Also read in

স্লোগান উঠলো, 'চলো ডি এস এ দখল করি, কাছাড় ক্লাব দখল করি,' তাহলে আসল খেলাটা কি রাজনৈতিক? খেলাধুলা আসল নয়, ক্ষমতা দখলই শেষ কথা?

টানা দুটি টার্ম নিষ্ক্রিয় থাকা কুড়িটি ক্লাব ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সদস্যপদ সম্প্রতি বাতিল করেছে শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থা। ‌ডি এস এর গভর্নিং বডির বৈঠকে সকল সদস্যই সেটাকে অনুমোদনও দিয়েছেন। সেইসঙ্গে জিবি বৈঠকে সংস্থার সংবিধানেও বেশ কয়েকটি সংশোধনী আনা হয়েছিল। ‌ সেগুলি অনুমোদনের জন্য ডাকা হয়েছিল রবিবারের বিশেষ সাধারণ সভা। এই সভাতে মূলত তিনটি এজেন্ডা ছিল। এক, গভর্নিং বোর্ডের বৈঠকে সংবিধান সংশোধনী নিয়ে যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে সেটার অনুমোদন। দুই, সংস্থার নতুন লোগো ঠিক করা। এবং তিন, জিবি বৈঠকে যেসব লাইফ মেম্বারদের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল সেটাতে অনুমোদন দেওয়া। এর বাইরে কোনো এজেন্ডাই ছিল না। তারপরও সংস্থার প্রধান গেটের বাইরে চলল তুমুল বিক্ষোভ এবং স্লোগান বাজি।

সংস্থার সচিব বিজেন্দ্র প্রসাদ সিং আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন, যাদের সদস্যপদ বাতিল করা হয়েছে তাদের এজন্য সময় ও দেওয়া হয়েছে। কেন এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্থা, সেই যুক্তি তুলে ধরা হয়েছে। তারপরও যদি কারোর কোনো অভিযোগ থাকে, তাহলে সেই ক্লাব অথবা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংস্থায় আবেদন করতে পারে। এতকিছুর পরও তাহলে কেন এমন বিক্ষোভ প্রদর্শন? যারা সংস্থার গেট বন্ধ করে ধর্নায় বসে ছিলেন তাদের মধ্যে কিন্তু একজন ও সদস্য পদ বাতিল হওয়া স্কুল বা কলেজের অধ্যক্ষ বা প্রিন্সিপাল ছিলেন না। যারা বিক্ষোভ করছিলেন তারা সবাই ছিলেন ভারতীয় জনতা পার্টির সদস্য। যদিও তাদের যুক্তি ছিল, তারা সবাই সদস্যপদ বাতিল হওয়া স্কুল ও কলেজের প্রাক্তনী। আর যার বিরুদ্ধে তাদের এই বিক্ষোভ, সেই বিজেন্দ্র প্রসাদ সিংও কিন্তু ভারতীয় জনতা পার্টির সদস্য। তিনি পার্টি’র মালুগ্রাম তারাপুর মন্ডল এর সভাপতি। অর্থাৎ এদিনের লড়াইটা ছিল বিজেপি বনাম বিজেপি। তবে এই লড়াইয়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে স্থানীয় ক্রীড়াজগতের।

এদিন যারা বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন তারা স্লোগান দিচ্ছিলেন, ‘ডিএসএর অবৈধ কমিটি নিপাত যাক’, ‘ডি এস এর বর্তমান কমিটি মুর্দাবাদ’। এখানেই শেষ নয়, স্লোগান দেওয়া হয় ‘দারু হাটাও, ডি এস এ বাঁচাও,’ ‘চলো ডিএসএ দখল করি,’ ‘চলো কাছাড় ক্লাব দখল করি’।

