প্রয়াত হলেন বিশিষ্ট সমাজসেবী, ব্যবসায়ী ও অখণ্ড সংঘের কর্মী অশোক কুমার দাস
গত মাসের শেষ দিকে শিলচর থেকে তড়িঘড়ি চেন্নাই নিয়ে যাওয়া হয়েছিল শহরের চেঙকুরি রোড এলাকার বাসিন্দা অশোক দাসকে। তাকে স্থানীয় বেসরকারি হাসপাতাল থেকে শিলচর বিমানবন্দরে নিয়ে যাওয়ার জন্য গ্রীন করিডর করে তোলা হয়েছিল। প্রথম দিন আবহাওয়া পরিস্থিতির জন্য তাকে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি, দ্বিতীয় দিন তাকে নিয়ে যাওয়া হয়। এদিকে পরিবারের অনেকেই করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়ে পড়েন। তারা বাড়িতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন তবে এত চেষ্টার পরেও অশোক দাসকে বাঁচানো যায়নি। বৃহস্পতিবার রাতে তিনি চেন্নাইয়ের হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর, রেখে গেছেন অপু রানী দাস, পুত্র অপূর্ব দাস, কন্যা অপর্না দাস আত্মীয় পরিজন সহ অখন্ড সংগঠনের অসংখ্য গুণমুগ্ধকে। তিনি দক্ষিণ আসাম অখন্ড সংগঠনের অন্যতম শক্ত খুঁটি ছিলেন। তার মৃত্যুতে গোটা অখন্ড সংগঠন সহ বরাক উপত্যকার ব্যবসায়ী সমাজ শোকাহত।
২৬ জুন সন্ধ্যায় চেংকুরি রোডের বাড়িতে হঠাৎ শ্বাসকষ্ট অনুভব করেন অশোক দাস। দেখা যায় তার অক্সিজেন লেভেল ৯০য়ের নিচে নেমে এসেছে। সঙ্গে সঙ্গেই শিলচরের একটি প্রাইভেট নার্সিং হোমে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রাথমিক পরীক্ষায় ধরা পড়ে তিনি করুনা ভাইরাসে আক্রান্ত। সেখানে তিন দিন চিকিৎসা চললেও তার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছিল না। শেষমেষ উন্নত চিকিৎসার জন্য গত ৩০ জুন সকাল সাড়ে গ্রিন করিডোর গড়ে তোলে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের মাধ্যমে চেন্নাই নিয়ে যাওয়া হয়। সঙ্গে ছিলেন ভাগ্নে কর্নেন্দু দাস, দুই শ্যালক অঞ্জন কুমার পাল এবং সিদ্ধার্ত পাল। চেন্নাইতে চিকিৎসা চলাকালীন অবস্থায় গলায় একটি অপারেশন করা হয়। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শরীর জবাব দিতে থাকে।
বৃহস্পতিবার রাত দশটায় শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ বিকল হয়ে যাওয়ায় তিনি কোভিড যুদ্ধে হেরে যান, মৃত্যুমুখে ঢলে পড়েন। তার মৃত্যুর খবরে গোটা অখন্ড সংগঠন এবং পরিজন এর মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে। মৃত্যুর খবরে পুত্র অপূর্ব দাস শুক্রবার দুপুরে চেন্নাই এর উদ্দেশ্যে বিমান যাত্রা করেন। চেন্নাই থেকে শ্যালক অঞ্জন কুমার পাল জানান শনিবার চেন্নাই সিটি কর্পোরেশন এর উদ্যোগে সকাল আটটায় হিন্দু শাস্ত্র ওখানেই তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হবে। যেহেতু কোভিড আক্রান্ত ছিলেন, এই তাবস্থায় বিমানযোগে তার মরদেহ শিলচর আনা যাবে না এবং সড়কপথেও এত দূর থেকে আনা সম্ভব নয় তাই চেন্নাইতে শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হবে।
প্রয়াত অশোক কুমার দাসের জন্ম কালাইন এলাকার টিকর বুরুঙ্গা পাদ্রী টিলায়। পিতা অনিল দাস জমিদার হয়েও এলাকায় অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা সহ বিভিন্ন সামাজিক কাজে নিজের অবদান রেখেছেন। প্রাথমিক মাধ্যমিক পড়াশোনা নিজস্ব দানকৃত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শেষ করার পর বিহারা যুধিষ্ঠির সাহা উচ্চমাধ্যমিক স্কুলে পড়াশোনা করেন অশোক দাস। এরপর চলে আসেন শিলচরে, এখানে বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার পাশাপাশি সামাজিক কর্মকাণ্ডেও যোগ দেন। যৌবন অবস্থায় অযাচক ঋষি স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের শিষ্যত্ব গ্রহণ করে অখন্ড আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাবার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েন। সদাহাস্য পরোপকারী অশোক দাস দক্ষিণ আসাম প্রান্ত অখন্ড মন্ডলী বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেন। শিলচরের অন্যতম ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান জয়াস হোটেলের কর্ণধার ছিলেন। তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন শিলচর অখন্ড মন্ডলী সদস্যরা। এছাড়া শিলচরের হোটেল এসোসিয়েশন এর পক্ষ থেকেও শোক প্রকাশ করা হয়েছে।
Comments are closed.