গোটা দেশে এই মুহূর্তে করোনা ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে। অধিকাংশ শহরেই মৃত্যুর মিছিল যেন থামার নামই নিচ্ছে না। অক্সিজেনের সংকট রয়েছে। শেষকৃত্য সম্পন্ন করার জন্য শ্মশানে জায়গা মিলছে না। নিজের প্রিয়জনদের শেষকৃত্য করার জন্য শ্মশানের বাইরে রাস্তায় দাঁড়িয়ে লাইন ধরে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। গোটা দেশে যখন এই করুণ চিত্র, তখন এন্টারটেইনমেন্টের দোহাই দিয়ে রমরমিয়ে চলছিল ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ। তবে করোনার গ্রাস থেকে এবার রেহাই পেল না বিশ্বের সবচেয়ে ধনী বোর্ডের টি-টোয়েন্টি লিগ।
গতকাল কলকাতা নাইট রাইডার্স ও চেন্নাই সুপার কিংস দলে হানা দেবার পর মঙ্গলবার করোনা থাবা বসিয়েছে সানরাইজার্স হায়দরাবাদ ও দিল্লি ক্যাপিটালস দলেও। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে বায়ো বাবলে থেকেই একের পর এক ক্রিকেটার, সাপোর্ট স্টাফ এবং গ্রাউন্ডসম্যানরা করোনা আক্রান্ত হচ্ছেন। কলকাতার বরুণ চক্রবর্তী-সন্দীপ ওয়ারিয়র, চেন্নাই দলের সাপোর্ট স্টাফ লক্ষ্মীপতি বালাজি সহ কাশী বিশ্বনাথন ও টিম বাস ক্লিনার কোভিড পজিটিভ হয়েছেন। মঙ্গলবার দিল্লির অমিত মিশ্র এবং হায়দরাবাদের ঋদ্ধিমান সাহা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। ফলে অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও রীতিমতো চাপে পড়ে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড আইপিএল বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একের পর এক ক্রিকেটার আক্রান্ত হওয়ায় আইপিএল বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া বোর্ডের কাছে কোনো বিকল্প ছিল না।
বিসিসিআইয়ের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে দেশের ক্রিকেটমহল। শিলচরের তারকা ক্রিকেটাররাও বোর্ডের এই সিদ্ধান্ত কে সঠিক বলছেন। একবার দেখে নেওয়া যাক স্থানীয় তারকারা বোর্ডের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে কি বললেন,
প্রীতম দাস, রনজি ক্রিকেটার- সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে বোর্ড। একদিকে করোনায় এত লোক মরছে, অন্যদিকে আইপিএল চলছে। এটা ঠিক নয়। মুম্বাই ও দিল্লির মত শহরে মৃত্যুর মিছিল চলছে। গোটা দেশের মধ্যে এই দুই শহরেই মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি। মানুষ অক্সিজেন পাচ্ছে না। অথচ এন্টারটেইনমেন্ট এর জন্য আইপিএল চলছে। একজন ক্রিকেটার হিসেবে আমি এটা মেনে নিতে পারিনা। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, বোর্ডের বায়ো বাবল ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেছে। পরিস্থিতি ক্রিকেটারদের জন্য মোটেও নিরাপদ নয়। একের পর এক খেলোয়াড় আক্রান্ত হচ্ছে। তাই এমন ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিতে আইপিএল চলতে পারে না। মানুষের জীবন থেকে আইপিএল বড় নয়।
রাহুল সিং, রাজ্য দলের ক্রিকেটার ও রাজস্থান রয়ালসের নেট বোলার- পরিস্থিতি বিচার করে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে বোর্ড। এই মুহূর্তে আমি রাজস্থান দলের সঙ্গে দিল্লিতে রয়েছি। করোনা আতঙ্কে এখন রোজই আমাদের কোভিড টেস্ট হচ্ছে। আজও হয়েছে। ভাগ্যবশত দলের প্রত্যেকের রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে। গতকাল আমাদের নেট সেশন হয়েছিল। তবে আজ সকালে আর হয়নি। আমরা এখন প্রত্যেকেই নিজ নিজ রুমে রয়েছি। এবং পরবর্তী নির্দেশের জন্য অপেক্ষা করছি।
সমিক দাস, জেলা দলের তারকা– ঠিকই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বোর্ড। তবে আমি তো মনে করি এটা আরও আগে করা উচিত ছিল। আরো এক সপ্তাহ আগেই এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারত বোর্ড। প্রতিদিন আমাদের দেশে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে। সেইসঙ্গে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা। এরপরও শুধু অর্থের কথা চিন্তা করছিল বিসিসিআই। তিন ঘন্টার এন্টারটেইনমেন্ট এর জন্য এতগুলো খেলোয়াড়ের জীবন নিয়ে খেলছিল বিসিসিআই। রাজধানী দিল্লিতে এত এত লোক মরছে। শ্মশানের শেষকৃত্যের জন্য জায়গা মিলছে না। অথচ সেখানে আইপিএল চলছে। এটা মেনে নেওয়া যায় না। দেশের এই দুঃসময়ে অর্থ উপার্জনের চিন্তাধারা বাদ দেওয়া উচিত বোর্ডের। বরং অর্থ দিয়ে সাহায্য করা উচিত।
রেহান জমিল মজুমদার, জেলা দলের তারকা- সঠিক সিদ্ধান্ত। বোর্ডের বায়ো বাবল ভেঙ্গে গেছে। তাই খেলোয়াড়রা এখন আর নিরাপদ নয়।
মোশারব হোসেন লস্কর, জেলা দলের তারকা- আমি তো মনে করি ভাল সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিসিসিআই। করোনা সংক্রমণ ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে। তাই এমন একটা পরিস্থিতিতে আইপিএল বন্ধ করে দেওয়াই সবচেয়ে ভালো বিকল্প ছিল।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে দুদিন আগেও আইপিএলের বায়ো বাবল নিয়ে বোর্ডের পক্ষ থেকে বড় বড় কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু একের পর এক ক্রিকেটার আক্রান্ত হওয়ায় সেই বায়ো বাবল নিয়ে এখন সমালোচনা হচ্ছে। আরও একটি বিষয় হচ্ছে, দেশের অধিকাংশ শহরেই করোনা টেস্ট কিট এর অভাব দেখা দিয়েছে। অথচ আইপিএল নামের এন্টারটেইনমেন্ট টা চালিয়ে নেওয়ার জন্য রোজ রোজ এতগুলি খেলোয়াড়দের কোভিড টেস্ট হচ্ছে।একদিকে যখন দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণে টেস্টিং কিট মিলছে না সেখানে শুধু আইপিএলে রোজ রোজ এতগুলি টেস্টিং কিট ব্যবহার করা হচ্ছে। এটা কতটুকু যুক্তিগত? প্রশ্ন কিন্তু আরও রয়েছে, যার জবাব দিতে হবে ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড কে।
Comments are closed.