Also read in

বজরং দলের কর্মী দাবি করে ছেলেরা শিলচরের চার্চে হিন্দুদের আক্রমণ করল, বলল "তুলসীদিবস" উদযাপন করতে

শিলচর শহরের কেন্দ্রস্থলে ওরিয়েন্টাল স্কুলের কাছে প্রেসবিটারিয়ান চার্চে বড়দিনের রাত উদযাপনে এবার বেশ ভিড় জমতে শুরু করেছিল। কিছু অল্প বয়স্ক ছেলে- মেয়ে, কিশোর-কিশোরী সুসজ্জিত ক্রিসমাস ট্রি এবং প্রাঙ্গনের অন্যান্য কোণে সেলফি তুলতে ব্যস্ত ছিল। সে সময়েই কমপ্লেক্সে প্রবেশ করে এবং কোনও কারণ ছাড়াই মারধর করতে শুরু করে কিছু যুবক।

“আমাদের এখন গির্জা খালি করার সময় হয়েছে,” একজন চিৎকার করে বলল; অন্য একজন তখন পথচারীকে চড় মারছিল। ঘটনাটি উপস্থিত জনতাকে হতবাক করেছিল, কারণ কেউ কেউ বন্ধুদের সাথে এবং পরিবারের সদস্যদের সাথে সেখানে গিয়েছিল। ক্রিসমাস উদযাপনের জন্য রঙ বেরঙের পোশাক পরে, তারা গির্জায় গিয়েছিল, আচমকা চড় মারার ঘটনায় অপমানিত বোধ করে তা থেকে বাঁচতে তারা এখানে-সেখানে দৌঁড়াতে শুরু করে।

ছেলেদের কাঁধে গেরুয়া স্কার্ফ জড়ানো ছিল এবং তারা বার বার ‘জয় শ্রী রাম’ ধ্বনি দিতে থাকে এবং “চার্চ খালি কর” বলতে থাকে। তাদের মধ্যে একজন মিডিয়ার মুখোমুখি হয়েছিল, সাংবাদিকরা চার্চের অভ্যন্তরে যে হট্টগোল তৈরি করা হচ্ছে তা রিপোর্ট করতে জড়ো হয়েছিলেন। ঐ যুবকটি বলে, “খ্রিস্টানদের সঙ্গে আমাদের কোনো সমস্যা নেই, কোনো অভিযোগ নেই। তাদের ক্রিসমাস উদযাপনের সমস্ত অধিকার আছে এবং আমরা তাদের বাধা দেবার চেষ্টা করছি না। আমাদের সমস্যা অন্যদের (হিন্দুদের) সাথে, যারা নিজেদের ধর্মকে ভুলে যাচ্ছে। তারা চার্চে রঙীন পোশাক পরে এসে মেরি ক্রিসমাস গায়; তাদের তুলসী দিবস উদযাপন করা উচিত। তা না করে তারা এখানে চার্চে রয়েছে, যা আমরা প্রশংসা করি না।”

এখানে উল্লেখ করা দরকার যে গির্জাটি শিলচর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মাত্র কয়েক মিটার দূরে এবং জেলা পুলিশ সদর দফতর থেকে এক কিলোমিটারও দূরে নয়। যেহেতু তারা নিজেদেরকে বজরং দলের কর্মী বলে দাবি করেছিল এবং ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগান দিয়েছিল,তাই তারা যাই করুক না কেন তাদের ভয় ছিল না।

নিজেকে রাঙ্গিরখাড়ি বজরং দলের “সহ সংযোজক” বলে পরিচয় দিয়ে আরেক যুবক বলে, “যেহেতু চার্চে ভিড় বাড়ছিল, তাই আমরা এটি খালি করে দিয়েছিলাম। আসামের মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে ১১ টার পরে কার্ফু থাকবে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ না মেনে, লোকেরা চার্চে প্রবেশ করেছে। তারা কোভিড-১৯ প্রোটোকলও লঙ্ঘন করছে এবং সেই কারণেই আমরা সবাইকে ধাক্কা দিয়ে বের করে দিয়েছি এবং চার্চে তালা দিয়েছি, জয় শ্রী রাম।”