বিক্ষোভকারীরা যতই নিজেদের স্কুল কলেজের প্রাক্তনী বলে দাবি করুন না কেন, সংস্থার সচিবের বিরুদ্ধে তাদের লড়াইটা কিন্তু ভারতীয় জনতা পার্টির অন্তর্কোন্দল কেই প্রকাশ্যে নিয়ে এসেছে। না হলে দলেরই এক সদস্য যিনি শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থার শীর্ষ পদে রয়েছেন তার বিরুদ্ধে এভাবে রাস্তায় নামতে হলো কেন তাদের? বিষয়টা তো অনেক আগেই বন্ধ রুমের ভেতরে সেরে ফেলতে পারতেন তারা। সম্প্রতি শিলচরের বিধায়ক দীপায়ন চক্রবর্তী ও সংস্থার বর্তমান কর্ম সমিতির বিরুদ্ধে ক্ষোভ ব্যক্ত করেছিলেন। কেন কুড়িটি ক্লাব ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সদস্য পদ বাতিল করা হয়েছিল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। অথচ ২০১৯ সালে শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থার দ্বিবার্ষিক সাধারণ সভায় ভারতীয় জনতা পার্টির কয়েকজন সদস্য কিন্তু সংস্থার বিরুদ্ধে সংবিধান অবমাননার অভিযোগ তুলেছিলেন। তাহলে আজ যখন শিলচর ডি এস এ অসম অলিম্পিক সংস্থার নির্দেশ মেনে শুদ্ধিকরণ প্রক্রিয়ায় হাত দিয়েছে তাহলে এই বিক্ষোভ কেন?

উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, রবিবারের এই ঘটনা শুধু ভারতীয় জনতা পার্টি নয়, শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থার ভেতরে চলা জঘন্য রাজনীতিকেও প্রকাশ্যে এনে দিল। এদিন যখন বিক্ষোভকারীদের শান্ত করার চেষ্টা করছিলেন বিজেন্দ্র তখন পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন সংস্থার তিন পদাধিকারী অজয় চক্রবর্তী, নিলু পাল এবং সঞ্জু রায়। তারা কিন্তু একটি বারের জন্য বিজেন্দ্রর পাশে এসে দাঁড়াননি। সংস্থার সভাপতি বাবুল হোড় ও সেই সময় ছিলেন না। তবে যখন এলেন, তাকেও কটূক্তির মুখে পড়তে হলো। স্লোগান উঠলো, ‘দারু হাটাও, ডি এস এ বাঁচাও,’! এরপর অবশ্য সংস্থার সভাপতি রুখে দাঁড়ান। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ কর্মী কে কড়া ভাষায় বলেন, ‘আপনারা এখানে কিসের জন্য এসেছেন? ওরা গেট বন্ধ করে রেখেছে। আপনারা সেটা খুলছেন না কেন?’ সেই নিরাপত্তারক্ষীর দিকে কড়া ভাষায় প্রশ্ন ছুড়ে দেন সংস্থার ফুটবল সচিব বিকাশ দাস ও। তিনি বলেন, ‘ভেতরে আমাদের মহিলা ফুটবলার রয়েছে। যারা প্রচন্ড আতঙ্কে রয়েছে। ওরা ক্ষুধার্ত। সকাল থেকে কিছু খাইনি। তাই ওদের যদি কিছু হয় এর দায়ভার কিন্তু প্রশাসনকে নিতে হবে।’ তখন সংস্থার সদস্যরা সভাপতি ও ফুটবল সচিবকে শান্ত করেন।

সেদিন যা ঘটল তা ডি এস এর ইতিহাসে আর কখনো ঘটেনি। অতীতের দিকপাল খেলোয়াড়রা যারা জেলার নাম সুনাম করেছেন, গোটা উপত্যকার নাম সুনাম করেছেন তাদের ও সংস্থায় ঢুকতে দেওয়া হলো না। সংস্থার চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী একবার ভেতর থেকে গেট খোলার চেষ্টা করেছিলেন। ‌ এতে বিক্ষোভকারীরা আরো উত্তেজিত হয়ে পড়েন। প্রধান গেটে ঠেলা ধাক্কা করেন। ফলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।

একদিকে সংস্থার গেটের বাইরে চলল ধর্না, উল্টোদিকে, হোটেল কল্পতরুর নিচে দাঁড়িয়ে রইলেন সংস্থার সদস্য সহ লাইফ মেম্বাররা। আর মাঝখানের রাস্তা দিয়ে সবকিছু প্রত্যক্ষ করে গেলেন সাধারণ নাগরিকরা। ‌ তাহলে কি বার্তা গেল তাদের কাছে? বেশ কয়েকজন তো এসে প্রশ্ন ও করলেন, ‘দাদা কি হয়েছে, শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থার গেটের সামনে এমন পরিস্থিতি কেন?’ এতে কি কলঙ্কিত হল না খেলার মাঠ?

Comments are closed.