চাকরির কথা জানতে গিয়ে মেডিক্যালে রক্তাক্ত যুবক! "অভদ্রতা করছিল, কিন্তু কেউ হাত তোলেননি," বললেন অধ্যক্ষ
রাজ্যের মুখ্যসচিবের কার্যালয়ে আরটিআই করেছিলেন শিলচরের যুবক সৌরভ দেব এবং গৌতম মালাকার। বেকার সমস্যা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে তারা আন্দোলন করে আসছেন। তারা জানতে চেয়েছিলেন স্বাস্থ্য বিভাগে বরাক উপত্যকার স্থানীয় কতজন চাকরি করছেন। তাদের উত্তর সময়মতো না আসায় বৃহস্পতিবার সকালে শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষের দ্বারস্থ হন তারা। অধ্যক্ষ ডাঃ বাবুল বেজবরুয়া বলেন, যেহেতু আরটিআই তার উদ্দেশ্যে করা হয়নি, তিনি সরাসরি উত্তর দিতে পারবেন না। এতে পরিস্থিতি কথাকাটাকাটির পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছায় এবং যুবকদের অধ্যক্ষের কার্যালয় থেকে বের করে দেন সিকিউরিটি আধিকারিকরা।
কিছুক্ষণের মধ্যেই দেখা যায় সৌরভ দেব নামের যুবক একেবারে রক্তাক্ত, তার নাকে মুখে তাজা রক্ত। তার অভিযোগ, অধ্যক্ষের সামনেই হাসপাতালের অন্যান্য আধিকারিকরা তাদের মারধর করেছেন, এতে তিনি রক্তাক্ত হয়েছেন। তবে হাসপাতালের অধ্যক্ষ একথা অস্বীকার করেন, তিনি জানান যুবকদের তিনি সসম্মানে চেয়ারে বসিয়ে কথা বলছিলেন, কিন্তু তারা উচ্চবাচ্য করায় সিকিউরিটি ডেকে তাদের কার্যালয় থেকে বের করে দেন। এমনকি অধ্যক্ষের কার্যালয়ের সামনে দায়িত্বপ্রাপ্ত সুরক্ষা আধিকারিক বলেন, অধ্যক্ষের কার্যালয় থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় যুবকদের শরীরে কোনও ক্ষত ছিলনা। তারা প্রায় পনেরো-কুড়ি মিনিট পরে যখন ফিরে আসেন তখন রক্তাক্ত অবস্থায় ছিলেন।
সৌরভ দেব বলেন, “আমরা দীর্ঘদিন ধরে জানতে চাইছি বরাক উপত্যকার যুবকদের কেন সরকারি চাকরিতে বঞ্চিত করা হচ্ছে। বিভিন্ন বিভাগের মত স্বাস্থ্য বিভাগের একই অবস্থা। আমরা একটি আরটিআই করেছিলাম এবং তার জন্যই অধ্যক্ষের কাছে এসে জানতে চাইছিলাম শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কতজন স্থানীয় লোক চাকরি পেয়েছেন। তিনি আমাদের উত্তর তো দেননি উল্টো রেগে যান এবং তার লোকেরা হাসপাতাল চত্বরে আমাদের মারধর করে রক্তাক্ত করে দিয়েছে। এমনকি আমাদের এজাহার নিতে চাইছিলেন না স্থানীয় থানার আধিকারিকরা। নিজের জায়গায় দাঁড়িয়ে শুধুমাত্র চাকরির কথা বলায় আজ আমাদের সঙ্গে এই ব্যাবহারটা করা হয়েছে।”
হাসপাতালে অধ্যক্ষ ডাঃ বাবুল বেজবরুয়ার কাছে এবিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, “তারা যখন আমার কার্যালয়ে আসেন, আমি তাদেরকে যথেষ্ট সম্মানের সঙ্গে সামনের চেয়ারে বসিয়ে কথা বলি। তারা জানান সম্প্রতি মুখ্যসচিবের কার্যালয়ে একটি আরটিআই করেছিলেন এবং তার উত্তর পাচ্ছেন না। আমি তাদের বলি যদি সরাসরি আমার উদ্দেশ্যে আরটিআই করতেন আমি তাদের উত্তর দিয়ে দিতাম। তারা আরটিআই করেছেন আমার উর্দ্ধতন আধিকারিকদের উদ্দেশ্যে, সেখান থেকে নির্দেশ এলে আমি পর্যাপ্ত তথ্য পাঠিয়ে দেব এবং তারাই আরটিআইয়ের উত্তর দেবেন। এতে যুবকরা বলে আপনি কি আসাম সরকারের অধীনে কাজ করেন না? তাদের ভাষা এবং কথাবার্তা একেবারেই সম্মানজনক ছিলনা, এতে আমার রাগ হয় এবং সুরক্ষা কর্মীদের ডেকে কার্যালয় থেকে তাদের বের করে দিই। সাধারণত আমি এরকম ব্যবহার কারও সঙ্গে করিনা, কিন্তু এই যুবকরা যেভাবে অসম্মানজনক ব্যবহার করেছিল, আমি তাদের বের করে দিতে বাধ্য হই। শোনা গেছে তারা আহত হয়েছেন, কিন্তু আমার কার্যালয়ের কেউ তাদের গায়ে হাত তোলেন নি।”
অধ্যক্ষের কার্যালয়ের সামনে কর্মরত ছিলেন গিয়াস উদ্দিন লস্কর নামের এক সুরক্ষা কর্মী। তিনি বলেন, “যুবকরা অধ্যক্ষের কার্যালয়ে যাওয়ার জন্য অনুমতি নিয়েছিল তাই আমরা যেতে দিই। তবে হঠাৎ করেই আমরা দেখতে পাই অধ্যক্ষের কার্যালয়ের সামনে চিৎকার-চেচামেচি চলছে। দৌড়ে গিয়ে সেগুলো সামাল দিই এবং যুবকদের চলে যেতে বলি। অনেক কথা বলার পর তারা বেরিয়ে যায় কিন্তু প্রায় পনেরো কুড়ি মিনিট পরে রক্তাক্ত অবস্থায় আবার ফিরে আসে। আমরা তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দিতে চাইলে তারা মানা করে।”
ঘটনায় শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে থমথমে পরিবেশ সৃষ্টি হয়। অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ বিল্ডিংয়ের সামনে দরজা লাগিয়ে দেওয়া হয়, সিকিউরিটি আধিকারিকরা সেখানে ভিড় করেন। অধ্যক্ষের কার্যালয়ের ভিতর চলে উচ্চস্থরীয় বৈঠক। এদিকে সৌরভ দেব এবং গৌতম মালাকার ঘুংগুর থানায় এজাহার দায়ের করতে যান। সেখানে দীর্ঘক্ষণ বসে থেকেও তাদের রিপোর্ট লিখতে চাইনি পুলিশ, এমনটাই অভিযোগ করেছেন তারা। পুলিশের তরফে এব্যাপারে কোনও পরিষ্কার বয়ান আসেনি, তবে বলা হয়েছে পুরো ঘটনার তদন্ত হবে, হাসপাতালে যেসব সিসিটিভি ক্যামেরা রয়েছে সেগুলো খুঁজে দেখা হবে এবং যুবকরা আদৌ সত্যি কথা বলছি কিনা সেটা যাচাই করা হবে।
Comments are closed.