Also read in

"হিজড়ারা আমার পাঁচ মাসের সন্তানকে অপহরণের চেষ্টা করেছিল" এই অভিযোগে শিলচরে এফআইআর দায়ের; " সহানুভূতি দেখান,বৈষম্য করবেন না" বললেন পিপাসা হালদার হিজড়া

শিলচরে হিজড়াদের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে বিরোধের নিষ্পত্তি হওয়া তো দূরের কথা, ক্রমশ বেড়ে চলেছে। উভয় পক্ষেরই একদিকে যেমন সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, তেমনি কথাবার্তার ভাষা আরো উগ্র এবং সরাসরি হয়ে উঠছে। শিলচরের দুই হিজড়া গোষ্ঠীর মধ্যে শুরু হওয়া বিরোধ এখন এক সামাজিক- সাংস্কৃতিক সমস্যার রূপ নিয়েছে।

পিপাসা হালদার যিনি ভারতের পূর্বাঞ্চলে বসবাসকারী ৪০,০০০ হিজরাদের গুরু হিসেবে পরিচিত, তিনি শিলচরে আজ একটি সাংবাদিক সম্মেলন ডেকেছিলেন। তাদের মধ্যে প্রায় ৭০ জন বর্তমানে রংপুরের আঙ্গারজুর এলাকায় একটি বাড়িতে বসবাস করছেন। অনেকজন একসঙ্গে বসবাস করার দরুন বসবাসের জায়গাটি ঘিঞ্জি এবং পাশাপাশি এক শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা। ছোট ঘরগুলোতে বসবাস করার দরুন একের থেকে অন্যের কোভিড সংক্রমণের ঝুঁকি অবশ্যই রয়েছে। এর ওপর তারা শহরের সবার দরজায় দরজায় ঘুরে টাকা সংগ্রহ করেন। “এই সময়টা আবহাওয়া পরিবর্তনের সময়।বছরের এই সময়টাতে অনেকেরই ঠান্ডা লাগতে পারে কিংবা হালকা জ্বরে অনেকেই ভোগেন। এটা যেকোন কারোর সঙ্গেই হতে পারে। এখানে আমরা কেউই অসুস্থ নই বা আমাদের কোন ‘মেডিক্যাল কম্প্লিকেশন’ নেই। সমাজে অশান্তি সৃষ্টির জন্য এসব গুজব ছড়ানো হচ্ছে। এটি আমাদের প্রতি ঘৃণা তৈরির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে”, বললেন পিপাসা হালদার।

মূলত বিরোধ বেঁধেছিল নন্দিনী সাহা হিজরা এবং অঞ্জনা সাহা হিজড়ার মধ্যে। অঞ্জনা সাহা শিলচর সদর থানায় একটি এফআইআর দায়ের করেন। তিনি অভিযোগ করেন, নন্দিনী সাহা একজন অবৈধ বাংলাদেশি, যিনি একজন হিজড়াকে অপহরণ করেন এবং তাকে নির্যাতন করেন। অভিযোগের পর নন্দিনী কয়েকদিনের জন্য নিখোঁজ হয়ে যান। গত ২৯ আগস্ট তিনি পিপাসা হালদার এবং ৭০ জনের হিজড়াদের একটি দলের সঙ্গে ফিরে আসেন। তিনি সংখ্যাগরিষ্ঠতা দাবি করেন এবং অঞ্জনার বিরোধিতা শুরু করেন।

“আমরা শিলচরে কোনো বিরোধ, কোন লড়াই বা সংঘাত চাই না। আমরা শান্তি চাই। আমরা অঞ্জনা, তামান্না ও সালোনিকে আন্তরিকভাবে আমন্ত্রণ জানিয়েছি আমাদের সঙ্গে বসতে এবং একই গ্রুপে একসঙ্গে থাকতে। কিন্তু তারা রাজি হয়নি। হিজড়ারা সব জায়গায় এক গ্রুপ করে একসঙ্গে থাকে। কিন্তু তারা সেই রীতিটাকে ভাঙতে চেষ্টা করছে। এছাড়াও আমরা সংখ্যায় ৭০ জন, যদি আমাদেরকে তাদের মারতেই হতো তাহলে আমরা অনেক আগেই এটি করতে পারতাম। এটি করতে আমাদের দশ মিনিটের বেশি সময় লাগবে না। কিন্তু আমরা এরকম কিছুই করতে চাই না বরং আমরা শান্তিতে বাস করতে চাই। তারা আমাদের সঙ্গে একই গ্রুপে আসছে না, কারণ তারা ভুল। তারা খারাপ কাজ করছে, এমনকি মাদকদ্রব্য, গাঁজা ইত্যাদি সেবন করছে, বিক্রি করছে”, অভিযোগ করলেন পিপাসা হালদার।

