মৌসুমী এখন সুখী বিবাহিত জীবন যাপন করছে এবং বছরে দুইবার করিমগঞ্জ আসবে বললেন সুমন খান, নুমনের জামাইবাবু
রোমিও-জুলিয়েট, হিরে-রাঞ্জা, লায়লা-মজনু এই সর্বকালের সেরা প্রেম কাহিনী গুলো আমরা সবাই জানি। কিন্তু এই কাহিনীগুলোকেও হার মানিয়ে দিতে পারে মৌসুমী নুমনের প্রেম কাহিনী। সম্প্রতি নুমনের হাত ধরে মৌসুমী দাস করিমগঞ্জ থেকে বাংলাদেশে চলে যায় এবং সেখানে নুমনকে বিয়ে করে । কিন্তু বরাকবাসী এই ঘটনাকে দুইয়ে দুইয়ে চার হিসেবে মেনে নিতে পারছেন না। এটাকে ‘লাভ জিহাদ’ হিসেবেও অনেকে প্রচার করছেন, রাজনীতিবিদরা নিজের নিজের মতামত অনুযায়ী ব্যাখ্যা করছেন, খবরের কাগজগুলো এমনকি জাতীয় খবরের কাগজেও এটি একটা আলোচ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
২১ বর্ষীয়া মৌসুমী দাস রবীন্দ্র সদন গার্লস কলেজে পড়ত , বাণিজ্য মেলায় এই বাংলাদেশী ব্যবসায়ী বাদশার সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হয়। ঢাকা পুলিশের বক্তব্য অনুযায়ী বাংলাদেশে পালিয়ে যাওয়ার পর মৌসুমী দাস ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে এবং নুমন বাদশাকে বিয়ে করে। ইতিমধ্যে মৌসুমীর বাবা করিমগঞ্জ পুলিশ স্টেশনে এ নিয়ে নিখোঁজ সংক্রান্ত একটা মামলা দায়ের করেন। এর প্রায় ১২ দিন পরে এক ভাইরাল ভিডিও থেকে সবকিছু স্পষ্ট হয়।
ঘটনার এতটুকু সকলেরই জানা। কিন্তু তার পরের চিত্রটা কি সেটা জানতে এবং পাঠকদেরকে জানাতে বরাক বুলেটিন ডট কম তৎপর হয়ে উঠে। তাই বাংলাদেশ কি ঘটছে সেটা জানতে আজ ঢাকাতে ডেমরা পুলিশ স্টেশনে আমরা যোগাযোগ করি। ওরা যথারীতি জানায় যে মৌসুমী জামিনে মুক্ত আছে এবং তদন্ত চলছে। তবে ওরা নুমনের জামাইবাবু সুমন খানের যোগাযোগ নাম্বারটা আমাদের দেয়। সুমন খানের সঙ্গে কথোপকথনের কিছু সম্পাদিত অংশ আপনাদের তুলে ধরলাম
আপনি কি বলতে পারবেন বর্তমানে এই ঘটনাটি বিচারব্যবস্থার কোন পর্যায়ে আছে ?
মহামান্য আদালত গত সোমবার জামিন দিয়েছে এবং আগামী সোমবার পরবর্তী শুনানির তারিখ ঠিক হবে
মৌসুমী দাস ওরফে ফাতিমা জান্নাত এখন কোথায় আছে ?
ও এখন ওর স্বামী এবং পরিবারের সবার সাথে আছে। কিন্তু ঠিকানাটা আমি আপনাদেরকে বলতে পারব না তবে, এতটুকু বলতে পারি ওরা বেশ খোশমেজাজেই আছে।
ভারত থেকে কেউ এসে ওর সাথে দেখা করে ছিল? ইকবাল হোসেন নামের কেউ কি এসেছিল?
হ্যাঁ, ফাতিমা যখন পুলিশ ষ্টেশনে ছিল তখন ভারতীয় হাইকমিশনের অফিসাররা এবং অনেক ভারতীয়রা এসেও বয়ান নিয়েছিল। ওই খানে সাংবাদিকরা সহ অন্যান্য ভারতীয়রাও ছিল, তাদের নাম জানা নেই।
এখন এই ঘটনার পর বাড়িতে পরিস্থিতি কি রকম? বিয়ের পর সবকিছু ঠিকঠাক চলছে?
