Also read in

পঞ্চমীতে শিলচরে মানুষের ঢল, এস ও পি-কে বুড়ো আংঙুল দেখিয়ে সর্বত্র কেনাকাটার ধুম, ট্রাফিক জ্যামে নাকাল শহরবাসী

দু’বছর করোনার জেরে ভেস্তে গিয়েছিল যাবতীয় প্লেনিং। মহামারি ভাইরাসের আতঙ্ক একেবারে মাটি করে দিয়েছিল দুর্গা পুজোর আনন্দ। বেঁচে থাকাই যেখানে দায় হয়ে উঠেছিল সেখানে পুজোর আনন্দে মেতে ওঠার চিন্তা করাও যেন ছিল কাল্পনিক। তবে এবার পরিস্থিতির অনেকটাই উন্নতি হয়েছে। যদিও করোনা নামক রাক্ষস এখনো আমাদের মধ্যে রয়েছে। পুরোপুরি শেষ হয়ে যায়নি। তবে ভালো কথা হচ্ছে গোটা দেশে দৈনিক সংক্রমণের হার এখন নিম্নমুখী। আর এটাই সবাইকে একেবারে বেপরোয়া করে তুলেছে। ঠিক এমনই চিত্র দেখা গেল রবিবার পঞ্চমীতে। কোথায় এস ও পি? কই বিধি নিষেধ?

পঞ্চমীর দিন সকাল থেকেই পুজোর আনন্দে মাতোয়ারা ছিল শহর শিলচর। শহরের প্রতিটি রাস্তায় তীব্র যানজটে নাকাল হয়েছেন সাধারণ মানুষ। এর মধ্যে ছিল প্রচন্ড গরম। তবে পুজো বলে কথা, সেটাও আবার দু’বছর পর! তাই এবার যেন করোনা আতঙ্কের খোলস ছেড়ে বেরিয়ে এসেছেন সবাই। পঞ্চমীতে পুজোর রিহার্সাল হয়ে গেছে। এদিন সকাল ১১ থেকেই শহরের ক্লাব রোড থেকে সেন্ট্রাল রোড, নাজিরপট্টি, চার্চ রোড, তারাপুর, প্রেমতলা এবং হাসপাতাল রোডে ট্রাফিক জ্যাম লেগে যায়। ‌ রবিবার থাকায় গ্রাম কাছাড় থেকেও মানুষ পুজোর বাজার করতে শহরে এসেছিলেন। এর ফলে সেন্ট্রাল রোড, নাজিরপট্টি, প্রেমতলা এবং ক্লাব রোডে তিল ধারণের জায়গা ছিল না। সর্বত্র ছিল মানুষের ঢল। শহরের প্রতিটি শপিং মল থেকে শুরু করে ছোট বড় সব দোকানেই ছিল উপচে পড়া ভিড়। গত দু’বছর মহামারী ভাইরাস এর জেরে ব্যবসায়ীদের বিরাট ক্ষতি হয়েছে। এবার দুর্গা পূজা উপলক্ষে কিছুটা হলেও লাভের মুখ দেখছেন তারা।

সন্ধ্যার পর তো যেন শহর শিলচরে জনজোয়ার এসেছিল। এর মধ্যে শহরের বেশ কয়েকটি পুজো মণ্ডপে ছিল উদ্বোধনী। শহরের বেশ কয়েকটি সার্বজনীন দুর্গাপূজার সন্ধ্যার পর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়ে গেছে। আবার অনেক প্যান্ডেলের কাজ এখনো শেষ হয়নি। প্রতিমার কাজও একটু বাকি রয়েছে। তাই সেগুলিতে চলছে শেষ তুলির টান। করোনাকালের আগে পঞ্চমী রাতে অনেকেই নিজেদের পরিবার নিয়ে মন্ডপ দর্শনে বের হতেন। এমনকি উধারবন্দের কালিবাড়ি রোড এর বিগ বাজেটের পুজো দেখতে যেতেন। তবে রাত দশটা থেকে কারফিউ থাকায় এখন এটা সম্ভব হচ্ছে না।

