নাগ নাহা লেনে বেআইনি নির্মাণ: "বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে," বলছেন জে আর লালসিম; এদিকে কাজ চলছে পূর্ণোদ্যমে
শিলচরের নাগ নাহা লেনের একটি বহুতল ভবন শশধর ভিলা এই সত্যের প্রমাণ যে, শিলচর পৌরসভা হয় একটি নখদন্তবিহীন অদক্ষ সংস্থা বা এটির নির্দিষ্ট কিছু বেআইনি প্রকল্পে আগ্রহ রয়েছে। গ্রাউন্ড ফ্লোরের সাথে আরও দুটি তালা নির্মাণের অনুমতি নিয়ে ভবনটি এখন একটি চারতলা অ্যাপার্টমেন্ট। শিলচর শহরের কেন্দ্রস্থলে নাগ নাহা লেনের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানে এমনটা ঘটে চলেছে।
ডঃ শঙ্কর ভট্টাচার্যের স্ত্রী মানসী ভট্টাচার্যের মালিকানাধীন, ভবনটিতে মূলত একটি নিচতলা, একটি প্রথম তলা এবং একটি দ্বিতীয় তলা ছিল। শিলচর মিউনিসিপ্যালিটি বোর্ডের (এসএমবি) কাছে থাকা ড্রয়িং অনুসারে, তৃতীয় তলাটিতে আসাম টাইপের ছাদ তৈরি করা যেতে পারে। মানসী ভট্টাচার্য প্রথম তলাটি গোপাল কৃষ্ণ চক্রবর্তীর কাছে বিক্রি করেছিলেন, দ্বিতীয় তলাটি মানিক চাঁদ লুনিয়ার কাছে বিক্রি করেছিলেন এবং উভয় মালিকই তাদের সম্পত্তিতে বহাল তবিয়তে আছেন।
গত আগস্টে তারা অনিল গোলেচা দ্বারা নতুন করে নির্মাণ কাজ শুরু করতে দেখেন। মানিক লুনিয়া বলেন, “আমাদের কাছ থেকে কোনো এনওসি না নিয়ে বা এমনকি সৌজন্য মুলক ভাবে তথ্যের আদান-প্রদান না করে মানসী ভট্টাচার্য সম্পত্তির কিছু অংশ বিক্রি করেছিলেন। নতুন মালিক তারপর জলের ট্যাঙ্ক, সিঁড়ি এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলি ভেঙে ফেলে যদি ও আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে এই গুলো ব্যবহার করি,” দ্বিতীয় তলার মালিক মানিক লুনিয়া জানান । তিনি আরও বলেন যে, নির্মাণের একেবারে শুরুতে গোপাল কৃষ্ণ চক্রবর্তীর সাথে তারা শিলচর পুরসভা, জেলা প্রশাসন এবং আরও অনেক স্থানে অভিযোগ জমা দিয়েছিলেন। “যদিও শিলচর মিউনিসিপ্যালিটি বোর্ড (এসএমবি) নোটিশ পাঠিয়েছিল, এটিকে পাত্তা না দিয়ে নির্মাণ কাজ চলতে থাকে। আমরা আবার বোর্ডকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছিলাম যে নোটিশ সত্ত্বেও কাজ চলছে; বোর্ড কোনও ব্যবস্থা নেয়নি,” লুনিয়া বলেন৷
৭ নভেম্বর, ২০২১-এ, বরাক বুলেটিন একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে যে, কীভাবে কোনও অনুমতি ছাড়াই দুটি ফ্লোর তৈরি করা হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে, মানসী ভট্টাচার্য ৪ অক্টোবর অনুমতির জন্য আবেদন করেছিলেন। এই আবেদন পেশের আগেই মেঝেগুলি প্রস্তুত হয়ে গিয়েছিল। যদি সূত্রে পাওয়া তথ্য বিশ্বাস করা হয়, তবে ঘটনা হচ্ছে অনিল গোলেচা, যিনি কাগজে কলমে নিচুতলার মালিক, ইতিমধ্যেই বেআইনিভাবে নবনির্মিত মেঝের একটি ইউনিট বিক্রি ও করেছেন।
প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর, শিলচর পৌরসভা বোর্ড বরাক বুলেটিনকে নিশ্চিত করেছে যে, এই নির্মাণের অনুমতি দেয়া হয়নি। “আমরা প্রকৌশলী এবং আইনজীবীদের কাছ থেকে মতামত চেয়েছি। আমরা সংশ্লিষ্ট পক্ষের প্রতিক্রিয়ার জন্য অপেক্ষা করছি,” প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হওয়ার পরে পৌর বোর্ড বলেছিল।
