Also read in

সুপার ডিভিশনে চ্যাম্পিয়ন 'অপরাজিত' অরুণাচল, ফাইনালে নতুন ইতিহাস লিখতে ব্যর্থ স্পোর্টিং

শিলচর স্পোর্টিংয়ের সামনে সুযোগ ছিল নতুন ইতিহাস রচনা করার। লাস্ট বয় হিসেবে সুপার ফোর এর ছাড়পত্র আদায়ের পর ক্রমশই উন্নতি করছিল সুবীর দে-র ছেলেরা। তাই ফাইনাল ঘিরে স্পোর্টিং কে নিয়ে দারুণ কিছুর প্রত্যাশা ছিল। তবে বড় ম্যাচে নিজেদের মেলে ধরতে পারলো না স্পোর্টিং। আরো একটু খুলে বললে দুরন্ত অরুণাচল এস এসের বিরুদ্ধে চাপ সামলে খেলতে পারল না। নিটফল- সুপার ডিভিশনের ইতিহাসে প্রথম ফাইনালে ৩-১ গোলের জয় ছিনিয়ে নিল দুরন্ত অরুণাচল। অপরাজিত থেকেই রামানুজ গুপ্ত সুপার ডিভিশনের খেতাব ঘরে তুলল তারা।

গোটা টুর্ণামেন্টে একটি ম্যাচেও হারেনি অরুণাচল। সুপার ফোরে শিলচর স্পোর্টিংয়ের বিরুদ্ধে ড্র করেছিল। শুধু সেই ম্যাচ টা তেই কিছুটা চাপে মনে হয়েছিল অরুণাচলকে। বাকি সবকটা ম্যাচেই কিন্তু ধারাবাহিক পারফরম্যান্স করেছে দলটা। সুপার ফোরে স্পোর্টিং এর বিরুদ্ধে ড্র করার পর কিছু ফাঁকফোকর ধরা দিয়েছিল অরুণাচলের। তবে ফাইনালে কিন্তু সব কিছুতেই সসম্মানে উতরে গেছে দলটা। তাও আবার শুধু পাশ মার্কে নয়, লেটার মার্কস নিয়ে।

টানা বৃষ্টিতে সতীন্দ্র মোহন দেব স্টেডিয়ামের মাঠ কর্দমাক্ত ছিল। ফুটবলের জন্য মানানসই ছিল না। এমন কন্ডিশনেও মানিয়ে নিতে পেরেছে অরুণাচল। গত ম্যাচগুলোতে ছোট ছোট পাসে খেলেছে অরুণাচল। এটাই তাদের ট্রেডমার্ক ফুটবল স্টাইল। ‌ তবে ফাইনালে মাঠের কন্ডিশন মাথায় রেখে লম্বা পাসে খেলেছে। যখন স্পোর্টিং আক্রমণ করেছে অরুণাচলের সেকেন্ড লাইন অফ ডিফেন্স তৈরি ছিল।

খারাপ খেলেনি স্পোর্টিং। তবে ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত গুলিতে তারা নিজেদের মেলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছে। সুপার ফোরের উজ্জীবিত পারফরম্যান্সের পর ফ্লাড লাইটের আলোয় ফাইনাল ম্যাচে তাদের কাছ থেকে আরও একটু বেশী আশা করেছিলেন ফুটবলপ্রেমীরা। কিন্তু দলটা প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে।