পিপাসা হালদার আরো বলেন, তারা বৈষম্য ও বর্ণবাদের শিকার হচ্ছেন। তিনি আরও বলেন যে শিলচরের লোকজন তাদের সঙ্গে এমন আচরণ করেন, যেটা তাদের খুব খারাপ লাগে।”এটা আমাদের দোষ নয় যে আমরা হিজড়া হয়েছি। আমরা এই পথ বেছে নিইনি, বরং এটা আমাদের ভাগ্য। আমাদেরও হৃদয়ে রয়েছে, মন রয়েছে। তাই যখন আমাদের মুখের উপর দরজা বন্ধ হয়ে যায় তখন আমরা অন্য সবার মত ব্যথা অনুভব করি, কষ্ট পাই। শিলচরের বাসিন্দাদের কাছে আমাদের অনুরোধ, আমাদের প্রতি সহানুভূতি দেখান এবং যখন অন্যের দরজায় আমরা দাঁড়াই তখন আমাদের কিছু পয়সা দিয়ে সাহায্য করুন। অন্যথায় আমাদের সবাইকে গুলি করে মেরে ফেলুন কিংবা বিষ দিয়ে প্রাণ নিয়ে নিন, আমরা মরে যাই”, হালদার দৃঢ় ভাবে বললেন।

তিনি জানান যে তারা এমন লোকের বাসায় যান যাদের ঘরে সদ্য কোন শিশুর জন্ম হয়েছে এবং তাদের কাছে ৫০০০ টাকা চান। একইভাবে তারা বিয়ের দিন বিয়ে বাড়িতেও যান টাকা চাইতে। বিয়ের আসরে তারা সাধারণত তাদের কাছে দশ হাজার টাকা চেয়ে থাকেন। আমরা কাউকে জোর করি না। আমরা জিজ্ঞাসা করি, আমরা বোঝানোর চেষ্টা করি কিংবা আমরা অনুরোধ করি। আমরা তাদের বলি যে তাদের অনেক টাকা রয়েছে, তাই তারা যদি আমাদের কিছু দান করেন তবে তাদের এমন কিছু ক্ষতি হবে না। যাইহোক কাউকে জোর করা বা ব্ল্যাকমেইল করার মত পথ আমরা কখনই অবলম্বন করি নি”, হালদার যোগ করেন।

 

শিলচরের বাসিন্দা বিধান পুরকায়স্থ তাদের বিরুদ্ধে গতকাল একটি এফআইআর দায়ের করার একদিন পর সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে তিনি বিষয়টি পরিষ্কার করতে চাইলেন। দাস কলোনির বাসিন্দা এই ব্যক্তি একটি এফআইআর দায়ের করে জানান যে একদল হিজড়া তার বাসভবনে ঢোকে এবং দুই হাজার টাকা দাবি করে। যখন তার স্ত্রী টাকা দিতে অস্বীকার করেন তখন তারা তার পাঁচ মাসের শিশুকে ছিনিয়ে নেয় এবং তাঁকে ব্ল্যাকমেইল করা শুরু করে। তারা ঘর থেকে ৩০০ টাকা দিতে বাধ্য হয়েছিলেন এবং তারপর হিজড়ারা হুঁশিয়ারি দিয়ে ছিল যে বাকি টাকা সংগ্রহ করতে তারা ফিরে আসবে এবং টাকা না দিলে তারা তাদের সন্তানকে অপহরণ করবে, এফআইআর-এ উল্লেখ করা হয়।

 

শুধু তাই নয় গত সপ্তাহে তারা শিলচরের আশ্রম রোডের এক বাসিন্দার ঘরে ভাঙচুর করে এবং এবং লুট করে। “এফআইআর কখনোই হিজড়াদের দুই গ্রুপের সমস্যা সমাধান করতে পারেনা। আদালত, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ, এমনকি মিডিয়াও পারবে না। আমরা আমাদের পথে আমাদের সমস্যার সমাধান করব”, বললেন হালদার।

যদিও তারা স্থানীয় হিজড়া বলে নিজেদের দাবি করছেন, কিন্তু আসল কথা হচ্ছে তারা সম্পূর্ণ একটি অন্য সংস্কৃতির মানুষ। শিলচরের জনগণের মতে, বিয়ের সময় কিংবা নবজাতকের জন্মের পর এভাবে টাকা সংগ্রহের প্রবণতা শিলচরে পরিচিত নয়। এটি পণের একটি অংশ, এমনকি এটা বরাক উপত্যকার সংস্কৃতির অন্তর্গত নয়। অম্বিকাপট্টি, তারাপুরের অনেক বাসিন্দা বলেন যে যখন তারা এসে দরজায় কড়া নাড়ে তখন তারা খুব অস্বস্তি বোধ করেন।

বিস্ময়কর ভাবে পুলিশ এই বেআইনি কার্যকলাপ সহ্য করছে। হিজড়ারা পুলিশ কনস্টেবলের উপস্থিতিতে দিনের আলোয় একটি বাড়িতে ভাঙচুর এবং লুটপাট করে বলে অভিযোগ।তারা কাছাড় পুলিশের ডিএসপি এবং অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বাধা দেওয়া, হুমকি এবং গালিগালাজের মত কাজ করেছিলো, তবুও পুলিশ দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে। প্রকৃতপক্ষে পুলিশ যখন লুটপাটের সমস্ত জিনিস বোঝাই গাড়িকে থামিয়ে দেয় এবং ড্রাইভারকে থানায় যেতে বলে, তখনও হিজড়ারা তা করতে দেয়নি। জিনিসগুলো লুট করে এখনো কারোর বাড়িতে রাখা রয়েছে। সাধারণ মানুষ বাধ্য হয়ে থানায় গিয়ে এফআইআর দায়ের করেছেন। এখন পুলিশ আইন অনুযায়ী কোনও ব্যবস্থা নেয় কিনা তা দেখার বিষয

 

https://youtu.be/kDNCp89RKOA

Comments are closed.