Also read in

আর্থিক সঙ্কটে ক্রিকেট থেকে ফোকাসই হারিয়ে ফেলেছেন প্রতিভাবান অভিজিৎ দেবনাথ

একজন ক্রিকেটারের জন্য ২৫ বছরে পা রাখার অর্থ হচ্ছে নিজের পিক টাইমে পা রাখা। সাধারণত ক্যারিয়ারে এই সময়টাতেই একজন ক্রিকেটার খেলোয়াড় হিসেবে আরও পরিণত হয়ে ওঠেন। নিজের স্কিল লেভেল আরো উন্নত করেন। সোজা কথায় ২৫ বছরে পা রাখার পর একজন ক্রিকেটারের খেলার প্রতি ফোকাসটা আরো বেড়ে যাওয়ার কথা। ‌ তবে শিলচরের প্রতিভাবান ক্রিকেটার অভিজিৎ দেবনাথ এর ক্ষেত্রে উল্টোটাই হচ্ছে।

জুনিয়র স্তরে জেলা দলে ধারাবাহিক পারফরম্যান্স করার পর এখন আরও একধাপ এগিয়ে যাওয়া উচিত ছিল অভিজিৎ এর। জেলার অন্যতম সেরা উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান তিনি। জুনিয়র স্তরে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে টানা শিলচর দলের প্রতিনিধিত্ব করেছেন এই উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান। যার সুবাদে একাধিকবার ডাক পেয়েছেন রাজ্য দলের ট্রায়াল’ ক্যাম্পেও। এমন প্রতিভা থাকা সত্ত্বেও এই মুহূর্তে ক্রিকেটে ফোকাস ঠিক রাখতে পারছেন না তিনি। এর প্রধান এবং একমাত্র কারণ হচ্ছে আর্থিক সংকট।

করোনাভাইরাস এবং এর জেরে লকডাউন গোটা বিশ্বকে আর্থিকভাবে পঙ্গু করে দিয়েছে। ব্যতিক্রম নয় আমাদের দেশ। বিশেষ করে আমাদের দেশে মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর আর্থিক অবস্থা একেবারে খারাপ করে দিয়েছে এই লকডাউন। যেসব পরিবারে কোনো চাকরি নেই, তাদের অবস্থা তো খুবই শোচনীয়। এমনই এক মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে এসেছেন অভিজিৎ। খুব কম বয়সেই নিজের প্রতিভা দিয়ে সবার নজর কেড়েছেন। জুনিয়র স্তরে জেলা দলের ধারাবাহিক পারফর্মার তিনি। তবে এখন পরিবারের আর্থিক সংকটের দুশ্চিন্তায় ফোকাস টাই ঠিক রাখতে পারছেন না। ফোকাস ঠিক রাখা তো দূরের কথা, এতদিন ক্রিকেট খেলে তার অনেক মূল্যবান সময় নষ্ট করেছেন, এমন চিন্তা ও তার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।

শহর শিলচর থেকে দূরে তাম্বুটিলায় নিজের মাকে নিয়ে থাকেন অভিজিৎ। কোনো ম্যাচ থাকলে ১০ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে তাকে ডি এস এ তে আসতে হয়। টাকা রোজগারের জন্য পেইন্টিং করে থাকেন শিলচরের এই উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান। তবে গত দুই বছরের অধিকাংশ সময় লকডাউন থাকায় তেমন কাজ করার সুযোগ পাননি অভিজিৎ। এরমধ্যে সাম্প্রতিককালে তার মা-র একটা সার্জারিও হয়েছে। যার ফলে অর্থ রোজগার করা আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে তার জন্য। কিন্তু হাতে সেরকম কাজ নেই। তাই এই মুহূর্তে তার মাথায় ক্রিকেট নয়, ঘুরপাক খাচ্ছে পরিবারের আর্থিক সংকটের বিষয়টাই। কিভাবে এই সমস্যাটা কাটিয়ে উঠা যায়, সেদিকেই সম্পূর্ণ ফোকাস করছেন অভিজিৎ।

টাউন বয়েজ ক্লাবের হয়ে দ্বিতীয় ডিভিশন ক্রিকেট দিয়ে তার ক্যারিয়ার শুরু হয়। তারপর প্রথম ডিভিশন ক্রিকেট লিগে তারাপুর এসি এবং ক্লাব ওয়েসিসের হয়ে নিয়মিত খেলে যাচ্ছেন। গত দু’বছর থেকে খেলছেন ক্লাব ওয়েসিসের হয়ে সুপার ডিভিশন লিগ ক্রিকেটে। ২০১১-১৫ সাল পর্যন্ত অনূর্ধ্ব ১৫, অনূর্ধ্ব ১৭ এবং অনূর্ধ্ব ১৯ জেলা দলের হয়ে একটানা খেলে গেছেন। স্কুল ক্রিকেটেও ভালো পারফরমেন্স করে সুনাম অর্জন করেছেন অভিজিৎ। জুনিয়র স্তরে এমন পারফরম্যান্সের পর এখন ক্যারিয়ারের পিক টাইমে থাকার কথা ছিল তার। কিন্তু আর্থিক সংকটের জেরে সেই মানসিকতাই যেন হারিয়ে ফেলেছেন। বরং তার মনে হচ্ছে, এতটা বছর ক্রিকেট না খেলে পরিবারকে সময় দিলে, অর্থ উপার্জনের দিকে ফোকাস করলে ভালো হতো। তখন তার পরিবারকে আজকের মত এতটা চাপে থাকতে হতো না। আর্থিক সঙ্কটে থাকতে হতো না।

যে দেশে ক্রিকেটকে ধর্মের মর্যাদা দেওয়া হয়, ক্রিকেটারদের কোটিপতি আখ্যা দেওয়া হয়, সেই দেশে অভিজিতের মতো প্রতিভাবান ক্রিকেটার দের এমন কাহিনী সত্যিই দুঃখজনক। এটা প্রমাণ করে আমাদের সিষ্টেম কতটা দুর্বল। যার জন্য ২৫ বছর বয়সেই একজন ক্রিকেটার ক্রিকেট থেকে ফোকাসটা হারিয়ে ফেলে।

Comments are closed.