এগুলি ক্যামেরায় ধারণ করা বিবৃতি। কাছাড়ের পুলিশ সুপার ডঃ রমনদীপ কৌর তার প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, “আমরা এর সাথে জড়িত ব্যক্তিদের সনাক্ত করার প্রক্রিয়ার মধ্যে আছি এবং তারপরে যখনই আমরা অভিযোগ পাব আমরা আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব। এছাড়াও, আমরা এই ধরনের কার্যকলাপের পুনরাবৃত্তি যাতে না হয় তা নিশ্চিত করার জন্য পদক্ষেপ নেব। ।”

এখানে উল্লেখ করা দরকার যে সাম্প্রতিক অতীতে পুলিশ কিছু কিছু কাজে স্বতঃপ্রণোদিত বিবেচনা করেছিল এবং ভিডিওগ্রাফিক প্রমাণের ভিত্তিতে জড়িত পক্ষের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছিল। এ ক্ষেত্রেও পুলিশ একই ধরনের ব্যবস্থা নেয় কিনা সেটাই দেখার বিষয়।

গতকাল গভীর রাত পর্যন্ত কাছাড় থানা পুলিশের কাছে এ ঘটনার কোনো আনুষ্ঠানিক অভিযোগ যায়নি। তবে এ ঘটনায় সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিদের একজন হলেন প্রবীণ সাংবাদিক অনির্বাণ জ্যোতি গুপ্ত । সাংবাদিকতায় প্রিন্ট, রেডিও এবং অডিওভিজ্যুয়াল ফর্মের একজন সম্মানিত ব্যক্তিত্ব অনির্বাণ জ্যোতি গুপ্ত ফেসবুকে শেয়ার করেছেন যে তার ছেলেকে হেনস্থা করা হয়েছে।

পোস্টটিতে লেখা হয়েছে, “এই ধরণের দুর্বৃত্তদের জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ভাবমূর্তি এবং নতুন ভারতের জন্য তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি কলঙ্কিত হচ্ছে! কিছু স্বঘোষিত “বজরং দলের” কর্মীরা আজ আমার ছেলেকে এনআইটি স্কলার ( প্রয়াত বিষ্ণু মোহন গুপ্তের নাতি, যিনি ছিলেন বরাক উপত্যকার আরএসএস’র প্রথম সংঘ চালক এবং যার বাড়িতে গোলওয়ালকোরজি, আরএসএসের মতাদর্শী দীন দয়াল উপাধ্যায় থাকতেন। এমনকি অটল বিহারি বাজপেয়ীও মালুগ্রামের বাড়িতে গিয়েছিলেন)মারধর করে, শুধুমাত্র শিলচর ওরিয়েন্টাল স্কুলের কাছে শিলচরের বড়দিনের উৎসবে যোগ দেওয়ার জন্য। লজ্জা! লজ্জা! লজ্জা! এটা কি হিন্দুত্বের সংস্কৃতি? আমাদের আর একবার ভাবা উচিত।”

এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে স্কলার বা আরএসএস-এর সঙ্গে সম্পর্কিত নয় এমন অন্য কাউকে আক্রমণ করলে হয়তো ব্যাপারটা অন্যরকম হতে পারতো। তবে সোশ্যাল মিডিয়ায় এই পোস্টটি অনেক বেশি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে এবং যেহেতু এটি সাংবাদিকের কাছ থেকে এসেছে, তাই এটি কাছাড় জেলার নির্বাচিত প্রতিনিধিদের চোখ এড়িয়ে যাবে না।

এখন কি পদক্ষেপ নেওয়া হয় তার উপর হিমন্ত বিশ্ব শর্মার মুখ্যমন্ত্রীত্বের অধীনে থাকা আসাম পুলিশের চরিত্রকে সংজ্ঞায়িত করবে। পুলিশ কি শুধুমাত্র ধর্মীয় বা ভাষাগত সংখ্যালঘুদের ক্ষেত্রে কঠোর হয়, নাকি সবার জন্য তারা একই রকম, এখন এটিই দেখার বিষয়।

Comments are closed.