ইভিএম ভাঙ্গার প্রভাব ভোট-প্রক্রিয়ায় পড়েনি, জানালেন জেলাশাসক, কাছাড়ে ভোটদান ৭৮.৭২%
ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যেবেলা জেলায় দুটো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটায় পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়। একদিকে সোনাইয়ে গুলি চালনার ঘটনা, অন্যদিকে নেট্রিপের সামনে উত্তেজিত জনতার দ্বারা ইভিএম মেশিন এবং একটি গাড়ি ভেঙ্গে দেওয়া। দুই ঘটনায় ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়ার ওপর কতটা প্রভাব পড়েছে, এই প্রশ্নের উত্তরে শুক্রবার জেলাশাসক কীর্তি জাল্লি জানিয়েছেন, নেট্রিপ সংলগ্ন এলাকায় ভুল বুঝে কিছু মানুষ ইভিএম ভাঙচুর করেছেন, তবে ভালো খবর হচ্ছে সেগুলো ভোটপ্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত না হওয়া ইভিএম। এদিকে সোনাই অঞ্চলে যে ভোট কেন্দ্রের সামনে গুলি চালনার ঘটনা হয়, সেখানে প্রায় ৭০ শতাংশের বেশি ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়ে গেছিল, ফলে রি-পোল হবে কিনা সেটা পরিষ্কার নয়।
কাছাড় জেলায় ১৮৩৪টি কেন্দ্রে বৃহস্পতিবার ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। পুরো প্রক্রিয়ায় প্রায় ১৪ হাজার সরকারি কর্মচারী এক মাস ধরে পরিশ্রম করেছেন। নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী জেলায় মোট ভোট পড়েছে ৭৮.৭২ শতাংশ। এরমধ্যে সর্বোচ্চ হচ্ছে কাটিগড়া, সেখানে ভোট পড়েছে ৮৫.৭১ শতাংশ। সর্বনিম্ন হচ্ছে লক্ষ্মীপুর, সেখানে ভোট পড়েছে ৭৪.০৩ শতাংশ। বাকি কেন্দ্রের ভোট গ্রহণের পরিসংখ্যান হচ্ছে এমন, শিলচরে ৭৪.৫৫ শতাংশ, উধারবন্দে ৭৯.০২ শতাংশ, বড়খলায় ৮১.২১ শতাংশ, ধলাইয়ে ৭৪.১৩ শতাংশ এবং সোনাইয়ে ৭৯.৩৬ শতাংশ।
নেট্রিপের ঘটনা নিয়ে জেলাশাসক বলেন, “সারাদিন সুন্দরভাবে ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর হঠাৎ করেই সন্ধেবেলা এমন একটা ঘটনায় আমাদের মন ভেঙে যায়। তবে শেষমেশ আমরা জানতে পারি যেগুলো ইভিএম মেশিন নষ্ট হয়েছে, সেসব নির্বাচন প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত হয়নি, রিজার্ভ ইভিএম ভাঙচুর করা হয়েছে। অর্থাৎ মূল ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়ায় এর প্রভাব পড়ছে না। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত ইভিএম দেওয়া হয়, কারণ যদি ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত ইভিএম কাজ না করে, তখন সেটা রিপ্লেস করতে হয়। যখন ইভিএম রিপ্লেস করা হয় সেটা প্রত্যেক দলের সদস্যদের সামনে হয় এবং পুরোটা ভিডিওগ্রাফি করা হয়। ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর ব্যবহৃত না হওয়ায় ইভিএমগুলো স্ট্রং রুমে রাখার জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। কিছু মানুষ সেটা বুঝতে পারেননি এবং অযথা ঝামেলা করেছেন। তবে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া গেছে এবং ভোটকর্মীরা অত্যন্ত পরিপক্বতার পরিচয় দিয়েছেন। নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে প্রত্যেক ভোটবাক্স সিল করা হয়েছে এবং তার ভিডিওগ্রাফিও করে রাখা হয়েছে।”
সোনাইয়ে ধনেহরি এলাকায় দুই দলের মধ্যে বচসা এবং শেষমেষ গুলি চালনা প্রসঙ্গে পুলিশসুপার বিএল মিনা বলেন, “সারা জেলায় নির্বাচন প্রক্রিয়ায় এধরনের ঘটনা চোখে পড়েনি, সোনাইয়ে যেটা হয়েছে সেটা দুঃখ জনক। তবে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া গেছে এবং উপাধ্যক্ষকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। যারা আহত হয়েছিলেন তাদের অবস্থাও উন্নত হচ্ছে। বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে এবং এখন পর্যন্ত চার ব্যক্তি এজাহার দায়ের করেছেন। উপাধ্যক্ষ এখনও লিখিত অভিযোগ জানাননি, তবে পুলিশ তাদের কাজ করছে। যে বন্দুক পাওয়া গেছিল সেটা আদতে কার এবং এর পেছনে অন্য কোনও চক্রান্ত রয়েছে কিনা সেটা দেখা হচ্ছে। আরও অনেক তথ্য রয়েছে যেটা এখনই জনসমক্ষে তুলে ধরা যাবেনা। তবে প্রত্যেকের প্রতি আবেদন আপনারা গুজবে কান দেবেন না।
কাছাড় জেলায় এবার সবথেকে বেশি মহিলা ভোট কেন্দ্র ছিল, ফলে মহিলা আধিকারিক অনেক বেশি ছিলেন। বৃহস্পতিবার রাত্রে নেট্রিপের সামনে ঝামেলার ফলে কয়েক কিলোমিটার লম্বা ট্রাফিক জাম দেখা দেয় এবং মহিলা ভোট কর্মীদের অনেকটা হেটে ভোটের বাক্স নিয়ে স্ট্রংরুমে দিতে হয়। পুলিস আধিকারিকের অভাব থাকায় পরিস্থিতি সামাল দিতে দেরি হয়েছে, এটা প্রশাসন স্বীকার করেছেন।
তবে মহিলাদের এই কাজে লাগিয়ে ভুল হয়েছে কিনা এই প্রশ্ন করলে জেলাশাসক বলেন, “যেসব মহিলারা ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়েছেন, তারা কোনও অংশে কোনও পুরুষ আধিকারিকের থেকে কম যোগ্য নন। মহিলাদের করুনার চোখে না দেখে সামানতার চোখে দেখতে হবে। নেট্রিপের সামনে যেসব প্রতিবাদকারী ভাঙচুর করছিল, তারা একবারও আটকে পরা মহিলাদের সুরক্ষা কথা ভাবেনি। তবে আমাদের মহিলা আধিকারিকরা অনেক ধৈর্য সহকারে কাজ সম্পন্ন করেছেন এবং প্রত্যেকে সুরক্ষিত অবস্থায় বাড়ি ফিরে গেছেন। তারা প্রমাণ দিয়েছেন মহিলারা কোনভাবেই পিছিয়ে নেই এবং তাদের কাজ অত্যন্ত উৎকৃষ্ট মানের হয়েছে।
জেলায় রি-পোলের সম্ভাবনা কতটুকু রয়েছে সেটা নির্বাচন কমিশন ঠিক করবে তবে আপাতত একমাস ভোট বাক্সে বন্দী থাকছে ৭ আসনে ৬১ প্রার্থীর ভাগ্য।
Comments are closed.