Also read in

ব্যর্থতার জন্যই চর্চায় উধারবন্দ স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশন, ইউএসএ কে পুনরুজ্জীবিত করতে বদ্ধপরিকর ক্রীড়াপ্রেমীরা

 

হঠাৎ করেই চর্চায় উধারবন্দ স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশন (ইউ এস এ)। এখানে হঠাৎ শব্দটা কিন্তু বড্ড বেশি প্রাসঙ্গিক। কারণ যে সংস্থাটি সত্তরের দশকে গঠিত হয়েছিল, সেই সংস্থাটির কিন্তু হঠাৎ করে চর্চায় আসার কথা নয়। বরং ‌ নিজেদের কার্যকলাপের মাধ্যমে সব সময় চর্চায় থাকার কথা।খেলাধুলাসহ স্থানীয় প্রতিভা গুলোকে তুলে আনার কথা ছিল তাদের। স্থানীয় খেলোয়াড়রা যাতে একটা প্লাটফর্ম পায়, সেটা নিশ্চিত করার কথা ছিল ইউএসএ’র। স্থানীয় ক্লাব সংগঠন গুলিকেও একটা মঞ্চ তৈরি করে দেওয়ার কথা ছিল তাদের। এই লক্ষ্য নিয়েই তো গঠিত হয়েছিল সংস্থাটি। এমনটাই তো করে থাকে স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশন গুলি। তবে ইউ এস এর ক্ষেত্রে দীর্ঘ বছর থেকে এমনটা হয়নি। আর হয়নি বলেই নিজেদের ব্যর্থতার জন্য চর্চায় এসেছে ইউএসএ।

একটা স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশন হিসেবে গত কয়েক বছর থেকে নিষ্ক্রিয় ইউএসএ। অথচ তারা কিনা শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থার অনুমোদিত সংস্থা। শিলচর ডি এস এর প্রতিটি সভাতেই নিজেদের প্রতিনিধিত্ব পাঠায় ইউএসএ। তারপরও কিন্তু দীর্ঘ সময় থেকেই একটা অকেজো যন্ত্রের মতো পড়ে রয়েছে উধারবন্দ স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশন। যারা খেলোয়াড় তুলে আনা তো দূরের কথা, নিজেদের কোনো সভা সমিতিও করতে পারিনি। ইউএসএ’র কর্মকর্তারা বলছেন, সংস্থার সভা হয়েছে। কমিটিও গঠিত হয়েছে। সত্যি যদি এমনটা হয়ে থাকে তাহলে লোকাল মিডিয়ায় এর কোনও খবর দেওয়া হল না কেন? নিজেদের অভিভাবক শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থাকেই এ বিষয়ে জানানো হলো না কেন? শিলচর ডিএসএস অনুমোদিত সংস্থা হিসেবে ইউএসএ কি নিজেদের একাউন্টের হিসেব পেশ করেছে? প্রশ্ন আরো অনেক আছে। তবে আগে বুঝতে হবে কেন আজকের এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হল।

উধারবন্দ এলাকায় খেলাধুলার সার্বিক উন্নয়নের জন্য গঠন করা হয়েছিল ইউ এস এ। উধারবন্দের ক্রীড়া সংগঠন, ক্লাব এবং ক্রীড়াপ্রেমীদের জন্য একটা প্লাটফর্ম তৈরি করার লক্ষ্য নিয়েই সত্তরের দশকে যাত্রা শুরু করেছিল ইউএসএ। এর প্রথম সভাপতি ছিলেন উধারবন্দের বিশিষ্ট খেলোয়াড় প্রয়াত নিকুঞ্জ বিহারী সিংহ। সচিব ছিলেন অরুণ দেমতা। তারা একটা স্বপ্ন নিয়ে ইউএসএ গঠন করেছিলেন। কিন্তু তাদের উত্তরসূরিরা সেই স্বপ্ন পূরণে ব্যর্থ হয়েছেন।মর্যাদাসম্পন্ন এই সংস্থাটি বেশ কিছু সময় থেকেই একেবারে অচল হয়ে পড়েছে। নেই কোনো হেলদোল। সব কার্যকলাপ বন্ধ। ফলে শুধু ‘নাম কা ওয়াস্তে’ টিকে রয়েছে ইউএসএ। তবে এবার ইউএসএ’র এমন কার্যকলাপে টনক নড়েছে উধারবন্দের ক্রীড়াপ্রেমী জনসাধারণের।

