এবার পথে নামলেন নাগরিকরা, ভুল চিকিৎসায় প্রসূতির মৃত্যুতে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকপত্র
এবার শিলচরের পথে নামলেন নাগরিকরা। নাইটেঙ্গেল হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় আট মাসের গর্ভবতী সুমিত্রা পাল এর মৃত্যুতে বিক্ষোভ জানালেন তারা। শহরের ক্ষুদিরাম বসুর মূর্তির পাদদেশে দু’ঘণ্টা বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন নাগরিকরা। তারপর কাছাড়ের জেলাশাসক এর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদির উদ্দেশ্যে স্মারকপত্র প্রদান করা হয়। এই দিনের বিক্ষোভ মিছিলে ছিল সুমিত্রা পালের সাত বছরের ছেলে আয়ুষ পাল ও। তার হাত দিয়েই স্মারকপত্র তুলে দেওয়া হয়। এই প্রতিবাদী মিছিলে অংশ নেন সমাজের বিভিন্ন স্তরের নাগরিকরা। ছিলেন মহিলারাও।
উল্লেখ্য, গত ৪ নভেম্বর শিলচরের সুমিত্রা পাল নামের এক প্রসূতির মৃত্যু কে কেন্দ্র করে নাইটেঙ্গেল হাসপাতালে ব্যাপক ভাঙচুর করেন উত্তেজিত জনতা। চলে সড়ক অবরোধ ও। অভিযোগ উঠে, চিকিৎসক অরুন পাল চৌধুরীর গাফিলতিতেই মৃত্যু হয়েছে সুমিত্রা পাল এর। এ নিয়ে তীব্র উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এই ঘটনায় ইতিমধ্যে মামলা ও পাল্টা মামলা দায়ের করা হয়েছে শিলচর সদর থানায়। দু’দিন আগেই নাইটেঙ্গেল হাসপাতালে ভাঙচুরের ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে ২৪ ঘন্টার জন্য শহরের সমস্ত বেসরকারি হাসপাতালের ওপিডি বিভাগ বন্ধ ছিল। সেইসঙ্গে জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ দেখান চিকিৎসক, স্বাস্থ্য কর্মী এবং বেসরকারি হাসপাতালের স্বত্বাধিকারী। তাদের দাবি ছিল, যদি চিকিৎসকের গাফিলতিতে প্রসূতির মৃত্যু হয়ে থাকে তাহলে আইনের মাধ্যমে এর ন্যায় বিচার হবে। তবে যারা হাসপাতালে ভাঙচুর চালিয়েছে সেইসব দুষ্কৃতীদের ও শাস্তি দিতে হবে।
এবার নাইটেঙ্গেল কাণ্ডে রাস্তায় নামলেন নাগরিকরাও। বৃহস্পতিবার সুমিত্রা পালের মৃত্যুর সুবিচার চেয়ে পথে নামেন শতাধিক মানুষ। জেলা শাসকের হাতে যে স্মারকপত্র তুলে দেওয়া হয়েছে তাতে উল্লেখ করা হয়েছে, কাছাড় জেলায় নার্সিংহোম, ডিসপেনসারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলো নিয়ন্ত্রণহীন ভাবে চলছে। সেইসঙ্গে চিকিৎসার গাফিলতিতে মৃত্যু হওয়া সুমিত্রা পাল এর জন্য ন্যায় বিচার চাওয়া হয়েছে। দাবি জানানো হয়েছে চিকিৎসক অরুন পাল চৌধুরী এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার।
বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেওয়া অধিকাংশই দাবি করেন, সুমিত্রা পাল এর মৃত্যুর জন্য যারা দায়ী তাদের কঠোর শাস্তি প্রদান করতে হবে। অনেকেই অভিযোগ করেন, কাছাড়ের নার্সিংহোম ও হাসপাতাল গুলোতে রোগীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। এটা যেন এক রুটিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ দিনের মিছিলে সুমিত্রা পাল এর আত্মীয় স্বজনরা অভিযোগ করেন, মৃত্যুর ১০ মিনিট আগেও স্বাভাবিক ছিলেন সুমিত্রা। সেদিন ওই তাকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়ার কথা ছিল। তবে ছেড়ে দেওয়ার আগে তাকে একটি স্যালাইন দেওয়া হয়। সেই স্যালাইন দেওয়ার ১০ মিনিটের মধ্যেই মৃত্যু হয় সুমিত্রার। এ নিয়ে তদন্ত হওয়া উচিত। এই ঘটনার জন্য কে দায়ী? কেন একজন স্বাভাবিক মহিলাকে একটা স্যালাইন দেওয়ার পর ১০ মিনিটের মধ্যেই মৃত্যুবরণ করতে হলো? এমন প্রশ্নও তোলেন মৃতের আত্মীয়-স্বজনরা। তারা দাবি করেন এ নিয়ে সঠিক তদন্ত না হলে চিকিৎসায় গাফিলতির বিষয়টা কোনোদিন সামনে আসবে না। আর এমনটা হলে সুমিত্রার মত আরো অনেকেই এমন গাফিলতির শিকার হতে হবে।
হাসপাতালে ভাঙচুর প্রসঙ্গে সুমিত্রার পরিজনেরা জানান, এমন ঘটনার জন্য দায়ী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সুমিত্রার আকস্মিক মৃত্যুতে যখন পরিজনরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে জবাবদিহি করেন তখন তাদের দমন করতে বলপূর্বক ব্যবস্থা নেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এতেই ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটে। বিক্ষোভে অংশ নেওয়া প্রয়াত সুমিত্রার পরিজনেরা জানান, হাসপাতালের সিসিটিভি ক্যামেরায় সব কিছু রেকর্ড রয়েছে। তাই ঘটনার সঠিক তদন্ত হলে আসল সত্য বেরিয়ে আসবে।
Comments are closed.