কিছু রাজনৈতিক নেতাদের জুলুমে সাপের মত ছোট-বড় হচ্ছে রাঙ্গিরখাড়ি-মেডিকেল চার লেন সড়ক, মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাইল আকসা
গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছিল রাঙ্গিরখাড়ি পয়েন্ট থেকে শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পর্যন্ত চার-লেন সড়ক গড়ে তোলার কাজ। তখন শিলচরের বিধায়ক ছিলেন দিলীপ কুমার পাল, তিনি নিজে গিয়ে কাজ উদ্বোধন করেছিলেন। তবে পরবর্তীতে দেখা গেছে রাস্তা সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে বিভিন্ন জায়গায় বিশেষ কিছু বিল্ডিং, দোকানপাট ইত্যাদিকে ছাড় দিয়ে কাজ চলছে। এতে চার লেন রাস্তা কোনও কোনও জায়গায় প্রায় দুই-লেনে পরিণত হয়েছে। এর বিরুদ্ধে অতীতে অনেকেই প্রতিবাদ করেছেন। এবার মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছে সারা কাছাড় করিমগঞ্জ হাইলাকান্দি ছাত্র সংগঠন (আকসা)। যেহেতু করোনা পরিস্থিতি চলছে তাই তারা চিঠি হাতে জমা না দিয়ে ই-মেইলের মাধ্যমে পাঠিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার চিঠি পাঠানোর পর সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে নিজেদের কথাগুলো তুলে ধরেছেন আকসার সদস্য এবং উপদেষ্টারা। তারা বলেন, “সারাদেশের যেকোনও এলাকায় যখন চার লেন রাস্তা হয়, সেটা দুই দিক দিয়ে সমান পরিধি হিসেবে এগিয়ে যায়। অথচ প্রথমবার দেখা গেল রাঙ্গিরখাড়ি পয়েন্ট থেকে শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পর্যন্ত সড়ক একটি সাপের মত এলোমেলো ভাবে এগিয়ে গেছে। কোথাও সড়ক কিছুটা ছোট, কোথাও আবার বড়। যেন কোনও জায়গা সাপের পেট আবার কোনও জায়গা সাপের গলা। যে সব ইঞ্জিনিয়াররা এই সড়ক নিয়ে কাজ করছেন, তারা হয়তো নিজেদের পড়াশোনার জ্ঞানটুকু একেবারেই ভুলে গেছেন এবং একটা সড়কের সমান পরিধি গড়ে তুলতে পারছেন না।”
এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে আকসার বিভিন্ন সদস্য ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন উপদেষ্টা নিরঞ্জন দত্ত, রুপম নন্দী পুরকায়স্থ নিকিতা বণিক সহ অন্যান্যরা। প্রাক্তন অধ্যাপক নিরঞ্জন দত্ত বলেন, “সাধারণ পদ্ধতিতে এমনটা হয় না তবে এখানে বিশেষ কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নিজেদের জোর খাটিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে অধিগ্রহণ করা জায়গা নিজেদের কাছে রেখেছেন। এতে ওই এলাকায় সড়ক ছোট হচ্ছে এবং বাকি জায়গায় স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে চার লেন হচ্ছে। বাইরে থেকে কেউ এলে এসব দেখে হাসবে কেননা, একটি সরকারি বিভাগের তত্ত্বাবধানে গড়ে ওঠা সড়ক সাপের শরীরের মত ছোট-বড় হয়না। আমরা চাই ১৯৫২ ইংরেজির সরকারি জরিপ অনুযায়ী আবার জরিপ হোক এবং মেপে দেখা হোক, কোন কোন জায়গা বিশেষ বিশেষ লোকেরা অধিকার করে রেখেছে যার ফলে সড়ক ছোট হচ্ছে।”
তিনি আরো বলেন, “শুধুমাত্র রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের প্রভাব থাকবে এমনটা নাও হতে পারে, হয়ত বিভাগীয় আধিকারিকরা টাকার লেনদেনের মাধ্যমে জনগণের স্বার্থ বিক্রি করে দিয়েছেন। আমাদের সন্দেহের আওতায় পূর্ত বিভাগ এবং ল্যান্ড সেটেলমেন্ট বিভাগ সহ শিলচর পুরসভাও রয়েছে। আমরা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানিয়েছি, তিনি যেন পুরো ঘটনার তদন্ত করেন এবং একটা গুরুত্বপূর্ণ সড়ককে স্বাভাবিকভাবে গড়ে তোলার নির্দেশ দেন।”
উপদেষ্টা রূপম নন্দী পুরকায়স্থ বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা গুয়াহাটির পরিকাঠামোগত উন্নতির দিকে বিশেষ নজর রেখেছেন এবং শহরটি একের পর এক নতুন প্রকল্পের মাধ্যমে সেজে উঠছে। অথচ রাজ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর শিলচর এখনও বিভিন্ন কারণে পিছিয়ে আছে। এই সড়কের কাজ নিয়ে বিভিন্ন ধরনের গোলমাল হচ্ছে এবং আমরা দুবার প্রশাসনের কাছে চিঠি লিখে সেগুলো তুলে ধরেছিলাম। বিশেষ করে কাঁঠাল রোড পয়েন্ট থেকে ন্যাশনাল হাইওয়ে পয়েন্ট পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশেই বিভিন্ন লোকেরা জমি দখল করে রেখেছেন এবং এর বিরুদ্ধে সরকার অসহায় ভূমিকা পালন করছে। সেখানে কিছু প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের পরিবারের লোকেরা জমি দখল করে আছেন, এদের বিরুদ্ধে কথা বলতে না পেরে বিভাগের আধিকারিকরা হয়তো সড়কের নকশা পাল্টে দিয়ে, কোথাও ছোট কোথাও বড় আকারে সেটা গড়ে তুলছেন। এটা একেবারেই অন্যায় কাজ করছেন তারা, এখন করোনা পরিস্থিতি রয়েছে আমরা আন্দোলন করতে পারব না, তবে প্রতিবাদ আমাদের চলবে।”
রাঙ্গিরখাড়ি পয়েন্ট থেকে শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পর্যন্ত চার-লেনের কথা ছাড়াও ছাত্র সংগঠনের সদস্যরা আসাম বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত চার লেন সড়কের দাবি তুলেছেন। তাদের যুক্তি হচ্ছে, এই সড়কে শিলচর এনআইটি এবং আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো দুটো গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে যেখানে হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রী এবং শিক্ষকরা রোজ যাতায়াত করেন। অতীতে সড়ক খারাপ থাকায় অনেক দুর্ঘটনা ঘটেছে এবং আহত হয়েছেন বেশ কিছু লোক। এই সড়কটি চার লেন হয়ে গেলে পড়ুয়ারা কম সময়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে পৌঁছতে পারবে, যার সুদুরপ্রসারী ফল রয়েছে।
Comments are closed.