সংগীত জগতে নক্ষত্র পতন, চলে গেলেন আনন্দময়ী ভট্টাচার্য
তাকে বলা হতো বরাক উপত্যকা তথা শ্রীহট্টের মাটির গানের চলন্ত আর্কাইভ। ১৯শে মে একাদশ যুবক-যুবতী শহীদ হওয়ার পর শিলচরে যে গানের মাধ্যমে সবাই এক হয়েছিলেন, সেই গানটি প্রথমবার গেয়েছিলেন আনন্দময়ী ভট্টাচার্য। ৯১ বছর বয়সে সোমবার রাত নয়টা সাতান্ন মিনিটে সেন্ট্রাল রোডের নিজ বাসভবনে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন তিনি। সম্প্রতি ঘরেই একটি দুর্ঘটনায় তার কোমরে চোট পেয়েছিলেন, এরপর কিছুদিন চিকিৎসাধীন থেকে বাড়ি ফিরেছেন। সোমবার সন্ধ্যেবেলা হঠাৎ করেই শারীরিক অবস্থার অবনতি হয় তার, কিছুক্ষণ পরই শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। পরিবারের তরফে জানানো হয়েছে রাতেই শিলচর শ্মশানঘাটে তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে।
প্রয়াত কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্যের পিসি আজীবন সঙ্গীতচর্চা করে গেছেন। তার পরিবারের প্রত্যেকেই গানের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। একদিকে যেমন গীত, কীর্তন, হোলির গান ইত্যাদি মাটির গান অত্যন্ত সুন্দরভাবে করতেন, অন্যদিকে রবীন্দ্র সংগীত এবং শাস্ত্রীয় সংগীত করতেন একেবারে গানের নিজস্বতাও বজায় রেখে। শান্তিদেব ঘোষের মত সংগীতশিল্পীরা তার গানের প্রশংসা করেছেন। ২০০৩ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের লোকসংস্কৃতি বিভাগ তার একটি ক্যাসেট বের করেছিল যার নাম ছিল ‘ধামাইল গীত’। এছাড়া যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় সহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় শ্রীহট্টের মাটির গান পৌঁছে দিয়েছেন তিনি।
শিক্ষক তথা লেখক সমর বিজয় চক্রবর্তী তার জামাতা। তিনি বলেন, “আনন্দময়ী ভট্টাচার্য আমাদের কাছে ছিলেন শ্রীহট্টের মাটির গানের চলন্ত আর্কাইভ। কোনও গান লিখে রাখতে হতো না, প্রত্যেকটা তার মাথায় ছিল এবং কখনো ভুল সুরে গান করেননি। অনেকে তার কাছ থেকে গানগুলো শিখেছেন এবং তিনি অকাতরে প্রত্যেককে শিখিয়ে গেছেন। দেশের বিভিন্ন এলাকায় এই অঞ্চলের গানের মাধুর্য পৌঁছে দিয়েছেন। তার গান শোনার পর বড় বড় সঙ্গীত শিল্পীরা আশ্চর্য হয়েছেন যে আমাদের অঞ্চলে এত ভালো গান হয়। তার মৃত্যু অবশ্যই এক বিরাট বড় ক্ষতি এবং একটা গুরুত্বপূর্ণ চ্যাপ্টার বন্ধ হয়ে গেছে। তার মৃত্যুতে পরিবারের সদস্য সহ অসংখ্য গুণমুগ্ধরা শোকাহত। সোমবার রাতেই শিলচর শ্মশানঘাটে তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে।”
দোহার ব্যান্ডের অন্যতম সদস্য সুদীপ্ত চক্রবর্তী তার নাতি। তিনি জানিয়েছেন, ১৯শে মে-য়ের গান ‘ডাকে ওই একাদশ শহীদেরা ভাই’ লিখেছিলেন শ্যামাপদ ভট্টাচার্য, গানের সুরও তিনি করেছেন। শ্যামাপদ ভট্টাচার্যের ছোট বোন আনন্দময়ী ভট্টাচার্য প্রথমবার গানে কণ্ঠ দিয়েছিলেন। ২২ মে শিলচর শহরে যে সাংস্কৃতিক প্রতিবাদ হয়েছিল এতে মুখ্য ভূমিকা নিয়েছিল এই গানটি। এছাড়া শিলচর সংগীত বিদ্যালয়ের প্রথম ছাত্রী তিনি। আমৃত্যু সঙ্গীত বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করে গেছেন। দিননাথ নবকিশোর বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা হিসেবে তিনি ছাত্রীদের অত্যন্ত প্রিয় ছিলেন। তার কাছে অসংখ্য লোকেরা গান শিখেছেন। তার মৃত্যু সংগীতজগতে অবশ্যই নক্ষত্র পতন।
Comments are closed.