Also read in

মালুগ্রামে শিশুকন্যা নিগ্রহের অভিযুক্তের ফাঁসির দাবিতে পথে নামলেন এলাকাবাসীরা

 

নিজের বাড়িতে দু-দুবার জ্যাঠতুতো দাদার যৌনলালসার শিকার হয়েছিল মালুগ্রাম ইটখলা সংলগ্ন এলাকার ৮ বছরের শিশু কন্যা। প্রথমবার ঘটনার পর তার মাকে পরিবারের লোকেরা মুখ বন্ধ করে দিয়েছিলেন। কিন্তু দ্বিতীয় ঘটনার পর যখন শিশুটি অসুস্থ হয়ে পড়ে, তার মা থানায় মামলা করেন এবং অভিযুক্তকে করিমগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এবার এলাকার মানুষ যুবকটির ফাঁসির দাবি তুলেছেন। প্রায় ২০০ লোক মিলে রবিবার সন্ধ্যাবেলা এক মোমবাতি মিছিল করেন এবং জোরালো প্রতিবাদ জানান।

এদিন সন্ধ্যে ছয়টা নাগাদ ইটখলা ইদ্গা-ঘাট সংলগ্ন এলাকা থেকে মিছিল শুরু হয়। এলাকার বিভিন্ন বয়সের মহিলা পুরুষ নির্বিশেষে প্রত্যেকে এতে যোগ দেন। মিছিলে শামিল হন শিশু কন্যাটির মা এবং বাবাও। এছাড়া বজরং দলের সদস্যরা দোষীর পর্যাপ্ত শাস্তির দাবি নিয়ে মিছিলে যোগ দেন।

সম্প্রতি গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় শিলচরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন হয় ৮-বছর-বয়সের একটি শিশু। তার মায়ের দাবি, একবার নয়, দুবার নিজের বাড়িতেই
যৌন হেনস্তার শিকার হয়েছিল ছোট্ট শিশুটি। প্রথম ঘটনার পর তার মাকে হুমকি দিয়ে মুখ বন্ধ রেখেছিলেন পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা। তবে দ্বিতীয় ঘটনার পর নিজের মেয়ের গোপনাঙ্গ দিয়ে রক্ত ঝরতে দেখে মা পুলিশের কাছে গিয়ে খবরটি জানিয়ে মামলা দায়ের করেন।

তিনি যে মামলা দায়ের করেছেন তাতে বলা হয়েছে, ২০ এপ্রিল মালুগ্রামের ইটখলা এলাকায় নিজের বাড়িতে ভাইয়ের হাতে প্রথমবার যৌন নিগ্রহের শিকার হয়েছিল ৮ বছরের শিশু কন্যাটি। অথচ ঘটনার পর ধর্ষণকারী যুবকটি শিশুকন্যা এবং তার মাকে প্রাণে মারার হুমকি দিয়ে মুখ বন্ধ করে দিয়েছিল। এমনকি আহত অবস্থায় ছোট্ট মেয়েটির ন্যূনতম চিকিৎসাও হয়নি। এতে ধীরে ধীরে শিশুকন্যাটির গোপন স্থানে ইনফেকশন হয়। গত সপ্তাহে আবার সুযোগ পেয়ে শিশু কন্যাটির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তার জ্যাঠতুতো দাদা। এরপর সে অসুস্থ হয় এবং তাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়।

এদিন মিছিলে দাঁড়িয়ে শিশুকন্যাটির বাবা জানান, পরিবারের লোকেরা তার ওপর চাপ সৃষ্টি করেছেন এবং তাকে একঘরে করে দিয়েছেন। তাদের একটাই দাবি, এই মামলা তুলে নিতে হবে এবং ঘটনা ভুলে আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে হবে। তিনি বলেন, “নিজের বাড়িতেই আমার ছোট্ট মেয়েটি হেনস্তার শিকার হয়েছে এবং আমি চুপ করে থাকব, এটা সম্ভব নয়। আমার দিদি এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা আমাকে বারবার বিভিন্ন ভাবে চাপ দিচ্ছেন। এটা শুধু আমার মেয়ের ঘটনা নয় ভবিষ্যতে যাতে কোনও ছোট্ট শিশু এভাবে হেনস্তার শিকার না হয়, তাই আমরা প্রতিবাদ করছি।”

শিশুটির মা বলেন, “প্রথমবার আমার মেয়ে যখন হেনস্তার শিকার হয়েছে, তখন যদি আমি মুখ খুলতাম তাহলে তার আজ এই অবস্থা হত না। আমার সন্তানের কাছে আমি অপরাধী। তবে এবার দোষীর শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত আমরা চুপ থাকছি না। পরিবারের লোকেরা আমার ছোট্ট ছেলেকেও ভয় দেখাচ্ছেন। তারা ভুল করেছেন বলেই আমাদের এভাবে ভয় দেখিয়ে মুখ বন্ধ রাখার চেষ্টা করছেন। তবে আইন ব্যবস্থার উপর আমার বিশ্বাস রয়েছে এবং আমি আশা রাখছি দোষীর শাস্তি হবে।”

বজরং দলের সদস্যরা বলেন, “আমরা দোষীর ফাঁসি চাই, এই ঘটনা কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। আমাদের বিশ্বাস আইন তার বিরুদ্ধে কঠোর বিধান দেবেন। তবে এই প্রক্রিয়া চলাকালীন কোনওভাবে যাতে তার জামিনে মুক্তি না হয় এটা নজর রাখতে হবে। শিশু কন্যা এবং মা-বোনদের ওপর অত্যাচার আগেও আমরা মেনে নিইনি এখনও নেবনা।”

এলাকার লোকেরা বলেছেন, যদি অভিযুক্ত জামিনে মুক্তি পায় তারা তাকে এলাকায় ঢুকতে দেবেন না। লকডাউন ভেঙে হঠাৎ করে এমন মিছিল হওয়ায় পুলিশ কিছুটা অস্বস্তিতে পড়ে গেছিল। তবে তারা কোনওভাবে জোর খাটিয়ে সেটা বন্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা করেননি। মিছিলে অংশ নেওয়া লোকদের বুঝিয়ে বলা হয়, তারা যাতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলেন এবং এই মুহূর্তে খুব লম্বা সময় মিছিল না করেন। পুলিশের অনুরোধ রেখে এলাকাবাসীরা অল্প সময়ের মধ্যেই মিছিল শেষ করেন এবং বাড়ি ফিরে যান।

Comments are closed.

error: Content is protected !!