স্বপ্নভঙ্গ হল ভারতের তারকা মহিলা জিমন্যাস্ট দীপা কর্মকারের। রিও অলিম্পিকে চতুর্থ স্থান দখল করে গোটা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলার মহিলা জিমন্যাস্ট। সেবার অল্পের জন্য পদক হাতছাড়া হয়েছিল তার। তখন থেকেই টোকিও অলিম্পিকে পাখির চোখ ছিল দীপার। রিওতে পদক মিস করলেও টোকিওতে পডিয়াম ফিনিশের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু মহামারী করোনা তার সব স্বপ্নে জল ঢেলে দিল।একের পর এক প্রতিযোগিতা বাতিল হওয়ায় টোকিও অলিম্পিকের টিকিটই আদায় করতে পারলেন না দীপা। সত্যি কথা বললে, যোগ্যতা অর্জন করার সেই সুযোগটুকু পেলেন না তিনি। উল্টোদিকে, কন্টিনেন্টাল কোটায় অলিম্পিকের ছাড়পত্র পেয়ে গেলেন পশ্চিমবঙ্গের মহিলা জিমন্যাস্ট প্রণতি নায়েক। এবার টোকিও অলিম্পিকে তিনি ভারতের প্রতিনিধিত্ব করবেন।
রিও অলিম্পিকে চতুর্থ স্থান নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল আগরতলার মহিলা অ্যাথলিটকে। তবে গোটা ভারতবর্ষের জন্য সেটা ছিল এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত। কারণ সেবারই প্রথম কোনও ভারতীয় মহিলা জিমন্যাস্ট পদকের এত কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিলেন। রিও অলিম্পিকে পদুনোভা ভোল্ট দিয়ে গোটা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন দীপা। অলিম্পিকের পদক হাতছাড়া করার জ্বালা নিয়েই টোকিও অলিম্পিক এর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন দীপা এবং তার দ্রোণাচার্য কোচ বিশ্বেশ্বর নন্দী। দু’বছর আগে পায়ে চোট পেয়েছিলেন তারকা জিমন্যাস্ট। তবে চোট সারিয়ে ছন্দে ফিরে এসেছিলেন তিনি। গুরু বিশ্বেশ্বর নন্দীর অধীনে চুটিয়ে অনুশীলন করছিলেন আগরতলার এন এস আর সি সিতে। তবে তার সেই প্রস্তুতিতে জল ঢেলে দিল মহামারী করোনা।
অলিম্পিকের আগে তিনটি ওয়ার্ল্ড চ্যালেঞ্জার কাপ আয়োজন করার কথা ছিল আন্তর্জাতিক জিমনাস্টিক ফেডারেশনের। কিন্তু মহামারী করোনার জন্য দুটি আসর বাতিল করতে হয়েছে। আর এটাই টোকিও অলিম্পিক থেকে ছিটকে দিয়েছে দীপাকে। নিয়ম হচ্ছে, একজন জিমন্যাস্ট কে অলিম্পিকের টিকিট আদায়ের জন্য তিনটি ওয়ার্ল্ড চ্যালেঞ্জার কাপে অংশ নিতেই হবে। এই ওয়ার্ল্ড চ্যালেঞ্জার কাপ কে বিশ্বকাপও বলা হয়ে থাকে। এই তিনটি বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করে একজন জিমন্যাস্ট কে অন্তত ৯০ পয়েন্ট সংগ্রহ করতেই হবে। আসলে এই টুর্নামেন্টগুলো হচ্ছে অলিম্পিকের কোয়ালিফাই রাউন্ড। ইতিমধ্যে দুটি টুর্নামেন্ট বাতিল হয়ে যাওয়ায় দীপার পক্ষে এখন আর ৯০ পয়েন্ট সংগ্রহ করা সম্ভব নয়।
