বুধবারও অব্যাহত থাকলো গোপন কক্ষে ভ্যাকসিন প্রদান, প্রশাসন বলছে "আমাদের কিছু করার নেই"
সাধারণ মানুষ ভ্যাকসিন পাওয়ার জন্য অনলাইনে এবং অফলাইনে নাম লিখানোর চেষ্টা করেও নাজেহাল। অথচ মঙ্গলবার দেখা গেছিল সিভিল হাসপাতাল চত্বরে অতিরিক্ত মুখ্য চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য আধিকারিকের কার্যালয়ে এক বিশেষ কক্ষে কিছু ব্যক্তিদের গোপনে ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে। কেউ কেউ অভিযোগ করেছিলেন অনেক টাকার বিনিময়ে ভ্যাকসিন প্রদান প্রক্রিয়া চালানো হচ্ছে। ঘটনাটি জনসমক্ষে চলে আসায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, পর্যাপ্ত তদন্ত হবে এবং ২৪ ঘন্টার ভেতর দোষীদের শাস্তি দেওয়া হবে। সেটা হয়নি, বরং বুধবার একইভাবে গোপন কক্ষে ভ্যাকসিন প্রদান প্রক্রিয়া চালানো হয়েছে। এদিন সন্ধেবেলা অতিরিক্ত জেলাশাসক সুমিত সত্যওয়ান জানিয়েছেন, তারা এব্যাপারে তদন্ত চালু করেছেন এবং শোকজ নোটিশ পাঠানো হয়েছে। তবে এর বেশি প্রশাসনের কিছু করার নেই।
ভ্যাকসিনের অভাব রয়েছে বলে প্রতিদিন শতাধিক লোককে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অথচ সিভিল হাসপাতাল চত্বরে গোপনে একটা সেন্টার চলছে যেখানে কোনও ধরনের রেজিস্ট্রেশন ছাড়াই দেওয়া হচ্ছে ভ্যাকসিন। যেসব লোকেরা ভ্যাকসিন পেয়েছেন, তাদের কোনও তালিকা লিখে রাখা হয়নি। ভ্যাকসিন নেওয়ার পর কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন তাদের কাছ থেকে দুই হাজার টাকা করে নেওয়া হয়েছে। উপস্থিত আধিকারিকরা শাক দিয়ে মাছ ঢাকতে নানান যুক্তি দিচ্ছেন। তারা বলছেন সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী ১০ শতাংশ ভ্যাকসিন নষ্ট হতেই হবে। তাই একটা ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট পদ্ধতি চালু করা হয়েছে এবং কিছু কিছু লোককে ডেকে ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে।
বুধবার একটি তালিকা চোখে পড়ে যেখানে প্রায় ১৫ জন লোকের নাম লেখা রয়েছে। তবে আশ্চর্যজনক বিষয় হচ্ছে, তালিকায় প্রভাত নামের লোকের জন্য ৮ জনের নাম লেখা রয়েছে। একইভাবে দীপক নামের ব্যক্তির জন্য ৩ জন এবং রত্নদ্বীপ দাস নামের ব্যক্তির জন্য ৬ জনের স্লট দেওয়া হয়েছে। সিভিল হাসপাতালের গেটে ঢুকে অনেকেই জিজ্ঞেস করছেন “এডিশনাল কার্যালয়টা কোন দিকে?” উপস্থিত স্বাস্থ্যকর্মীদের বয়ান অনুযায়ী, এধরনের লোকের সংখ্যা একেবারেই নগণ্য নয়, প্রায় পঞ্চাশের কাছাকাছি।
তাদের মধ্যে অনেকেই বিভিন্ন সরকারি স্বাস্থ্য কর্মীর পরিবারের লোক, আবার কেউ কেউ শুধুমাত্র সেন্টার থেকে ফোন পেয়েছেন বলে এসেছেন। নাম প্রকাশ না করলেও কেউ কেউ জানিয়েছেন, তারা গোপনসূত্রে যোগাযোগ করেছিলেন এবং ভ্যাকসিন পাওয়ার জন্য একটা টাকা দিয়েছেন। অনেক বেশি টাকা চাওয়া হয়েছিল কিন্তু দাম-দর করে তারা সেটা কমিয়েছেন। তবে ভ্যাকসিন দিতে গিয়ে কোনও সরকারি আধিকারিক টাকা নিচ্ছেন, এমন কোন তথ্য প্রকাশ্যে আসেনি। অভিযোগকারীরা এমন কোনও প্রমাণ দিতে পারেননি।
তবে যে সময়ে মানুষ ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য এতটা কষ্ট করছেন, সেখানে কিছু লোককে গোপনে সুবিধা পাইয়ে দেওয়া অবশ্যই অপরাধমূলক কাজ। অন্তত দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি আধিকারিকরা এমনটা করতে পারেন না।
রাজ্যের স্বাস্থ্য বিভাগের পরিবার ও জনকল্যাণ বিভাগের ডিরেক্টর মুনিন্দ্রনাথ গাঁতে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এদিন শিলচরের স্বাস্থ্যকর্মী এবং সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “এভাবে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে বলে আমরা জানতাম না। তবে ভ্যাকসিন যাতে একেবারে নষ্ট না হয় তার জন্য আমাদের একটা পরিকল্পনা ছিল। যেগুলো ভাইল খোলা হবে সেটা যদি পুরোপুরিভাবে ব্যবহৃত না হয়, তাহলে আশেপাশের লোকেদের ডেকে ভ্যাকসিন প্রদান করা হবে। একবার ভাইল খোলা হয়ে গেলে সেটা চার ঘণ্টার মধ্যে নষ্ট হয়ে যায়, ভ্যাকসিন নষ্ট হওয়া আটকানোর জন্যই আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। আমরা শুনেছি, অভিযোগ রয়েছে টাকা-পয়সা লেনদেনের, তবে এর কোনও প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি। যে প্রক্রিয়ায় ভ্যাকসিন দেওয়া চলছে সেটা ঠিক হয়নি এবং আমরা আগামীতে এটা শুধরে নেব।”
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্য আধিকারিক পিকে রায়ের বিরুদ্ধে শোকজ নোটিশ জারি করা হয়েছে। অতিরিক্ত জেলাশাসক সুমিত সত্যওয়ানকে এই বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, “জেলাশাসক কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং শুনেছি শোকজ নোটিশ জারি করা হয়েছে। আমরা ম্যাজিস্ট্রেট স্তরের তদন্ত করছি তবে এর বেশি আমাদের কিছু করার নেই। ভ্যাকসিন প্রদান প্রক্রিয়া পুরোপুরি স্বাস্থ্য ও জনকল্যাণ বিভাগের অধীনে হচ্ছে, শেষ সিদ্ধান্ত তারাই নিতে পারেন।”
Comments are closed.