Also read in

বীরেন্দ্র সূত্রধরের পরিবারকে জমির পাট্টা সহ শহীদের নামে রাস্তার নামকরণের দাবি শহরবাসীর

শহিদ বীরেন্দ্র সূত্রধর পরিবারকে ২০০১ সালে শিলচর পুরসভার তরফ যে জমি দান করা হয়েছিল, তার কোনও কাগজ দেওয়া হয়নি। শহীদ পত্নীর মৃত্যুর পর পরিবারের সদস্যরা ঘরছাড়া হওয়ার আতঙ্কে ভুগছেন। তাদের হয়ে সোমবার জেলা শাসকের কাছে আবেদন জানিয়েছেন শহরের বিভিন্ন স্তরের মানুষ। তাদের দাবি, শহীদের পরিবারকে জমির পাট্টা এবং আর্থিক সংস্থান করে দেওয়ার পাশাপাশি যে এলাকায় তাদের বাড়িটি রয়েছে, সেই সড়ক শহীদ বিরেন্দ্র সূত্রধরের নামে নামকরণ করা। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক, সামাজিক, ক্রীড়া ইত্যাদির সংগঠন সহ সমাজ সচেতন ব্যক্তিরা এই দাবীতে সম্মতি জানিয়ে হস্তাক্ষর করেছেন।

শহীদ বিরেন্দ্র সূত্রধরের পরিবারের আর্থিক এবং মানসিক অবস্থার কথা নিয়ে সম্প্রতি বরাক বুলেটিনে একটি প্রতিবেদন বেরিয়েছিল। এতে তৎপর হয়েছেন শিলচরের সাংস্কৃতিক এবং সুশীল সমাজ। রবিবার একটি প্রতিনিধি দল তাদের বাড়ি পরিদর্শন করেন এবং পরিবারের খোঁজ খবর নেন। তারা সোমবার জেলাশাসকের সঙ্গে দেখা করেন র দাবি জানান।

সোমবার দুপুরে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধি হিসেবে একটি দল জেলাশাসক কীর্তি জাল্লির সঙ্গে দেখা করে নিজেদের দাবি তুলে ধরেন। এই বিষয়ে সাংস্কৃতিককর্মী নিখিল পাল বলেন, “শহীদ বিরেন্দ্র সূত্রধরের পরিবারের সদস্যরা সেখানে রয়েছেন আমরা জানতাম, কিন্তু তাদের বর্তমান অবস্থা জানা ছিল না। এছাড়া সংবাদ প্রতিবেদনে অনেক তথ্য উঠে এসেছে যেগুলো জানার পর আমাদের মনে কিছুটা অপরাধবোধ জেগেছে। ভাষা আন্দোলনের শহীদদের পরিবাররা আমাদের চোখের সামনে এতটা কষ্টে এবং আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। জেলা শাসকের কাছে যাওয়ার আগে আমাদের প্রতিনিধি দল তাদের বাড়িতে গেছিলেন এবং বিভিন্ন বিষয়ে কথা হয়েছে। শিলচর পুরসভার তরফে যে জমি দেওয়া হয়েছিল তার কোনও কাগজ পরিবারকে দেওয়া হয়নি। এছাড়া তারা আর্থিকভাবে অনেকটা পিছিয়ে রয়েছেন। আমরা জেলাশাসকের কাছে দাবি জানিয়েছি, তাদের জমির কাগজ ঠিক করে দেওয়ার পাশাপাশি একটা আর্থিক সংস্থান এর ব্যবস্থা করতে। এছাড়া শহরবাসীর তরফে আমাদের দাবি, শহীদের নামে রাস্তার নামকরণ হোক। জেলাশাসক আমাদের জানিয়েছেন তিনি আগে থেকেই এই বিষয়ে অবগত এবং তিনিও চান এই সমস্যাগুলো সমাধান হোক। পরে বিরেন্দ্র সূত্রধরের নাতনি মৌসুমী সূত্রধর আমাদের ফোন করে জানিয়েছেন, জেলাশাসকের একটি প্রতিনিধি দল তাদের বাড়িতে গিয়ে খোঁজখবর নিয়েছেন। আমরা আশা করছি আমাদের দাবি পূরণ হবে এবং শহীদের পরিবারকে প্রশাসন সুরক্ষা দেবে।”

