ইউনেস্কোয় ভারতের প্রতিনিধিত্ব করবেন ক্যান্সার হাসপাতালের বৈজ্ঞানিক, "আমরা গর্বিত" বললেন ডাঃ রবি কান্নান
জম্মুর বাসিন্দা ডঃ লতিকা ভার্মানি কাছাড় ক্যান্সার হাসপাতালের একজন গবেষক এবং বর্তমানে বৈজ্ঞানিকের স্বীকৃতি পেয়েছেন। এবার ইউনেস্কোতে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পাচ্ছেন তিনি। ক্যান্সার রিসার্চের ক্ষেত্রে ইউনেস্কো এবং গ্লোবাল ভেরিয়োম প্রজেক্ট যৌথভাবে ক্যান্সার রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে নতুন দিক খুঁজে বের করতে বিশেষ ট্রেনিং প্রোগ্রাম চালু করেছে। বিশ্বের মোট ১৬টি দেশ থেকে ১৬ জন বৈজ্ঞানিক এতে অংশ নেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। এতে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করছেন কাছাড় ক্যান্সার হাসপাতালের গবেষক ডঃ লতিকা ভার্মানি।
বরাক বুলেটিনের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে তিনি জানান, ক্যান্সার রিসার্চের ক্ষেত্রে হিউম্যান জিনোম বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এব্যাপারে বিভিন্ন দেশে গবেষণা হচ্ছে এবং নতুন নতুন বিষয় উঠে আসছে। যে ট্রেনিং প্রোগ্রামে আমি অংশ নেওয়ার সুযোগ পেয়েছি, সেটা এক সময় নেদারল্যান্ডে হওয়ার কথা ছিল। তবে পৃথিবীর বর্তমান পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে পুরো অনুষ্ঠানটি অনলাইন পদ্ধতিতে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আয়োজকরা। ভারতবর্ষের বিভিন্ন এলাকা থেকে অনেক বৈজ্ঞানিক এতে আবেদন করেছিলেন তবে শেষমেষ আমি যোগ দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছি।
ছয়মাস ধরে এই ট্রেনিং চলবে যেখানে হিউম্যান জিন নিয়ে নানা ধরনের আলোচনা হবে, বিশেষ করে ক্যান্সার প্রতিরোধ ক্ষমতা বিষয়ক গবেষণা এখানে প্রাধান্য পাবে। সেখানে পৃথিবীর বিখ্যাত বৈজ্ঞানিকরা অংশ নেবেন, এদের মধ্যে রয়েছেন, লেইডেন ইউনিভার্সিটি মেডিকেল সেন্টারের বিশেষজ্ঞ ডাঃ জোহান ডেন বানেন, তার সঙ্গে থাকবেন লেইডেন অপেন ভেরিয়েশন ডাটাবেজের তরফে একটি বিশেষ দল।
২০১৬-তে গবেষক হিসেবে কাছাড় ক্যান্সার হাসপাতালে যোগ দিয়েছিলেন ডঃ লতিকা ভার্মানি। তিনি মলিকিউলার অঙ্কোলজি বিষয়ে গবেষণা করেছেন উত্তর-পূর্ব ভারতে ক্যান্সারের কারণগুলো নিয়ে আলোচনা করছেন। এই বিষয়ে তিনি বলেন, “ভারতবর্ষের অন্যতম স্বনামধন্য ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ হচ্ছেন ডাঃ রবি কান্নান। তিনি উত্তরপূর্বে সবথেকে ভরসাযোগ্য ক্যান্সার চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান বানিয়েছেন কাছাড় জেলায়। তার কাজের জন্য ভারত সরকার তাকে পদ্মশ্রী পুরস্কারে ভূষিত করেছে। এই এলাকার জীবনশৈলী অনেকটা ক্যান্সারের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তামাক জাতীয় দ্রব্য এবং সুপারি অনেকেই গ্রহণ করেন, ফলে তাদের বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারের ঝুঁকি এমনিতেই বেড়ে যায়। এছাড়া আরো অনেক সমস্যা রয়েছে যেগুলো দূর করতে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে সচেতনতা। পদ্মশ্রী ডাঃ রবি কান্নান ক্যানসার আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকায় সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ করে যাচ্ছেন এবং তার সঙ্গে আমরাও রয়েছি।”
হিউম্যান জিনোম শুধুমাত্র ক্যান্সারে নয়, বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় বৈজ্ঞানিকরা করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে এই পদ্ধতির কথা ভাবছেন। এব্যাপারে ডঃ লতিকা ভার্মানি বলেন, “করোনা ভাইরাস গত বছর যতটুকু শক্তিশালী ছিল এই বছর তার থেকে অনেক বেশি ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে তার। অর্থাৎ সে তার ধরন পাল্টাচ্ছে যাকে মিউটেন্ট বলা হয়। হিউম্যান জিন গবেষণার মাধ্যমে আমরা অবশ্যই পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখতে পারি মানুষের শরীর কিভাবে প্রতিরোধ ক্ষমতা আরও বেশি বৃদ্ধি করতে পারে। এই ক্ষেত্রেও গবেষণা হচ্ছে, কিন্তু সেটা এখনও অনেকটাই প্রাথমিক পর্যায়ে। আমি আশা করছি, যে ১৫ গবেষকের সঙ্গে দেখা হবে তারা কেউ এই বিষয়েও কথা বলবেন।”
ইউনেস্কোর মত প্ল্যাটফর্মে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করছেন কাছাড় ক্যান্সার হাসপাতালের বৈজ্ঞানিক ডঃ লতিকা ভার্মানি, এতে অত্যন্ত আনন্দিত এবং গর্বিত বোধ করছেন পদ্মশ্রী ডাঃ রবি কান্নান। তিনি বলেন, কাছাড় জেলার একটি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে গবেষণা করে ডঃ লতিকা ভার্মানি আজ ইউনেস্কোর মত প্ল্যাটফর্মে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করছেন, এটা গর্বের বিষয়। তবে তার থেকে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে একটা বার্তা, ছোট শহর বা প্রত্যন্ত এলাকায় থাকলেই বিশ্বমানের কাজ করা যায় না, এমনটা নয়। আজ সারা দেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন প্রত্যন্ত কাছাড় জেলায় গবেষণা করা এক ছাত্রী। সারাদেশ এবার তার কাজের দিকে তাকিয়ে থাকবে। কোনও ভালো কাজ করতে হলে সব থেকে জরুরি হচ্ছে ইচ্ছাশক্তি এবং পরিশ্রম। ডঃ লতিকা ভার্মানি তার ইচ্ছা শক্তি এবং পরিশ্রমের মাধ্যমে সমস্ত বাধা কাটিয়ে আজ বিশ্বের দরবারে পৌঁছে গেছেন, এটা শিক্ষনীয় একটি উদাহরণ।”
Comments are closed.