তবে তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো, একটা মুদ্রার যেমন এপিঠ-ওপিঠ থাকে, ঠিক সেভাবেই রবিবারের এই পরিস্থিতিরও কিন্তু ইতিবাচক ও নেতিবাচক দুটো দিক রয়েছে। ইতিবাচক দিকটা হচ্ছে, অনেকদিন পর মানুষের মুখে হাসি ফুটেছে। সবাই শারদ উৎসবের আনন্দে গা ভাসাচ্ছেন।পুজো নিয়ে নানা প্লেনিং করছেন। পরিবারের জন্য কেনাকাটা করছেন। অনেকদিন পর সাধারণ মানুষ এই সুযোগটা পেয়েছেন। সবদিকে উৎসবমুখর পরিবেশ। এর ফলে আর্থিক সংকটে থাকা ব্যবসায়ীদের মুখে কিছুটা হলেও হাসি ফুটেছে। তবে এই সব বিষয়ই কিন্তু আবেগিক।

এবার আসা যাক নেতিবাচক দিকটাতে। করোনা আমাদের কি ক্ষতি করেছে, সেটা নতুন করে বলার দরকার নেই। সবচেয়ে খারাপ বিষয়টা হলো এই মহামারী ভাইরাস কিন্তু এখনো আমাদের মধ্যে রয়েছে। একটু দুর্বল হয়েছে ঠিক, তবে শেষ হয়ে যায়নি। আর পঞ্চমীর দিন শহর শিলচরের যে চিত্রটা ফুটে উঠেছে সেটা কিন্তু খুবই উদ্বেগজনক। ‌ মহালয়ার সকালেই এর একটা আভাস মিলেছিল। এবার সেই আভাস বাস্তবে পরিণত হচ্ছে। আমাদের দেশের বিজ্ঞানীরা পই পই করে বলছেন, উৎসবের মরশুমে সাবধানতা অবলম্বন না করলে করোনার তৃতীয় ঢেউ কেউ আটকাতে পারবেনা। আর তৃতীয় ঢেউ (থার্ড ওয়েভ) এলে পরিস্থিতি হবে আরও ভয়ঙ্কর। কিন্তু মনে হচ্ছে, পুজোর আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে সবাই এই সতর্কবার্তা বেমালুম ভুলে গেছেন।

শপিং মল থেকে শুরু করে ছোট বড় সব দোকানেই রবিবার ছিল উপচে পড়া ভিড়। তবে কোনো একটা স্থানেও ছিলনা কোনও নিয়ম কানুন। আজ শহরে অধিকাংশই ছিলেন মাস্কহীন। সরকারের পক্ষ থেকে বারবার সতর্কবার্তা দেওয়া হচ্ছে, থার্ড ওয়েভে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকি রয়েছে ছোট বাচ্চাদের। তবে আজ দেখা গেল শহর শিলচরে অভিভাবকরা দিব্যি নিজেদের ছোট বাচ্চাদের কেনাকাটায় সঙ্গে নিয়ে এসেছেন। অধিকাংশর মুখেই মাস্ক নেই। সরকারের জারি করা এস ও পির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে সবকটা দোকানের বাইরে লেখা ছিল, ‘নো মাস্ক, নো এন্ট্রি’। কিন্তু সেই দোকানের কর্মচারীদের মুখেই ছিল না মাস্ক। এমন চিত্র ও দেখা গেছে। শহরের বড় বড় বেশ কয়েকটি দোকানের প্রবেশ পথেই রাখা ছিল সেনিটাইজার। কিন্তু এটাও ছিল শুধু ‘নাম কা ওয়াস্তে’। দিন থেকে সন্ধ্যা, সর্বত্র একই চিত্র ছিল।

শহর শিলচরের একটা ট্রেন্ড রয়েছে। সেই অনুসারে ষষ্ঠীর দিন ও কিন্তু মানুষ কেনাকাটা করেন। তাই সোমবার ষষ্ঠীর দিনে ও পরিস্থিতি সম্ভবত একই থাকছে। এবার প্রশ্ন হচ্ছে, পঞ্চমীর দিনই যদি এমন অবস্থা হয়, তাহলে সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমীতে পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে, সেটা সহজেই বোঝা যাচ্ছে।

Comments are closed.