ ফেব্রুয়ারি আবার পথে নামছি আমরা। তবে এবার নাম দেওয়া হয়েছে ‘ধর্মীয় শোক মিছিল’। দুই কাগজকল বন্ধ হওয়ার পর এখন পর্যন্ত ৬৮ জন হিন্দু এবং ১২ জন ইসলাম ধর্মাবলম্বি কর্মচারীর মৃত্যু হয়েছে। তাই এদিন শিলচর শ্মশান ঘাটে কালী মন্দিরে হিন্দুদের জন্য এবং কলেজ রোড সংলগ্ন ফজল শাহ মোকামে ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের আত্মার শান্তি কামনা করবেন কাগজ কল কর্মীরা। আমরা শিলচর শহরের রামকৃষ্ণ মিশন, অযাচক আশ্রম, সৎসঙ্গ আশ্রম, কাঠিয়া বাবার আশ্রম সহ প্রত্যেক ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান কাছে অনুরোধ জানিয়েছি তারা যেন ঐদিন আমাদের সহকর্মীদের বিদেহী আত্মার শান্তির উদ্দেশ্যে প্রার্থনা করেন। উপত্যাকার প্রত্যেক ব্যক্তির কাছে আমাদের অনুরোধ ঐদিন প্রত্যেকে অন্তত একটি প্রদীপ জ্বালিয়ে বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করবেন।”
পুরনো প্রসঙ্গ টেনে কাগজ কল কর্মীরা বলেন, “রাষ্ট্রপতির উপস্থিতিতে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী শিলচরে দাঁড়িয়ে কথা দিয়েছিলেন ছয় মাসের মধ্যে কাগজ কলের বকেয়া মিটিয়ে দেওয়া হবে, সেটা হয়নি। এবার যদি কাগজ কলকে দেউলিয়া ঘোষণা করা হয় এবং বিক্রি করে দেওয়া হয়, সেক্ষেত্রে আমাদের কিছুই করার থাকবেনা। তবে আমরা উপত্যকার প্রত্যেক ব্যক্তির দ্বারে দ্বারে ঘুরে নিজেদের বঞ্চনার কথা তুলে ধরব।”
সম্প্রতি বিধায়ক দিলীপ কুমার পালের বাড়ির সামনে উপস্থিত হয়ে প্রতিবাদী ধর্মঘট পালন করতে গিয়েছিলেন কাগজ কলের কর্মীরা। তবে সেখানে বিধায়ক নিজে বেরিয়ে আসায় তার সঙ্গে সরাসরি আলোচনা হয় এবং মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে তিনি আশ্বাস দেন বকেয়া মিটিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হবে। এবিষয়ে তারা বলেন, “যেহেতু আশ্বাস দেওয়া হয়েছে আমরা তার সম্মান রেখেছি তবে আগামীতে প্রতিবাদ জারি থাকবে।”
Comments are closed.