রবিবার দুপুরে সমাজসেবী কমল চক্রবর্তী, নিখিল পাল, জয়দীপ ভট্টাচার্য, রাজকুমার রায়, দেবাশীষ সূত্রধর সহ মিলে কোভিড প্রটোকল মেনে শহীদ পত্নী প্রয়াত ধনকুমারী সূত্রধরের বাড়িতে যান। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করেন এবং তাদের সমস্যাগুলো জানার চেষ্টা করেন। অনেকেই এদিন নিজে না গেলেও এই উদ্যোগে সহযোগিতা থাকবে বলে জানিয়েছেন।

কমল চক্রবর্তী বলেন, ‘শহীদের পরিবারের দুর্বিষহ অবস্থা দেখে সত্যিই আমরা বাকরুদ্ধ। এই রকম অবস্থায় আছে আমাদের ভাষা শহিদদের পরিবার!এত বছর ধরে তাহলে কী করলাম আমরা! সারা বছরের মধ্যে একবারও কেউ খবর রাখি না ওদের! বীরেন্দ্র শুত্রধরের মেয়ে শ্রদ্ধেয়া মধুমিতা সূত্রধর আক্ষেপ করে বললেন, উনিশ আসলেই অনেকে আমাদের ঘরে আসে। সারা বছর আর কেউ আমাদের খবর রাখে না। আগে তো আমাদের ঘরে ঢিল‌ও ছুঁড়তো। ওদের ঘর, আর আশপাশের দালান দেখে নিজের‌ প্রতিই ঘেন্না হয়। এতটা নির্লিপ্ত, স্বার্থপর আমরা? নিজেও জানি না, শহিদ বীরেন্দ্র শুত্রধরের নামে কোনো রাস্তা নেই। নাতনি মৌসুমী সূত্রধর অনুরোধ করে বললো, দাদুর নামে আমাদের বাসস্থানের গলিতে রাস্তার নাম করণ হোক। একটা ফলক লাগানো হোক। বাকি শহিদদের নামে তো আছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘হৃদয়ে রবীন্দ্রনাথ চেতনায় উনিশ”, “উনিশ আমাদের আত্মপরিচয়”, “উনিশ আমাদের অহংকার,” এত বছর ধরে এই স্লোগান গুলোই শুনে আসছি। কতো গান, কবিতা, নাটক তৈরি হলো, আলপনা আঁকা , শহিদ বেদী, টেবিল চাপড়ানো, আরও কত কী। কিন্তু শহিদ পরিবারের খবর কেউ রাখে না। উলটে এই পরিবারকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে এই ব্যাপারটি প্রকাশ্যে আসার পরই শিলচরের শহরের পঞ্চাশটির উপরে সংগঠন সহ শহরের শুভবুদ্ধি সম্পন্ন নাগরিকরা সংবাদমাধ্যমে এর প্রতিবাদ জানিয়েছিলো। তবে কে কীভাবে হুমকি দিয়েছে শহিদ পরিবারকে, জানি না। সেইভাবে মুখ খুললেন না পরিবারের সদস্যরা। হয়তো আগাম সতর্কতা। যাই হোক, এবার অন্তত আমরা সচেতন হ‌ই। একটু খোঁজ খবর নেই আমাদের শহিদ পরিবারদের। তাদের পরিবারদের যথাযোগ্য মর্যাদা সম্মান দেওয়ার চেষ্টা করি। সবাই মিলে চেষ্টা করলে আমরা ঠিক পারবো।’

Comments are closed.

error: Content is protected !!