তবে সবচেয়ে আশ্চর্যজনক ঘটনা হলো, এত সবের পরেও এই বেআইনি কাজটি এখনও অব্যাহত রয়েছে। শিলচর মিউনিসিপ্যালিটি বোর্ডের এক্সিকিউটিভ অফিসার জেসিকা রোজ লালসিমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “এটা আমার নজরে আসার পর, আমি অনিল গোলেচাকে আমাদের আইনজীবীদের কাছ থেকে আইনি মতামত না পাওয়া পর্যন্ত কাজ বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছিলাম৷ সেই অনুযায়ী, আমাকে জানানো হয়েছে যে কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে,” লালসিম বলেন।
এটা স্পষ্ট যে, হয় পুরসভার কর্মীরা তাকে মিথ্যা বলেছে বা তিনি কখনই কাজ বন্ধ করার নির্দেশ দেননি কারণ নির্মাণ কাজ পুর্নোদ্দমে চলছে। মানিক লুনিয়া বলেন, “একদিনের জন্যও কাজ বন্ধ ছিল না। আমরা এসএমবিকে জানিয়েছিলাম যে কাজ চলছে কিন্তু আমাদের আপত্তি উপেক্ষা করা হয়েছে।”
২০২১ সালের আগস্টের প্রথম দিক থেকে আমরা হঠাৎ দেখি যে, ৩য় তলার আরসিসি ট্যাঙ্ক, আরসিসি ফিল্টার এবং সিঁড়ি আমাদেরকে কোনো প্রকার অবহিত না করেই ভেঙে ফেলা হচ্ছে। আমরা অবিলম্বে ১৯ আগস্ট, ২০২১ তারিখে এসএমবিকে জানিয়েছিলাম। এসএমবি ১৩ই সেপ্টেম্বর মিসেস মানসী ভট্টাচার্যকে নোটিশ পাঠিয়েছিল এবং তাদের বলেছিল অনুমতি/এনওসি প্রদান করা বা পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত কাজ বন্ধ রাখতে। যাইহোক, তারপর থেকে তারা বারবার নোটিশ লঙ্ঘন করে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে এবং এখন পর্যন্ত এই ৩০বছরের পুরানো জরাজীর্ণ ভবনের উপরে দুইটি অতিরিক্ত সম্পূর্ণ ফ্লোর তৈরি করেছে। এতে সবার জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। আমার বাবা বিরক্ত এবং অসহায় বোধ করছেন,” প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন শশধর ভিলার প্রথম তলার মালিক গোপাল কৃষ্ণ চক্রবর্তীর ছেলে গৌরব চক্রবর্তী।
“অন্যরা অভিযোগের আবেদন জমা দিয়েছে। অবিলম্বে আমরা নির্মাণ বন্ধের আদেশ দিয়ে একটি নোটিশ জারি করেছি; নোটিশ পৌঁছানো যায়নি। তারপরে পুলিশের মাধ্যমে আবার নোটিশ জারি করা হয়েছিল,” লালসিম এখন পর্যন্ত নেওয়া পদক্ষেপের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেন।
“শিলচর মিউনিসিপ্যালিটি বোর্ড এবং এক্সিকিউটিভ অফিসারের পক্ষে এটা সহজবোধ্য যে, ভবনটির নির্মাণকারী দলটি নোটিশটি গ্রহণ করতে অস্বীকার করেছে, কারণ তাদের কাছে নির্মাণের অনুমতি ছিল না। তারা মাত্র ৪ অক্টোবর এটির জন্য আবেদন করেছিল, অনুমতির নথিপত্র জমা দেওয়ার জন্য নোটিশ এর দুই মাস আগে জারি করা হয়েছিল। এটি বোঝার জন্য যথেষ্ট যে, এই চুক্তিতে ন্যস্ত স্বার্থ কাজ করছে। এটির যথাযথ তদন্ত প্রয়োজন কারণ, এটি শহরের কেন্দ্রস্থলে বহু কোটি টাকার কেলেঙ্কারীর ঘটনা,” বলেছেন প্রাক্তন পুর কমিশনার।
শিলচর পৌরসভা বোর্ডের নির্বাহী কর্মকর্তা জে আর লালসিম বলেছেন যে, ১৭ নভেম্বর বোর্ড তাদের মতামতের জন্য আবার আইনজীবীদের কাছে যাবে। ঘনিষ্ঠ সূত্র জানা গেছে, মানিক লুনিয়ার উপস্থিতিতে জে আর লালসিম নিচুতলার মালিক অনিল গোলেচাকে ডেকে নির্মাণ বন্ধ করতে বলেন; তবে তাকে পাত্তা দেওয়া প্রয়োজন মনে করেননি নির্মাণকারী।
যা অস্পষ্ট রয়ে গেছে তা হল, যখন অনুমতি চাওয়ার কথা আসে, শিলচর পৌরসভা বোর্ড মানসী ভট্টাচার্যকে নোটিশ জারি করে। কিন্তু যখন কাজ বন্ধ করার নির্দেশনা পাঠানোর কথা আসে, তখন জে আর লালসিম অনিল গোলেচাকে ফোন করেন। এই সম্পত্তি ও নির্মাণাধীন মেঝেগুলোর প্রকৃত মালিক কে?
Comments are closed.