Also read in

শিলচর থেকে প্রেরিত ব্ল্যাক ফাঙ্গাস রোগী গুয়াহাটি মেডিক্যাল কলেজ থেকে ছাড়া পেয়েছেন, 'তার অবস্থা স্থিতিশীল', জানালেন ডাক্তার

বরাক উপত্যকা তথা করিমগঞ্জের ‘মিউকর্মাইকোসিস’ এ আক্রান্ত প্রথম পোস্ট কোভিড রোগী অলোক দেব হাসপাতাল থেকে আজ ছাড়া পেয়েছেন। গত ৫ জুন শিলচর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল থেকে তাকে গুয়াহাটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল।শিলচর মেডিক্যাল কলেজের ডাক্তাররা রোগীর উন্নত মানের নিউরো সার্জিক্যাল চিকিৎসার জন্য গুয়াহাটি মেডিকেল কলেজে পাঠিয়েছিলেন। যদিও অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন রয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করে তখনই বলা সম্ভব হয়নি। এখানকার ডাক্তাররা জানান যে রোগীর যদি প্রয়োজন পড়ে, তাই এটি একটি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছিল।

তবে তার অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয়নি এবং তার অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে বলে তাকে গুয়াহাটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে আজ ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

মে মাসের প্রথম সপ্তাহে তিনি কোভিড পজিটিভ হয়েছিলেন এবং তারপর তাকে করিমগঞ্জের জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর তার শ্বাসকষ্টের সৃষ্টি হলে করিমগঞ্জের চিকিৎসকরা তাকে শিলচর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে রেফার করেন। যদিও রোগী একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে ভর্তি হন এবং সেখানে অক্সিজেনের সহায়তায় তার কোভিড চিকিৎসা করা হয়। ১৫ মে তিনি হাসপাতাল থেকে ডিসচার্জ নেন এবং শিলচরের একটি লজে থাকেন। ১৭ মে তাকে অন্য একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।শ্বাসকষ্ট, মাথা ব্যথা এবং চোখ ফুলে যাওয়া ইত্যাদি তার প্রাথমিক সমস্যাগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল।

পরিবারের সূত্র থেকে জানা যায় যে ২৫ মে পর্যন্ত তাকে বেসরকারি হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা করানো হয়।এরপর ডাক্তাররা তার শরীরের অবস্থা বিবেচনা করে তাকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেন। তবে পরের দিন তার অক্সিজেনের স্তর নিচে নেমে আসে এবং তার চোখ আবার ফুলে যায়। সঙ্গে সঙ্গে তাকে শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ডাক্তাররা সঙ্গে সঙ্গে সেই রোগীর অনুনাসিক এন্ডোস্কোপি এবং কেওএইচ (পটাশিয়াম হাইড্রোক্সাইড) পরীক্ষা করেন। কেওএইচ পরীক্ষার উপর ভিত্তি করে শিলচর মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসকরা ব্ল্যাক ফাঙ্গাস বা ‘মিউকর্মাইকোসিস’ আক্রান্ত রোগীদের সুস্থ করে তুলতে ব্যবহৃত একটি এন্টিফাঙ্গাল ড্রাগ ‘অ্যাম্ফোটেরিসিন বি’ দেন। পরে বায়োপসি এবং কালচার রিপোর্টে নিশ্চিত করা হয় যে অলোক দেব ‘মিউকর্মাইকোসিস’য়ে ভুগছেন। জানা যায়, বাড়িতে তার একটি ছোট ছেলে রয়েছে। তার ভাই তার সঙ্গে হাসপাতালে থাকতেন। তবে তাকে আলাদা একটি কেবিনে রাখা হয়েছিল। তার পরিবারের সদস্যরা জানান যে একটা সময়ে এতটাই চোখের ব্যথায় ভুগছিলেন যে তিনি ঠিক মত তার চোখ খুলতে পারছিলেন না।

আজ অলোক দেব গুয়াহাটি মেডিক্যাল কলেজ থেকে ছাড়া পেয়েছেন। ‘রোগীর অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে। ‘ইএনটি’ এবং ‘ইন্ট্রাক্রানিয়াল (ব্রেইন)’ দুটো দিক দিয়েই রোগীর অবস্থা ঠিক রয়েছে বলে জানান গুয়াহাটি মেডিক্যাল কলেজের অধ্যাপিকা তথা ‘ওপথালমোলজি’ ডিপার্টমেন্টের এইচওডি এবং শিলচর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল থেকে পাঠানো ‘মিউকর্মাইকোসিস’ রোগীদের চিকিৎসার জন্য গঠিত বিশেষ কমিটির সদস্য ডঃ ভারতী গগৈ।

বরাক বুলেটিনের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে তিনি যোগ করেন,” অনুনাসিক গহ্বর থেকে তার সংক্রমণ শুরু হয়েছিল। তার একটি চোখও আক্রান্ত হয়েছিল। কারণ মিউকর্মাইকোসিস’র জন্য একটি নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ফলে তিনি একটি চোখের দৃষ্টি পুরোপুরি হারিয়ে ফেলেন। তবে তার চোখে কোন অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন নেই।”

ডঃ ভারতী গগৈ আরো জানান, “অ্যাম্ফোটেরিসিন বি” দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার শারীরিক জটিলতা ধীরে ধীরে হ্রাস পায়। তবে দীর্ঘ সময় ধরে রোগীর ‘ওরেল ডোজ’ নেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে, যা আমরা ইতিমধ্যে প্রেসক্রাইব করেছি।”

Comments are closed.