শনবিলের নৌকাডুবিতে নিখোঁজ দুই ব্যক্তির মৃতদেহ উদ্ধার, খোঁজ নিলেন মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত
বঙ্গোপসাগর থেকে ওঠা ঝড় ইয়াসের আংশিক প্রভাব বুধবার সন্ধ্যেবেলা বরাক উপত্যকায়ও দেখা যায়। সারা উপত্যকায় প্রায় এক ঘন্টা ধরে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যায়। এতে করিমগঞ্জ জেলার শনবিলে এক নৌকাডুবি হয় এবং দুই ব্যক্তি নিখোঁজ হন। ঘটনায় ৫ ব্যক্তি জলে তলিয়ে গেলেও তিন জনকে উদ্ধার করতে সমর্থ হয় সুরক্ষা বাহিনী। বৃহস্পতিবার সকাল এগারোটা নাগাদ এসডিআরএফ বাহিনী নিখোঁজ দুই ব্যক্তির মৃতদেহ উদ্ধার করেছে। এদের মধ্যে একজন হলেন ৫০-বছর বয়সের উজ্জ্বলা দাস এবং অন্যজন ১০-বছর বয়সের হাসি দাস। এবার মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হবে, এরপর পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হবে।
ঘটনার খোঁজ নিয়েছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা। তিনি স্থানীয় বিধায়ক বিজয় মালাকারকে ফোন করে ঘটনার বৃত্তান্ত নিয়েছেন এবং তাকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে। বরাক বুলেটিনের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে বিধায়ক বিজয় মালাকার বলেন, “শনবিল অত্যন্ত বিস্তীর্ণ একটি জলাভূমি এবং আশেপাশের লোকেরা প্রায়ই চলাফেরা করার ক্ষেত্রে ছোট ছোট নৌকা ব্যবহার করেন। যদিও এই পরিস্থিতিতে জনগণকে পরিষ্কার বলে দেওয়া হয়েছে তারা যাতে ঘর থেকে না বেরোন, অনেকেই বিশেষ প্রয়োজনে সেটা করছেন। গতকাল আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলেছিল সন্ধ্যেবেলা ঝড়ো হাওয়া বইতে পারে, সেটা উপেক্ষা করেই কিছু লোক নৌকায় এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাওয়ার জন্য রওনা দিয়েছিলেন এবং বিলের মাঝখানে তারা ঝড়ের কবলে আসেন। যদিও তিন ব্যক্তিকে সঙ্গে সঙ্গে উদ্ধার করা হয়, দুজন তলিয়ে যান এবং আজ তাদের মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে। ঘটনা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক কিন্তু জনগণ সচেতন থাকলে এধরনের পরিস্থিতি থেকে নিজেদের দূরে রাখতে পারেন। আমরা প্রত্যেক ব্যক্তির কাছে অনুরোধ রাখছি, আপনারা নিজেদের এভাবে বিপদে ফেলবেন না। এছাড়া স্থানীয় সুরক্ষা ব্যবস্থা আর একটু কঠোর করার দিকে আমাদের নজর থাকবে।”
এদিন নৌকা চালাচ্ছিলেন নিতিশ দাস নামের এক ব্যক্তি এবং তার ১৭ বছরের ছেলে অজিত দাশ। নৌকা পাল্টে যাওয়ার ফলে তারা দুজন সহ সাত বছর বয়সের মেয়ে ধনু দাস সহ ৫ ব্যক্তি এদিন জলে পড়েন। বাকিরা কোনোক্রমে বেঁচে গেলেও ৫০-বছর বয়সের উজ্জ্বলা দাস এবং ১০-বছর বয়সের হাসি দাস নিখোঁজ হন। উজ্জ্বলা দাসের বাড়ি করিমগঞ্জ জেলার কল্যাণপুর গ্রামে, তিনি অমরেশ দাস নামের এক ব্যক্তির স্ত্রী। হাসি দাস শান্তিপুর গ্রামের বাসিন্দা, তার বাবার নাম বিষ্ণুপদ দাস।
জেলা দুর্যোগ মোকাবেলা বিভাগের আধিকারিকরা জানিয়েছেন, এদিন সন্ধ্যে নাগাদ ঘটনাটি ঘটে। নৌকাডুবি হওয়ার পর এলাকাবাসী তাদের খবর দেন এবং এসডিআরএফের বাহিনী সহ একটি বিশেষ সুরক্ষা বাহিনী সেখানে উপস্থিত হয়। উদ্ধার কাজে যোগ দেন এলাকার মানুষও। তারা তিন ব্যক্তিকে উদ্ধার করতে পারলেও দুজন তাদের হাতের নাগালের বাইরেই থেকে যান। অনেক রাত্র পর্যন্ত এদের খুঁজে না পাওয়ায় বৃহস্পতিবার ভোরবেলা থেকে আবার শুরু হয় অভিযান। এদিন সকাল সোয়া এগারটা নাগাদ পরপর দুজনের মৃতদেহ উদ্ধার হয়। এবার সেগুলো ময়নাতদন্তের জন্য শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
ঘটনায় অনেকেই প্রশ্ন করছেন, এই দুর্যোগের সময় নৌকা নিয়ে এত গভীর জলাশয়ে কেন যাওয়ার ঝুঁকি নিলেন এই লোকেরা? বিশেষ করে যখন তাদের সঙ্গে শিশু এবং মহিলারা ছিলেন। তবে পুরোটাই তদন্তে উঠে আসবে এবং আগামীতে পুরো তথ্য প্রশাসনের তরফে জনসমক্ষে তুলে ধরা হবে।
সার্কোল অফিসার ভানলাল নামপুই ভাইতে বলেন, “সাধারণ মানুষের বয়ান অনুযায়ী ফাকুয়াগ্রাম থেকে কল্যাণপুর যাওয়ার জন্য একদল লোক ছোট নৌকা ব্যবহার করছিলেন। হঠাৎ করেই তারা ঝড়ের কবলে আসেন এবং নৌকা ছোট হওয়ায় সেটাও পাল্টে যায়। রাজ্য সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী দুপুর দুটোর পর থেকে সব ধরনের যাতায়াত বন্ধ রাখা হয়েছে। তবু অনেকেই এভাবে চলাফেরা করছেন এবং নিজেদের জীবন বিপদে ফেলছেন। আমরা নিজেদের মতো সুরক্ষা ব্যবস্থা রাখার চেষ্টা করছি, তবে জনগণ যদি সচেতন না হন তাহলে পরিস্থিতি কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।”
আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে, আগামী কিছুদিন উত্তর-পূর্বের অন্যান্য এলাকা সহ বরাক উপত্যকায়ও ঝড়ো হাওয়া বইতে পারে। প্রশাসনের তরফে প্রত্যেক জনগণকেও অনুরোধ করা হয়েছে, কোনওভাবে যাতে নিজেদের এমন পরিস্থিতিতে না ফেলেন যেখানে তাদের প্রাণহানির আশঙ্কা দেখা দিতে পারে।
Comments are closed.