কয়লা সিন্ডিকেট নিয়ে সীমান্ত জেলায় ত্রাহি ত্রাহি রব
সুদীপ দাস করিমগঞ্জ, ৩১ মে : সুতারকান্দি সীমান্তে কয়লা সিন্ডিকেটের নতুন মোড় নিতে চলেছে । রবিবার উপর মহলের নির্দেশ পেয়ে জেলা পুলিশ সুপার নয়টি কয়লা ভর্তি লরি সহ চালক আটক করার পর থেকেই ত্রাহি ত্রাহি রব উঠেছে সীমান্ত জেলায় । গত চব্বিশ ঘন্টা থেকে বলতে গেলে ঘুম উড়ে গেছে কিছু ব্যবসায়ীদের । বিগত ২৯ বছর থেকে আমদানি রপ্তানি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকার পর কয়লার কালোবাজারি কিভাবে হয় তা বুঝতে না পারা জেলা আমদানি রপ্তানি সংস্থার সভাপতি বিজেপি নেতা, সহ-সম্পাদককে গত চব্বিশ ঘন্টা আটক থাকতে হয় করিমগঞ্জ সদর থানায় । দুই দিন আগে অফিস পাড়ায় কয়লা কালোবাজারি নিয়ে সাংবাদিকদের পাঠ দান করা এবং সদর থানায় দাঁড়িয়ে সাংবাদিকের নামে মামলা করার হুমকি দেওয়া বিজেপি নেতার রবিবার রাত কেটেছে সদর থানায়। বিগত চব্বিশ ঘন্টা থেকে ঘন্টায় ঘন্টায় পুলিশের ঊর্ধ্বতন আধিকারিকদের জেরার সম্মুখীন হতে হয়েছে তাঁকে ।
রবিবার নয়টি কয়লার ট্রাক আটক করার ঘটনা নিয়ে গতকালই সাতজনকে আটক করে করিমগঞ্জ পুলিশ । গোটা রাত্র করিমগঞ্জ পুলিশের ম্যারাথন জেরার পর এর মধ্যে থেকে চারজনকে আদালতে তোলা হলে আদালতের নির্দেশে তাদের পাঠানো হয়েছে জেল হাজতে । যে চারজনকে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে তার মধ্যে একজন হচ্ছেন ফকিরাবাজার থেকে আটক করা কয়লা গাড়ির চালক নীলু রায়, বাকি তিনজন কয়লা ব্যবসায়ী যথাক্রমে ফখরুল ইসলাম, আব্দুল হাফিজ চৌধুরী, মুক্তা হুসেন চৌধুরী । তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা নং হচ্ছে 120/B/ 379/411/ 384/ 467/468/471/ 427/34 IPC । চার জনকে জেলে পাঠানোর পাশাপাশি শর্ত সাপেক্ষে পুলিশের আটক থেকে সোমবার সন্ধ্যায় মুক্তি দেওয়া হয়েছে আমদানি রপ্তানি সংস্থার সভাপতি অমরেশ রায়কে । কিন্তু তাঁকে ফের আগামী তিন তারিখে পুলিশের কাছে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে । সঙ্গে আরো তিনজন রুনু মিয়া, তাজ উদ্দিন, বিল্লুজিত রায়কে মুক্তি দিয়ে ফের দুই দিন পরে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ।
সোমবার বিকালে করিমগঞ্জে জেলাশাসকের কার্যালয়ের সামনে থেকে সদর পুলিশ হিফজুর রহমান সহ কমরুল ইসলাম নামের আরো এক কয়লা ব্যবসায়ীকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় । সূত্র থেকে জানা মতে, মূল সিন্ডিকেটের মাফিয়া বীরেন্দ্র মালাকার, আব্দুল মুনিম ওয়াহিদ এবং গৌতম দাসের সন্ধানে গতকাল থেকে কয়েক দফায় অভিযান চালায় করিমগঞ্জ পুলিশ। রবিবার বিকাল থেকে করিমগঞ্জ পুলিশের অ্যাকশন মোড দেখে ত্রাহি ত্রাহি রব উঠেছে সীমান্ত জেলায় । তদন্তের খাতিরে করিমগঞ্জ পুলিশ এনিয়ে কোন মন্তব্য না করলে মুখ খুলছেন না আমদানি রপ্তানির সঙ্গে জড়িত থাকা অনেকে। কয়লা মাফিয়াদের খোঁজে সদর পুলিশ মাঠে নামার পর থেকে মোবাইল ফোন বন্ধ রয়েছে অনেকের ।
তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হচ্ছে যে গত এক সপ্তাহ আগে প্রায় ১৫০ টি কয়লা ভর্তি লরি পুলিশ আটক করে তদন্ত ক্রমে ছেড়ে দিয়ে দুই দিন পরে ফের নয়টি লরি আটক করার বিষয়টি বেশ ভাবাচ্ছে এই মুহূর্তে । যদিও রবিবার দিন নয়টি লরি আটক করার আগে একশোর বেশি লরি বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছিল। পুলিশের রণঃদেহী মেজাজ দেখে কিন্তু ওইদিন বিকালে অনেক কয়লা মাফিয়াকে সুতারকান্দি ছাড়তে দেখা গেছিলো । সঙ্গে গাড়ি ছেড়ে পালিয়ে ছিল লরির চালকরা । কয়লা রপ্তানি নথি পত্রের বৈধতা, লরির কাগজ সংক্রান্ত বিষয়, না কয়লা রপ্তানির সঙ্গে কোন অবৈধ ব্যবসা জড়িত এনিয়ে প্রশ্ন উঠতে দেখা গেছে। লরির চালকের পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি কিন্তু যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ এই মুহূর্তে । আটক হওয়া এক লরি চালককে জেলে পাঠানো হয়েছে আজকে । তদন্তের স্বার্থে এনিয়ে কোন মন্তব্য করেননি পুলিশ সুপার সহ সদর ওসি। তবে এই দুইদিনের পুলিশের অ্যাকশন দেখে ঘটনা যে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না ।
অন্যদিকে গতকাল রাতে ছয়জন কয়লা ব্যবসায়ীকে করিমগঞ্জ সদর থানায় আটক করার পর সোমবার সকালে সেখানে গিয়ে উপস্থিত হন উত্তর করিমগঞ্জের বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ । বিষয়টি নিয়ে কিন্তু যথেষ্ট বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। করিমগঞ্জ পুলিশ কোনো মন্তব্য না করলেও বিধায়কের উপস্থিতি নিয়ে যথেষ্ঠ জলঘোলা হচ্ছে গোটা দিন থেকেই। যদিও বিধায়কের বক্তব্য, জেলা আমদানি রপ্তানি সংস্থার সভাপতি অমরেশ রায়ের সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত সম্পর্ক ভালো এবং পুলিশের কাছে আটক হওয়া ছয়জন ব্যক্তি তার সমষ্টির । যার কারণে গত চব্বিশ ঘন্টা থেকে তাদের কেন আটক করে সদর থানায় রাখা হয়েছে সেই খোঁজ নিতেই তিনি এখানে উপস্থিত হয়েছেন । তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, বিগত দিনে কয়লা সিন্ডিকেট নিয়ে সরকারকে আক্রমন করা বিধায়ককে কিন্তু সোমবার কিছুটা হলেও অন্য মেজাজে দেখা যায় । বিধায়কের মতে, মূল সিন্ডিকেটের খলনায়করা ফেরার।পুলিশ এদের নাগাল পায়নি এখনও। তার কথায়, মেঘালয় থেকে মালিডহর হয়ে যে কয়লার গাড়ি গুলো করিমগঞ্জে পৌঁছে তাতে এ বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ থাকলেও করিমগঞ্জ থেকে সুতারকান্দি হয়ে বাংলাদেশে প্রেরণ করা কয়লার গাড়িতে তেমন কোন কালোবাজারি নাও থাকতে পারে। মেঘালয় থেকে করিমগঞ্জ বাবা হোটেল পর্যন্ত ট্রাক ভর্তি কয়লার সিন্ডিকেটে জড়িত থাকা মাফিয়ারা কেন মুক্ত আকাশের নীচে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠান বিধায়ক কমলাক্ষ ।
Comments are closed.