হ্যাঁ, আমরা এই বিয়েকে স্বীকার করে নিয়েছি সম্পূর্ণভাবে এবং সে বেশ সুখে রয়েছে। ওকে যেদিন আদালতে তোলা হয় জামিনের জন্য, সেদিন আমরা সবাই কিছু না খেয়ে খালি পেটে অপেক্ষা করছিলাম এবং খুব চিন্তিত ছিলাম। ও আমাদের পরিবারের এক গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হয়ে উঠেছে।
আচ্ছা কি করে সবাই এত তাড়াতাড়ি এই ভিন্নধর্মী বিবাহকে গ্রহণ করে নিলেন?
দেখুন প্রেম কোন ধর্ম মানে না। নুমনের সাথে ওর গভীর প্রেম হয়েছিল এবং এজন্যই সব বাধা বিঘ্ন উপেক্ষা করে ভারত থেকে বাংলাদেশে চলে আসতে সক্ষম হয়। আমি ওর সাথে কথা বলেছি। আমি ওর চোখে নুমনের জন্য ভালোবাসা দেখতে পেয়েছি। ওদের এই ভালোবাসাকে উপেক্ষা করার কোনো কারণ নেই।
ভারতবর্ষের পরিস্থিতি কিন্তু সেরকম নয়। এখানে লোক অনেক উত্তেজিত হয়ে আছে এবং ওরা ভাবছে যে এতে শুধু ভালোবাসাই নয়, অন্য কিছু ও রয়েছে।
শুনুন, ধর্মকে এক্ষেত্রে একটু দূরে সরিয়ে দুজনের প্রেমকে একটু প্রাধান্য দিন। মৌসুমী সাবালিকা এবং সে যা করছে নিজে জেনে-বুঝে সবকিছু করছে। সে ঐ ভিডিওতে স্পষ্ট করে বলে দিয়েছে পরিস্থিতি এবং আমি এটাও বলতে চাই যে বাংলাদেশ সরকার আমাদের সাথে আছে এবং ওরা আমাদেরকে যতদূর সম্ভব সাহায্য করবে এবং আমি অনুরোধ রাখছি ভারত সরকারের কাছে এই ক্ষেত্রে এই দম্পতিকে সাহায্য করার জন্য।
আচ্ছা, আপনি বলছেন এক্ষেত্রে ধর্মকে একটু দূরে সরিয়ে রাখতে আমি স্বীকার করছি। কিন্তু যদি মেনে নেওয়া হয় তাহলে ওকে ধর্ম ত্যাগ করতে হলো? কেন ইসলাম ধর্ম নিতে হলো?
দেখুন, ও ওর ইচ্ছে অনুযায়ী এই ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে। এই ব্যাপারে একটা এফিডেভিটও আছে।
এই আইনটা তো আমি জানি, তবে আমি বলছি এর ধর্মান্তকরণ না করে কি ভালোবাসার সফল রূপায়ন সম্ভব ছিল না?
ইসলামের মৌলিক মতবাদ অনুযায়ী একজন মুসলিম শুধু আর একজন মুসলিমকে বিয়ে করতে পারে। তাই মৌসুমী বাংলাদেশে এসে ওর ইচ্ছা অনুযায়ী নিজেকে ইসলাম ধর্মে রূপান্তরিত করে এবং নুমনকে বিয়ে করে, সবকিছু ওর ইচ্ছা অনুযায়ী হয়েছে।
এই যে বিনা পাসপোর্টে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করল এটা তো একটা ক্রিমিনাল অফেন্স, আপনি এ ব্যাপারে কি বলেন?
হ্যা, এটা সত্যি যে ও পাসপোর্ট ছাড়া এসেছে কিন্তু এটাও তো সত্যিই গভীর ভালবাসার শক্তি এক্ষেত্রে ওকে শক্তি যুগিয়েছে। এখন আইনি প্রক্রিয়াকে অল্প সরল করে ওকে এখানে থাকতে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হোক। অনেক বড় বড় সমস্যারও সমাধান বের করা সম্ভব।
আচ্ছা মৌসুমী দাসের পিতা-মাতা বা পরিবারকে আপনি কি বার্তা দিতে চান?
হ্যাঁ, আমি ওদের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিলাম গত সপ্তাহে। আমি বুঝি ওরা খুবই রাগান্বিত অবস্থায় আছেন। প্রতিবেশীদের অনুরোধ করবো ওরা যাতে সান্ত্বনা দেন। ওদের কাছে আমার আরও অনুরোধ, তারা যেন এই বিয়েটাকে মেনে নেন। পরিস্থিতির উন্নতি হলে ও বছরে দুবার করিমগঞ্জে যাবে এবং ওর বাবা-মার সাথে থেকে আসবে, আমাদের এতে কোনও সমস্যা নেই।
Comments are closed.