এতটা বছর নীরবতা পালন করলেও এবার গা ঝাড়া দিয়ে উঠেছেন স্থানীয় ক্রীড়াপ্রেমীরা। ইউ এস এর মত এক মর্যাদাসম্পন্ন সংগঠনকে ফের চাঙ্গা করে তুলতে ইতিমধ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়ে ফেলেছেন তারা।‌ এর মধ্যেই এক বিশেষ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সে সভাতে শালগঙ্গা, ঠালিগ্রাম, দয়াপুর এবং মাঝারগ্রাম এলাকার ক্রীড়া সংগঠক, প্রাক্তন ও বর্তমান ক্রীড়াবিদ সহ ক্রীড়া প্রেমীরা উপস্থিত ছিলেন। প্রত্যেকের গলায় একই সুর ছিল, ইউএসএ কে পুনরুজ্জীবিত করে তুলতে হবে। সেই সভাতে সাত সদস্যের এক এডহক কমিটি গঠিত হয়েছিল। ‌ সেইসঙ্গে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল আগামী ১ আগস্ট ইউ এস এর সাধারণ সভা আয়োজন করা হবে। উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, উধারবন্দের প্রাক্তন বর্তমান ক্রীড়াবিদ সহ ক্রীড়াপ্রেমী ও সংগঠকরা ইউএসএ কে পুনরুজ্জীবিত করার প্রক্রিয়ায় মাঠে নেমে পড়েছেন। এখন পর্যন্ত তারা যেসব পদক্ষেপ নিয়েছেন সেগুলি ইতিমধ্যে ইউএসএ’র অভিভাবক শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থাকেও জানিয়ে দিয়েছেন। অথচ, যারা ইউএসএর গদি আঁকরে বসে আছেন তারা কিন্তু এখন পর্যন্ত শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থার কাছে কোনো নথি তুলে দিতে পারেননি। এবার শোনা যাচ্ছে তারা নাকি ১ আগস্টের আগে সাধারণ সভা আয়োজন করতে যাচ্ছেন। প্রশ্নটা হচ্ছে, প্রতিটি সংস্থাটির তো একটা নিয়ম থাকে। সাধারণ সভার ডাক দেওয়ার জন্য একটা সময়সীমা নির্ধারণ থাকে। অর্থাৎ সাধারণ সভার ডাক দিতে হলে অন্তত ১৫ দিন অথবা অন্তত ৭ দিন আগে সেটা জানাতে হয়। এখানে প্রশ্ন হচ্ছে, যে সংস্থাটি এতদিন একটা সভার আয়োজন করতে পারল না তারা হঠাৎ করে এত একটিভ হয়ে গেল কি করে? তাদের এই প্রক্রিয়াটা কতটুকু বৈধ?

আরও একটা বিষয় হচ্ছে, ইচ্ছাকৃতভাবেই শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থার আসন্ন বিজিএম এর সঙ্গে ইউএসএ কে জড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। তবে যারা ইউএসএ কে পুনরুজ্জীবিত করার প্রক্রিয়া এগিয়ে এসেছেন তারা কিন্তু এমন রাজনীতি করেন না। বরং একটু খোঁজ নিলেই জানা যাবে, উধারবন্দে খেলাধুলার আয়োজনে তারা সব সময় এক্টিভ। এই প্রক্রিয়াতে প্রাক্তন খেলোয়ারসহ বর্তমান যুগের উঠতি খেলোয়াড়রাও রয়েছেন। ইউএসএর তো আর শিলচরের বড় বড় ক্লাবের মত ছয়টি ভোট নেই। তাহলে এর সঙ্গে শিলচর ডি এস এ বি জি এমের প্রসঙ্গ এলো কোত্থেকে? এই সংস্থাকে যারা পুনরুজ্জীবিত করার প্রক্রিয়ায় এগিয়ে এসেছেন তারা সবাই ক্রীড়াপ্রেমী। খেলাধুলা ভালোবাসেন বলেই এগিয়ে এসেছেন।

মনে রাখতে হবে ইউএসএ একটা সংস্থা। এটা কোনো ক্লাব নয়। কাজেই শুধু এক দুটো টুর্নামেন্ট আয়োজন করাই তাদের আসল কাজ নয়। গত এক দশকে কতজন খেলোয়াড় তুলে আনতে পেরেছে ইউএসএ? অথবা যেসব খেলোয়াড়রা উধারবন্দ অথবা তার আশেপাশের এলাকা থেকে উঠে এসেছে, তাতে ইউএসএ’র ভূমিকাটা কি? এই মুহূর্তে এসব প্রশ্নই প্রাসঙ্গিক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কোনো এক অজ্ঞাত কারণে এগুলি অপ্রাসঙ্গিক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আসল সত্যটা হচ্ছে, বর্তমানে যারা ইউএসএ’র গদি আঁকরে বসে আছেন তারা শিলচর ডিএস এতে প্রতিনিধিত্ব করা ছাড়া আর কিছুই করেননি। আর কিছু করেননি বলেই আজ এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ইউ এস এর মান বাঁচাতে এগিয়ে আসতে হয়েছে উধারবন্দের ক্রীড়াপ্রেমীদের।

Comments are closed.