আগামী ২৩-২৬ জুন কাতারের রাজধানী দোহায় বসবে ওয়ার্ল্ড চ্যালেঞ্জার কাপ। এর জন্য আজই দীপার দ্রোণাচার্য কোচ বিশ্বেশ্বর নন্দীকে জানিয়েছে ভারতীয় জিমন্যাস্ট ফেডারেশন। তবে করোনা সংকটের মধ্যে কিভাবে এবং কবে রওনা দিতে হবে, তা নিয়ে কিছুই জানানো হয়নি নন্দী বাবুকে। বরাক বুলেটিন কে তিনি বলেন, ‘একেবারে শেষ মুহূর্তে ফেডারেশন আমায় দোহার চ্যালেঞ্জার কাপের কথা জানালো। তবে করোনা পরিস্থিতিতে কীভাবে রওনা দেবে দল, তা নিয়ে কিছু জানায়নি।’
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, দোহায় জিমনাস্টিক বিশ্বকাপে অংশ নিলেও কিন্তু দীপার টোকিও অলিম্পিকে যাওয়া হচ্ছে না। কারণ দোহায় সেরা পারফরমেন্স করলেও ভারতীয় তারকা জিমন্যাস্ট ৯০ পয়েন্ট সংগ্রহ করতে পারবেন না। এই মুহূর্তে দীপার পয়েন্ট ৪৫। যার অর্থ দোহায় তাকে আরো ৪৫ পয়েন্ট আদায় করতে হবে। যা সম্ভব নয়। তাই টোকিও অলিম্পিকে দীপার আর কোনও সম্ভাবনাই নেই।
২০১৯ সালে হাঁটুতে চোট পেয়েছিলেন দীপা। যার ফলে তাঁকে চোট সারিয়ে উঠতে অনেকদিন রিহ্যাবে থাকতে হয়েছিল। এরপর চোট সারিয়ে ফিরলেও কোনও আন্তর্জাতিক ইভেন্টে অংশগ্রহণ করেননি আগরতলার মহিলা অ্যাথলিট। এর মধ্যে গোটা বিশ্বে তাণ্ডব শুরু করে দেয় মহামারী করোনাভাইরাস। যার ফলে সমস্ত বিশ্বে সব ধরনের খেলাধুলা বন্ধ হয়ে যায়। আর এটাই দীপার অলিম্পিক যোগ্যতা অর্জনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। দু-দুটি চ্যালেঞ্জার কাপ বাতিল হয়ে যাওয়ায় যোগ্যতা অর্জন করার সুযোগ পাননি তারকা মহিলা জিমন্যাস্ট। এমনকি গত দেড় বছরে কোনও ন্যাশনাল ক্যাম্পও হয়নি। চোট সারিয়ে ফেরার পর দীপার প্রথম টার্গেট ছিল নবম এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ। কিন্তু মহামারীর জন্য সেটা বাতিল হয়ে যায়।
উল্টোদিকে, ২০১৯ সালে চোটের জন্য দীপা ছিটকে যাওয়ায় এশিয়ান জিমনাস্টিক চ্যাম্পিয়নশিপে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেন পশ্চিমবঙ্গের প্রণতি। সেই প্রতিযোগিতায় তিনি ব্রোঞ্জ পদক জেতেন। সেই পারফরম্যান্সের জোরেই তিনি টোকিও অলিম্পিকের ছাড়পত্র পেয়ে গেলেন। কন্টিনেন্টাল কোটায় এশিয়ার কোটা থেকে দ্বিতীয় মহিলা জিমনাস্ট হিসেবে গেমসের এর মূল পর্বে যাবেন শ্রীলংকার একজন।
আয়োজক জাপান এবং আন্তর্জাতিক অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন (আই ও এস) জোর গলায় দাবি করলেও টোকিও অলিম্পিক এর আসর কিন্তু ঘোর অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে। জাপানের সাধারণ নাগরিক থেকে শুরু করে চিকিৎসকরাও টোকিও অলিম্পিক এর বিরোধিতা করছেন। এসবের মধ্যেই প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন দীপা। বুকভরা আশায় ছিলেন, টোকিও অলিম্পিকের ছাড়পত্র আদায় করে নেবেন। তারপর মূলপর্বে নিজেকে নিংড়ে দেবেন। তবে করোনা সবকিছু ওলোট পালোট করে দিল। আর এতে স্বপ্নভঙ্গ হল রিও অলিম্পিকে চতুর্থ স্থান দখল করা দীপা কর্মকারের।
Comments are closed.