Also read in

ভ্যাকসিন সেন্টারে মহিলা স্বাস্থ্যকর্মীর সঙ্গে দুর্ব্যবহার, হাইলাকান্দিতে আটক চার যুবক

এক মহিলা স্বাস্থ্যকর্মীকে ভ্যাক্সিনেশন সেন্টারে গালিগালাজ এবং ধাক্কা দেওয়ার অভিযোগে হাইলাকান্দির কাটলিছড়া এলাকায় ৪ ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ঘটনাটি ঘটেছে কাটলিছড়ার ধলাই-মলাই এমই স্কুলের সরকারি ভ্যাক্সিনেশন সেন্টারে।

মঙ্গলবার দুপুর বারোটা নাগাদ স্থানীয় চার যুবক প্রথমে স্বাস্থ্যকর্মীকে নোংরা ভাষায় গালাগাল দেয়, ভ্যাক্সিনেশন সেন্টারের প্রয়োজনীয় নথিপত্র নষ্ট করার চেষ্টা করে, শেষমেষ স্বাস্থ্যকর্মীকে ধাক্কা দেয় এবং চড় মারতে উদ্যত হয়। অত্যন্ত অপমানিত এবং আতঙ্কিত অবস্থায় স্বাস্থ্যকর্মীটি স্থানীয় পুলিশ স্টেশনে এজাহার দায়ের করেন। এর ওপর ভিত্তি করে পুলিশ ৪ যুবককে মঙ্গলবার রাতেই গ্রেফতার করে।

এদের নাম হচ্ছে সুহেল আহমেদ, বদরুল ইসলাম, কামাল উদ্দিন (কবির), সাহারুল ইসলাম। বয়স ২০ থেকে ২২ বছরের মধ্যে। এরা ধলাই মলাই গাও পঞ্চায়েতের অধীনে বিলগাও এলাকার বাসিন্দা। পুলিশসুপার রমনদীপ কৌর জানিয়েছেন বুধবার সন্ধ্যা নাগাদ তাদের কোর্টে পেশ করা হবে। পুলিশের তরফে আদালতের কাছে অনুরোধ জানানো হবে, দোষী সাব্যস্ত হলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে যেন কঠোরতম শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়।

এদের বিরুদ্ধে ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যাক্ট ২০০৫ এবং আসাম মেডিকেল সার্ভিস পারসনস অ্যান্ড মেডিকেল সার্ভিস ইনস্টিটিউশন (প্রিভেনশন অফ ভায়োলেন্স অ্যান্ড ডেমেজ টু প্রোপার্টি) অ্যাক্ট ২০১১ ছাড়াও ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২০ (খ), ৩৫৩, ৩৫৪, ২৯৪ ও ৪২৭ ধারায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা গ্রহণ করা হয়েছে।

রমনদীপ কৌর বলেন, “এই কঠিন সময়ে স্বাস্থ্যকর্মীরা নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানুষের সেবায় নিয়োজিত। তাদের বিরুদ্ধে এমন আচরণ আমরা কোনওভাবেই মেনে নিতে পারছি না। তার ওপর স্বাস্থ্যকর্মীটি একজন মহিলা, শিশু এবং মহিলাদের বিরুদ্ধে হওয়া অত্যাচার আমরা একেবারেই বরদাস্ত করিনা। স্বাস্থ্যকর্মীটি পুলিশের কাছে এজাহার দায়ের করার সঙ্গে সঙ্গেই আমাদের আধিকারিকরা অভিযুক্তদের আটক করেছেন। তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ধারায় মামলা গ্রহণ করা হয়েছে এবং আজ আদালতে পেশ করা হবে। আমরা আদালতের কাছে আবেদন রেখেছি এদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক যাতে ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়।”

সোনালী দেব নামের স্বাস্থ্যকর্মীটি মঙ্গলবার বিকেলেই কাটলিছড়া থানায় এজাহার দায়ের করেন। ঘটনার বৃত্তান্ত তুলে ধরতে গিয়ে তিনি বলেন, “এখন অনেক বেশি সংখ্যায় ভ্যাকসিন প্রদান করা হচ্ছে তাই তাই আমরা সকাল থেকে পরিশ্রম করছি। সাধারণ মানুষ সুশৃংখলভাবে লাইন ধরে ভ্যাকসিন নিচ্ছিলেন তখন হঠাৎ করে চার যুবক উশৃংখলতা দেখাতে শুরু করে। দুপুর বারোটা নাগাদ তারা হঠাৎ করেই চিৎকার-চেচামেচি আরম্ভ করে, তাদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে নোংরা ভাষায় গালাগাল দেয় এবং দৌড়ে এসে আমাদের কাগজপত্র নষ্ট করার চেষ্টা করে। বাধা দিতে গেলে আমাকে ধাক্কা দেয় এবং চড় মারতে উদ্যত হয়। যদিও বাকি স্বাস্থ্যকর্মীরা চলে আসায় তারা সেখান থেকে গা ঢাকা দেয়, তবে এমন ব্যবহার পাওয়ার পর চুপ করে থাকা যায় না। তাই আমরা পুলিশের দ্বারস্থ হয়ে ঘটনার বৃত্তান্ত তুলে ধরে একটি এজাহার দায়ের করি। আমরা চাই এদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা হোক যাতে ভবিষ্যতে স্বাস্থ্যকর্মীরা এমন লোকের হাতে নিগৃহীত না হন।”

উল্লেখ্য, গত মাসে হাইলাকান্দি সিভিল হাসপাতালে এক জুনিয়র ডাক্তারকে মারধর করেছিলেন করোনায় মারা যাওয়া এক রোগীর পরিবারের সদস্যরা। ঘটনার পরের দিন চিকিৎসকের মা পুলিশের কাছে একটি লিখিত আবেদন জানিয়েছিলেন। এর প্রায় এক সপ্তাহ পর হাইলাকান্দি শহর থেকেই দুই অভিযুক্তকে আটক করে পুলিশ। তবে আশ্চর্যের বিষয় ঠিক পরের দিন তারা জামিনে মুক্ত হয়ে বাড়ি ফিরে যান। চিকিৎসকের পরিবারের সদস্যরা পরবর্তীতে তাকে কাজে পাঠাতে ভয় পাচ্ছিলেন।

Comments are closed.