ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য সুখবর! ৪ মার্চ শিলচর থেকে অমৃতসর - মাতা বৈষ্ণোদেবী বিশেষ পর্যটক ট্রেন চালাচ্ছে আই আর সি টি সি
শিলচর তথা গোটা বরাক উপত্যকার ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য এক বিশেষ পর্যটক ট্রেন চালাচ্ছে ইন্ডিয়ান রেলওয়ে ক্যাটারিং এন্ড ট্যুরিজম কর্পোরেশন লিমিটেড (আই আর সি টি সি)। আগামী ৪ মার্চ প্রথমবারের মতো শিলচর রেল স্টেশন থেকে ছাড়বে এই বিশেষ পর্যটক ট্রেন। এতে অমৃতসর সহ মাতা বৈষ্ণোদেবী দর্শন করতে পারবেন তীর্থযাত্রীরা। মোট ১০ রাত্রি ১১ দিনের সফরের জন্য থাকছে বিশেষ প্যাকেজ। সোমবার শিলচর রেল স্টেশনে এক সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে এই বিশেষ পর্যটক ট্রেনের যাবতীয় তথ্য তুলে ধরেন আই আর সি টি সির ট্যুরিজম ডিপার্টমেন্টের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ (গুয়াহাটি) বিশ্বরঞ্জন সাহা। তার সঙ্গে ছিলেন আই আর সি টি সি টুরিজম-এর সিনিয়র সুপারভাইজার সাওমা খবুং ও শিলচর স্টেশন সুপারিনটেনডেন্ট বিপ্লব দাস।
বিশ্বরঞ্জন বাবু বলেন, ‘এই প্রথম শিলচর থেকে এধরনের কোনো পর্যটক ট্রেন চালাচ্ছে আই আর সি টি সি। তাই এর যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। এই ট্রেনে মোট দু’ধরনের রিজার্ভেশন থাকবে। একটি হল স্লিপার ক্লাস। এবং দ্বিতীয়টি এ সি থ্রি টায়ার। ট্রেনে মোট পাঁচটি স্লিপার ক্লাস ও পাঁচটি এসি থ্রি টায়ার কোচ থাকবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘চার মার্চ শিলচর থেকে সফর শুরু করার পর চতুর্থ দিন অথবা তৃতীয় দিনের রাতে ট্রেন পৌছবে বৈষ্ণোদেবী। সেখানে এক রাত ও দু দিন কাটাতে পারবেন ট্রেনের সফরকারীরা। অমৃতসরে পুরো একটা দিন পাবেন তীর্থযাত্রীরা।’
এই বিশেষ পর্যটক ট্রেনের স্লিপার ক্লাস এর জন্য টিকেট মূল্য হচ্ছে ১০,৩৯৫ টাকা। আর এসি থ্রি টায়ারের ১৭,৩২৫ টাকা। উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, এই পর্যটক ট্রেনের টিকিট কাটার পর নিশ্চিন্তে সফর করতে পারবেন তীর্থযাত্রীরা। কারণ এই টিকিটের মূল্যের সঙ্গেই অন্তর্ভুক্ত থাকবে ট্রেনে খাওয়া-দাওয়া সহ সবকিছু। অর্থাৎ একজন যদি স্লিপার ক্লাস অথবা এসি থ্রি টায়ার এর টিকিট কেনেন তাহলে তিনি পেয়ে যাবেন হোটেল, লজ অথবা ডরমিটরিজে থাকার ব্যবস্থা। সেই সঙ্গে থাকবে ট্রেনে বিশুদ্ধ নিরামিষ আহার। সকালের ব্রেকফাস্ট, লাঞ্চ ও ডিনার। থাকছে রোড ট্রান্সফারের জন্য টুরিস্ট বাস। স্লিপার ক্লাসের টিকিট ক্রয় করলে থাকবে লজ অথবা ডরমেটরিজে থাকার ব্যবস্থা। এসি থ্রি টায়ারের সফরকারীদের জন্য থাকবে হোটেলে থাকার ব্যবস্থা। প্রতিটি কোচের জন্য নিরাপত্তারক্ষীর ব্যবস্থা থাকবে।
এই বিশেষ ট্রেনে থাকবে পেন্ট্রি কার। সেইসঙ্গে প্রত্যেক সফরকারীদের জন্য থাকছে ভ্রমণ বীমা ও। এই ট্রেনের টিকিট কোনো স্টেশনে মিলবে না। টিকিট কাটতে হবে আইআরসিটিসি টিকেট এজেন্টদের মাধ্যমে। আইআরসিটিসি ওয়েবসাইট থেকেও পেকেজ বুকিং করা যাবে। অথবা আইআরসিটিসি হেল্পলাইন নাম্বার 86385 07592 থেকেও এই বিশেষ পর্যটক ট্রেন সম্পর্কে সমস্ত তথ্য মিলবে।
বিশ্বরঞ্জন বাবু জানান, ৬৫০ জন তীর্থযাত্রীকে নিয়ে সফর করবে এই বিশেষ ট্রেন। তার বেশি নয়। সফরকারীদের সংখ্যা যদি ৩৫০ থেকে ৪০০ ও হয়, তা হলেও শিলচর থেকে যাত্রা করবে এই ট্রেন। তবে সংখ্যাটা যদি তার থেকেও কম হয় তাহলে সমস্যা হতে পারে। আসলে আরো আগেই এই পর্যটক ট্রেনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করেছিল আইআরসিটিসি। তবে গোটা দেশে হঠাৎ করে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় অধিকাংশই এই সফর নিয়ে দ্বিধায় ছিলেন। তবে এখন করোনা সংক্রমনের হার গোটা দেশেই অনেক কম। অধিকাংশ রাজ্যে নাইট কারফিউ উঠে গেছে। নেই কোনো এস ও পি। তাই এখন আবার নতুন করে তীর্থ যাত্রীদের কাছে এই ট্রেনের যাবতীয় তথ্য তুলে ধরছে আইআরসিটিসি। বিশ্বরঞ্জন বাবু জানান, এখন পর্যন্ত ভাল সাড়া মিলছে। তবে এখনো অনেকেই করোনা আতঙ্ক পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে পারছেন না।
গোটা এই সফরে শিলচর ছাড়া বদরপুর, গুয়াহাটি, নিউ বঙ্গাইগাও, নিউ কোচবিহার, নিউ জলপাইগুড়ি এবং কাঠিহার জংশন থেকে তীর্থযাত্রীরা বোর্ডিং ও ডি বোর্ডিং করতে পারবেন। আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, এই ট্রেনে সফর করতে হলে অবশ্যই ডাবল ভ্যাক্সিনেশন থাকতে হবে। সফরকারীদের প্রত্যেককেই মাস্ক ও সেনিটাইজার দেওয়া হবে। কোভিডের কথা মাথায় রেখে একটা আইসোলেশন কোচ ও থাকবে ট্রেনে।
শিলচর স্টেশন সুপারিনটেনডেন্ট বিপ্লব দাস বলেন, ‘শিলচর থেকে এমন বিশেষ পর্যটক ট্রেন চালাবার জন্য আমি আইআরসিটিসি কে ধন্যবাদ জানাই। এটা শিলচর বাসীর জন্য এক সুবর্ণ সুযোগ। আইআরসিটিসি এই সুযোগ করে দিয়েছে এখানকার ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য। আশাকরি বরাকের মানুষ এই সুযোগ কাজে লাগাবে।’
Comments are closed.