Also read in

শিলচর ডি এস এর ইতিহাসে কালো অধ্যায়, প্রধান গেটের সামনে চলল ধরনা, কাউকেই প্রবেশ করতে দিল না বিক্ষোভকারীরা, মুলতবি বিশেষ সাধারণ সভা

 শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থার ইতিহাসে এক কালো অধ্যায় হিসেবে উল্লেখ থাকবে রবিবার দিনটি। জেলার গৌরবময় ক্রীড়া ইতিহাসকে লজ্জিত করল এদিনের ঘটনাবলী।

সংস্থার বর্ণময় ইতিহাসে প্রথমবার প্রধান গেটের সামনে দেওয়া হল ধর্না। চলল বিক্ষোভ। এর ফলে সংস্থার কোনো সদস্যই ভিতরে প্রবেশ করতে পারলেন না। ‘ডি এস এ অবৈধ কমিটি মুর্দাবাদ,’ ‘ডি এস এ অবৈধ কমিটি নিপাত যাক’ স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠল গোটা এলাকা। সংস্থার সচিব বিজেন্দ্র প্রসাদ সিং এসে বিক্ষোভকারীদের অনেক বোঝানোর চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হন। উল্টো তাকে কটূক্তি করেন বিক্ষোভকারীরা। প্রশ্ন তুলেন তার বৈধতা নিয়ে। দু’পক্ষের মধ্যে তীব্র বাক্যবিনিময় হয়। তবে সমস্যার সমাধান আর হয়নি। এভাবেই টানটান উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে দেড় ঘন্টা অতিক্রম হবার পরও কোনো সমাধান বেরিয়ে আসেনি। ফলে বেলা ১২টায় বিক্ষোভকারীদের ঠিক উল্টোদিকে দাঁড়িয়ে উপস্থিত সদস্যদের সামনে এদিনের বিশেষ সাধারণ সভা মুলতবি করার সিদ্ধান্ত নেন সভাপতি বাবুল হোড় ও সচিব বিজেন্দ্র। দুজনেই জানিয়েদেন পরবর্তীতে একটা বৈঠক ডেকে বিশেষ সাধারণ সভার নতুন দিনক্ষণ জানিয়ে দেওয়া হবে। এই ঘোষণার পরই সংস্থার সচিব স্লোগান দেন ‘লং লিভ শিলচর ডি এস এ’। তার সুরে সুর মেলান উপস্থিত থাকা সংস্থার সদস্যরা ও। উল্টোদিক থেকে স্লোগান দিতে থাকেন বিক্ষোভকারীরাও। এরপর ডি এস এ সদস্যদের মিষ্টিমুখ করান সচিব এবং সভাপতি। সেইসঙ্গে বিজেন্দ্রর মুখে মিষ্টি তুলে দেন সভাপতি বাবুল। একইভাবে সভাপতির মুখেও মিষ্টি তুলে দেন সচিব।
বিশেষ সাধারণ সভা নিয়ে পরিস্থিতি যে উত্তপ্ত হয়ে রয়েছে, এর আভাস ছিল। তবে পরিস্থিতি যে এতটাই বাজে রূপ নেবে সেটা হয়তো কেউই কল্পনা করতে পারেননি। ‌ এদিন সকাল ১১ টায় শুরু হবার কথা ছিল ডি এস এর বিশেষ সাধারণ সভা। তবে তার আগেই সকাল ১০.২৫ থেকে সংস্থার প্রধান গেটের সামনে ধর্না দেখাতে শুরু করে একদল বিক্ষোভকারী। প্রথমে তারা ডি এস এ তে প্রবেশ করতে চান। ‌ তবে সংস্থার চতুর্থ শ্রেণীর এক কর্মচারী তাদের আটকে দেন। সংস্থার সেই কর্মচারীর ভাষ্য ছিল, ভেতরে প্রবেশ করতে হলে আপনাদের আই কার্ড দেখাতে হবে। ব্যাস, সে থেকেই শুরু। বিক্ষোভকারীরা জানিয়ে দেন, যেহেতু গেট খুলে তাদের প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না তাই তারাও বাইরে থেকে কাউকেই ভেতরে প্রবেশ করতে দেবেন না। ‌ গেটের সামনে বসেই ধর্না দেবেন। তাদের দাবি ছিল, সম্প্রতি ডি এস এ যেভাবে কুড়িটি ক্লাব ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সদস্যপদ বাতিল করেছে, সেটা কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। ‌ সম্পূর্ণ অনৈতিকভাবে এই কাজ করেছে সংস্থার বর্তমান কমিটি। ‌ তাদের যুক্তি ছিল, অসম অলিম্পিক সংস্থা তো ডি এস এর এই কমিটিকেই স্বীকৃতি দেয়নি। এদের অবৈধ ঘোষণা করেছে। ‌ তাহলে তারা আবার কিভাবে এতটা মর্যাদাসম্পন্ন স্কুল-কলেজের সদস্যপদ বাতিল করতে পারে? এজন্যই তাদের এই বিক্ষোভ প্রদর্শন। বিক্ষোভকারীদের দাবি মতে, তারা সবাই সদস্যপদ বাতিল হওয়া স্কুল ও কলেজ গুলির প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রী।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, বিক্ষোভকারীরা নিজেদের জনসাধারণের প্রতিনিধি তথা সদস্য পদ বাতিল হওয়া স্কুল কলেজের প্রাক্তন ছাত্র ছাত্রী বলে দাবি করলেও তারা সবাই কিন্তু ভারতীয় জনতা পার্টির সদস্য। ভারতীয় জনতা যুব মোর্চার সদস্য। সংস্থার ভেতরে প্রবেশ করার অনুমতি না পাওয়ার পরই তারা গেটের সামনে হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে ধর্নায় বসে পড়েন তারা। সংস্থার বর্তমান কমিটির বিরুদ্ধে একেরপর এক স্লোগানে মুখরিত করে তোলেন গোটা এলাকা। বিক্ষোভকারীদের মধ্যে থাকা গুরুচরণ কলেজের প্রাক্তন ছাত্র তথা ভারতীয় জনতা যুব মোর্চার কাছাড় জেলা কমিটির সভাপতি অমিতেশ চক্রবর্তী বলেন, ‘এই মুহূর্তে শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থায় প্রচুর অনৈতিক কাজ হচ্ছে। ‌ দু’বছর আগে সংস্থার নির্বাচনে কারচুপি করা হয়েছিল। এর বিরুদ্ধে সাতজন সদস্য অসম অলিম্পিক সংস্থার কাছে অভিযোগ করেছিলেন। তারপর অসম অলিম্পিক ডি এস এর এই কমিটিকে অবৈধ ঘোষণা করে। অথচ সম্প্রতি এই অবৈধ কমিটি জেলার স্বনামধন্য স্কুল কলেজ গুলির সদস্যপদ বাতিল করেছে। যাদের নিজেদের ওই বৈধতা নেই তারা আবার অন্যদের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। এই অনৈতিক কাজের বিরুদ্ধে আমরা আজ স্কুল কলেজের প্রাক্তন ছাত্র ছাত্রীরা একত্রিত হয়েছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থার যুক্তি হচ্ছে সদস্যপদ বাতিল করা স্কুল কলেজ গুলি নন পারফর্মিং ছিল। এনিয়ে স্কুল কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। তারা আমাদের জানিয়েছেন ডি এস এর পক্ষ থেকে শুধু ভোট এলেই তাদের ডাকা হয়। ‌ এছাড়া কোনও ইভেন্টে ডাকা হয় না। আসলে এখানে কোনো ইভেন্টেই হয় না। খেলাধুলার নামে শিলচর ডি এস এ তে এখন শুধু রাজনীতি চলছে। আমরা এখান থেকে জোরালো দাবি জানাচ্ছি, যেসব স্কুল-কলেজের সদস্য পদ বাতিল করা হয়েছে, শীঘ্রই তাদের সদস্য পদ ফিরিয়ে দেওয়া হোক। না হলে আমাদের এই আন্দোলন আরো তীব্র হবে।’
বিশ্বের সাধারণ সভা মুলতবি ঘোষণা করার পর সংস্থার সদস্যরা একে একে বাড়ি ফেরার পথ ধরেন। তবে তখনোও বিক্ষোভকারীদের ধর্না চলছিল। অবশেষে ১২:৩০ নাগাদ বিক্ষোভকারীরা ধর্না প্রদর্শন শেষ করেন। ততক্ষণে অবশ্য জেলার ক্রীড়া জগতে এক লজ্জাজনক ইতিহাস লেখা হয়ে গিয়েছিল। ‌ এখন দেখার বিষয় শিলচর ডি এস এ নিয়ে সদস্য পদ বাতিল হওয়া স্কুল কলেজের ‘প্রাক্তনী’ দের এই আন্দোলনের জের আরো কত দূর এগোয়।

Comments are closed.