আজমল মহিলাদের বেশি সন্তান জন্ম দিতে বলেন, আমরা বলি পড়াশুনা করে ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হতে: হিমন্ত
স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা শনিবার সকাল থেকে কাছাড়, হাইলাকান্দি এবং করিমগঞ্জে নির্বাচনী রেলিতে অংশ নিয়েছেন। তিনি ভাষণে সরাসরি কংগ্রেস এবং এআইডিএফ দলকে টার্গেট করেন। এছাড়া স্পষ্ট বলেন, গত পাঁচ বছরে বিজেপির সরকার কি কি কাজ হয়েছে সেগুলো তিনি বলবেন না, বরং কোন কোন কাজ করা যায়নি এবং আগামীতে কি করা হবে সেটা নিয়ে কথা বলতে বেশি আগ্রহী। সুস্মিতা দেবকে লক্ষ্য করে তিনি বলেন, “৫-গ্যারেন্টি পরে বলবেন আগে নিজের ভবিষ্যতের গ্যারান্টি দিন।” বদরুদ্দিন আজমলের সঙ্গে বিজেপির চিন্তাধারার ফারাক নিয়ে তার বয়ান, “আজমল বলেছিলেন মহিলাদের যত বেশি সম্ভব সন্তান জন্ম দিতে, আমরা আমাদের মেয়েদের-বোনেদের বলছি আগে পড়াশোনা করুন, ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হোন, যখন নিজের ইচ্ছে হবে মা হবেন।”
উধারবন্দে মিহির কান্তি সোমের হয়ে প্রচারে এসেছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা। ভাষণের শুরুতেই তিনি বলেন, “আজ এখানে দাঁড়িয়ে বলবো না আমরা কি কি করেছি, এটা নিয়ে অনেক কথা হয়েছে এবং তার থেকেও বেশি সাধারণ মানুষ জানেন। আমি কথা বলব কি কি করা যায়নি এবং আগামীতে আরো কত কিছু করার সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা চাই মহিলারা উন্নতি করবেন, তাদের শিক্ষা স্বাস্থ্য এবং আর্থিক উন্নতি হবে। আমাদের সরকার এবার এলে মহিলাদের নেওয়া ঋণ মুকুব করে দেব। তবে ছেলেরা খুশি হয়ে লাভ নেই, তাদের এই সুবিধা দিচ্ছি না। চা বাগানের ছাত্রীদের মাধ্যমিকে সেকেন্ড ডিভিসনে পাস করলেও স্কুটি দেওয়া হবে। আমরা ভাবছি আগামীতে ফার্স্ট ডিভিসনে পাস করা ছেলেদের বাইক দেওয়া যায় কিনা।”
প্রসঙ্গক্রমে তিনি বদরুদ্দিন আজমলের একটি কথা টেনে বলেন, “আজমল একসময় তার ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর প্রত্যেক মহিলার উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, তারা যেন অনেক বেশি সন্তান জন্ম দেন। আজমল যদি একবার সন্তান জন্ম দিতেন, তাহলে জানতেন একজন মহিলার প্রসব বেদনা কি হয়। পুরুষ হিসেবে আমরা সেটা কখনোই বুঝতে পারব না, তবে অনুভূতি করা প্রয়োজন। কেননা এখনও অনেক মহিলা বেশি সন্তান জন্ম দেওয়ার প্রক্রিয়ায় প্রাণ হারান। আমরা মনে করি আমাদের মেয়েরা প্রথমে শিক্ষিত হবে, নিজেদের ইচ্ছেমতো পড়াশোনা করবে, তারপর যখন মা হওয়ার ইচ্ছে হবে তখন সন্তান জন্ম দেবে। কতটা সন্তান জন্ম সে দেবে সেটাও তার ঠিক করার অধিকার, অন্য কেউ বলে দেবে না। এখানেই আমাদের সঙ্গে বদরুদ্দিন আজমল এবং কংগ্রেসের তফাৎ।”
কংগ্রেসের ৫-গ্যারান্টি প্রতিশ্রুতি নিয়ে তিনি বলেন, “রাহুল গান্ধী থেকে শুরু করে সুস্মিতা দেব, প্রত্যেকেই চাকরি গ্যারান্টি সহ আরো কিছু প্রতিশ্রুতি নিয়ে গলা ফাটাচ্ছেন। আমি তাদের বলতে চাই এতটা চিৎকার করতে হয় না, ঠান্ডা মাথায় বলুন ভালো কথা বললে জনগণ শুনবেন। ছোটখাটো ধূর্ত কোম্পানিগুলো প্রায় সময় একটা প্রোডাক্ট কিনলে সঙ্গে আর একটা ফ্রি দেয়, তারা একে গ্যারান্টি বলে। বড় ব্র্যান্ডগুলো কখনোই এভাবে প্রচার করে না তারা তাদের প্রডাক্ট উন্নত করে এবং কাজের ফল হিসেবেই মানুষ আবার সেটা কেনেন। আমরা জনগণের কাছে প্রতিশ্রুতি দিই এবং তারা বিশ্বাস করেন, কেননা আমাদের কাজ ব্র্যান্ডেড, আমাদের গ্যারান্টি বলে চেঁচাতে হয়না। আর সুস্মিতা দেব কে বলতে চাই, আগে আপনি গ্যারান্টি দিন এই নির্বাচনের পরে আপনার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে। জনগণের চিন্তা করার জন্য নরেন্দ্র মোদী আছেন আপনাকে এত ভাবতে হবে না।”
তিনি আরো বলেন, “আমি বুঝতে পারি না তারা কিভাবে চাকরি গ্যারান্টি দিচ্ছেন, তাদের তো রাজ্য এবং কেন্দ্রে সরকার নেই। তবে কি বাংলাদেশে গিয়ে চাকরি দেবেন, আপনাদের তো আবার সেখানের অনেকের সঙ্গে বিশেষ বন্ধুত্ব থাকতে পারে, হয়তো বাংলাদেশে চাকরি জোগাড় করার কোন ব্যবস্থা আপনাদের আছে। আমরা কিন্তু ভারতে দাঁড়িয়েই প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, আগামী এক বছরের মধ্যে রাজ্যে এক লক্ষ চাকরি হবে। আর গত পাঁচ বছরে চাকরি হয়নি এমনটা নয়, টেট পরীক্ষা হয়েছে যুবক-যুবতীরা নিজের যোগ্যতা দেখিয়ে চাকরি পেয়েছে। এমন আরও অনেক উদাহরণ রয়েছে কিন্তু আমি প্রথমেই বলেছি আজ এগুলো নিয়ে আলোচনা করতে আসিনি।”
এদিন পুরো ভাষণ তিনি হিন্দিতে দেন, কেননা তাদের প্রধান ভোটাররা চা-বাগানের। কথায় কথায় চা-বাগানের মহিলাদের উন্নতির জন্য বিভিন্ন প্রকল্প ঘোষণা করেন হিমন্ত। মিহির কান্তি সোমের ব্যাপারে তিনি বলেন, “আপনারা যখন কোনও পোস্টারে তার ছবি দেখেন, পেছনে নরেন্দ্র মোদির ছবি লাগানো থাকে। অথচ কংগ্রেসের প্রার্থীর ছবির পিছনে বদরুদ্দিন আজমল এর বিরাট মুখ দেখা যায়। এবার আপনারাই ঠিক করুন, মোদির শাসন চাই, না বদরুদ্দিন আজমলের? উত্তরটা আমি জানি তাই আপনাদের ধন্যবাদ দিচ্ছি।
Comments are closed.