স্বাস্থ্য পরিষেবায় যুগান্তকারী পদক্ষেপ! মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করছে বরাক উপত্যকার প্রথম বেসরকারি ক্যাথল্যাব
শুধু শিলচরের জন্য নয়, গোটা বরাক উপত্যকার স্বাস্থ্য পরিষেবার জন্য এক দারুন খবর। শিলচরে চালু হল প্রথম বেসরকারি ক্যাথল্যাব। বরাক উপত্যকায় ইতিহাস সৃষ্টি করে প্রথমবারের মতো যাত্রা শুরু হল হার্টের চিকিৎসার। অত্যন্ত জরুরী ক্যাথল্যাব পরিষেবার। ৩মে, মঙ্গলবার শিলচর মেহেরপুরের বেলতলায় ত্রিদেব ইনস্টিটিউট অব কার্ডিয়া সাইন্সের নামে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন হতে চলেছে ক্যাথল্যাবের। এই ক্যাথল্যাব চালু হওয়ায় এখন আর বুকে ব্যথার রোগী নিয়ে মানুষকে ছুটতে হবে না উপত্যকার বাইরের হাসপাতলে। মূলত গ্রীন হিলস হাসপাতালের উদ্যোগেই চালু হচ্ছে এই ক্যাথল্যাব। এতে সহযোগিতায় রয়েছে সাউথ সিটি হাসপাতাল এবং ভ্যালি হাসপাতাল। সোমবার বেলতলায় এক সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে এ খবর জানিয়ে দেন গ্রীন হিলস এর কর্ণধার রুদ্র নারায়ণ গুপ্ত, সাউথ সিটির মৃদুল মজুমদার এবং ভ্যালি হাসপাতালের সুতপা ভট্টাচার্য ও নিত্যানন্দ গোয়ালা।
মৃদুল মজুমদার বলেন, ‘এই ক্যাথল্যাব গোটা উপত্যকার স্বাস্থ্য পরিষেবায় এক নতুন ইতিহাস রচনা করবে। এতদিন আমাদের ডাক্তারদের কিছুই করার ছিলনা। পরিকাঠামোর অভাব থাকায় চিকিৎসকরা নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছিলেন। ক্যাথাল্যাব না থাকায় ভাল চিকিৎসক এনেও লাভ হচ্ছিল না। অবশেষে রুদ্র নারায়ণ গুপ্তর জন্য আমাদের এই স্বপ্ন বাস্তব হয়েছে। আমরা তিনটি হাসপাতাল মিলে এই পরিষেবা দেবো।’
উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, মঙ্গলবার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করলেও এই ক্যাথল্যাব কিন্তু ইতিমধ্যেই সফর শুরু করে দিয়েছে। রবিবার ৫ টা ২৭ মিনিটে ইমরানা সুলতানা নামের প্রথম রোগীর এনজিওগ্রাফি হয়েছে। উপত্যকার প্রথম রোগী হিসেবে ইমরানার এনজিওগ্রাফি হল। রবি ও সোম এই দুদিনে মোট ছয়জনের এনজিওগ্রাফি হয়েছে। তিনটি স্ট্যান্ট বসানো হয়েছে। এর মধ্যে দুজনের হয়েছে এনজিও প্লাস্টি। এই ক্যাথল্যাবে দুজন কার্ডিয়লজিস্ট রয়েছেন। এরা হলেন ডি দাশ ও এ ভাস্কর। সঙ্গে রয়েছে একটা বিশেষজ্ঞ টিম। বিশেষজ্ঞ তিনজন টেকনিশিয়ান রয়েছেন। প্রথম এনজিওগ্রাফির সময় মেশিনের ইঞ্জিনিয়ারও উপস্থিত ছিলেন।
রুদ্র নারায়ণ গুপ্ত বলেন, ‘তিন চার বছর আগে থেকেই এই ক্যাথল্যাব এর প্রস্তুতি চলছিল। তবে কোভিডের জন্য মাঝপথে এই পরিকল্পনা স্থগিত রাখতে হয়। এরপর করোনার দাপট কমে আসায় ফের শুরু হয় পরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্রস্তুতি।’ গুপ্তবাবু বলেন, ‘ক্যাথল্যাবের জন্য আমাদের বিশেষজ্ঞ দরকার ছিল। ক্যাথল্যাব না থাকায় কার্ডিওলজিস্ট সাড়া দিচ্ছিলেন না। ২০২১ সালের শেষদিকে আমরা মেশিন অর্ডার দিই। আমরা প্রধানত তিনটি বিষয়ের উপর গুরুত্ব দিই। এক, পরিকাঠামো। দুই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। এবং তিন, একটা অভিজ্ঞ টিম, যাতে থাকবেন স্থানীয় অভিজ্ঞরাও। যেহেতু সবার লক্ষ্য এক, তাই আমরা একসঙ্গে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিই।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, এই ক্যাথল্যাব ইন্সটল হওয়ায় এখন সঠিক সময়ে একজন রোগীর পরীক্ষা হবে। চিকিৎসা শুরু হবে সঠিক সময়ে। এর আগে উপত্যকায় এই সুবিধে ছিল না। ফলে কোনো রোগীর বুকে ব্যাথা হলে পরিকাঠামোর অভাবে তাকে নিয়ে ছুটতে হত উপত্যাকার বাইরে। এতে অনেকটা সময় নষ্ট হতো। চিকিৎসা ক্ষেত্রে এই সময়টা কিন্তু খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ত্রিদেব ইনস্টিটিউট অব কার্ডিয়া সাইন্সের এই ক্যাথাল্যাব চালু হওয়ায় এখন আর মহা মূল্যবান সময় নষ্ট হবে না। দ্রুত এনজিওগ্রাফি করে চিকিৎসা শুরু করা যাবে। এক একটা পরীক্ষা করতে ১০ থেকে ১৫ মিনিট সময় লাগবে। প্রতিদিন এই ক্যাথল্যাবে ২০ থেকে ২৫ টি পরীক্ষা করা যাবে।
সুতপা ভট্টাচার্য বলেন, ‘রুদ্র এই ক্যাথল্যাব ইন্সটল করার প্রস্তাব নিয়ে আসার সঙ্গেই আমরা তা লুফে নিই। বরাকের স্বাস্থ্য পরিষেবায় এটা এক নতুন ইতিহাসের সূচনা করবে।’ আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে এটা পুরোদমে চালু হবে। ইতিমধ্যেই ক্যাথল্যাবের প্রায় ৮০ শতাংশ জিনিস এসে গেছে। রুদ্র বাবু জানান, শিলচরের চিকিৎসকরা সীমিত পরিকাঠামো নিয়েও দারুন কাজ করে চলেছেন। তিনি আরো জানান, আগামী ৭-৮ মাসের মধ্যে শিলচরে বাইপাস সার্জারি চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে। এর জন্য ইতিমধ্যেই প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও স্বাস্থ্যপরিসেবা কে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আরও এক গুচ্ছ পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন তারা। সরকারের সমস্ত গাইডলাইন মেনে ক্যাথল্যাবে আধুনিক মেশিন বসানো হয়েছে। তিনি আশা ব্যক্ত করেন, তাদের এই ক্যাথল্যাব থেকে প্রেরণা নিয়ে অন্যরাও স্বাস্থ্য পরিষেবার উন্নতিতে এগিয়ে আসবেন।
Comments are closed.