দু’দল শুরুটা করেছিল দারুণ টেম্পোতে। আক্রমণ প্রতিআক্রমণে জমে উঠে ফাইনাল। টুর্নামেন্টের প্রায় সবকটা ম্যাচে দেখা গেছে নিজেদের গুছিয়ে নিতে একটু সময় নেয় অরুণাচল। আর একবার ছন্দটা পেয়ে গেলে দলটা বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। ‌ ফ্লাড লাইটের আলোয় ফাইনালেও একই চিত্র দেখা গেল। শুরুটা ভালো করলেও অরুণাচলের টানা আক্রমণে দ্রুতই চাপে পড়ে গেল স্পোর্টিং। গোটা প্রথমার্ধে তারা এই চাপ কাটিয়ে উঠতে পারেনি। প্রথম কুড়ি মিনিটে স্পোর্টিংয়ের গোলকিপার বিজয় তন্তুবাই তিন-তিনটি ভালো সেভ করেন। তিনটি শটই ছিল অরুণাচলের তারকা স্ট্রাইকার রাকেশ দাসের। তবে ২২ মিনিটে স্পোর্টিং গোলকিপারকে আর কিছুই করার সুযোগ দেননি রাকেশ। দুরন্ত এক শটে স্পোর্টিংয়ের জাল কাঁপিয়ে দেয় অরুণাচলের স্ট্রাইকার। ১-০ গোলে এগিয়ে যায় অরুণাচল।

 

 

গোটা টুর্ণামেন্টে অসাধারণ ধারাবাহিকতা দেখালেন রাকেশ। ‌ ফাইনালের প্রথম গোলটা কথাই ধরুন। ‌ হাফ চান্স ছিল। ‌ সেটাকে খুব সহজেই গোলে কনভার্ট করে নিলেন। সত্যিকার অর্থে তিনি একজন জাত স্ট্রাইকার। ‌ টুর্নামেন্টের তার ধারে কাছে কেউ ছিলনা। রাকেশকে বোতল বন্দী করে রাখা টাও কিন্তু বড্ড কঠিন। অনেকটা জায়গা জুড়ে খেলেন। শুধু গোল করা নয়, বলের জোগানটাও ভাল দেন। এটাই তাকে বাকিদের থেকে আলাদা করে।

প্রথম গোলটা যেন অরুণাচলের টিউন সেট করে দেয়। গোল হজম করলেও স্পোর্টিং কিন্তু লড়াইয়ে ছিল। বেশ কয়েকটি আক্রমণ করেছিল তারা। তবে মার খায় ফাইনাল পাসে। টুর্ণামেন্টে ধারাবাহিকতা বজায় রেখে ফাইনালেও প্রচুর মিস পাস খেলল স্পোর্টিং। কার্ড সমস্যায় এদিন স্পোর্টিং পায়নি মিডফিল্ডার দিনদয়াল থাপা কে। ফাইনালে এটাও একটা ফ্যাক্টর ছিল। মাঝ মাঠে স্পোর্টিংয়ের স্তম্ভ লালডিনসাং পুদাইতের সঙ্গে থাপার কেমিস্ট্রিটা বেশ জমে উঠেছিল। ফাইনালে থাপা না থাকায় পুদাইতে কে অতিরিক্ত চাপ নিয়ে খেলতে হয়েছে।

এক গোলে পিছিয়ে পড়ার পর সমতায় ফেরার জন্য মরিয়া চেষ্টা করছিল স্পোর্টিং। এমন সময়ে মারাত্মক ভুল করে বসেন দলের গোলকিপার বিজয় তন্তুবাই। প্রথমে ডিফেন্স এর সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝি, তারপর বল এর ফ্লাইট মিস করে দেন। এমন সুযোগ হাতছাড়া করার পাত্র নন রাকেশ দাস। তিনি স্কোর ২-০ করে দেন। অরুণাচলের এই গোলের উল্লাস থামতে না থামতেই গোল করে দেন স্পোর্টিংয়ের জিহ্বা মার। ম্যাচের বয়স তখন ৭১। ইনজুরি টাইমে অরুণাচলের তৃতীয় গোলটি করে জয় নিশ্চিত করেন থঙ্গাম লেনিন সিং (৩-১)।

 

 

ফাইনালের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন রাকেশ দাস। সেরা ফরওয়ার্ড এবং টপ স্কোরার এর পুরস্কার ও জেতেন রাকেশ দাস। টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন থঙ্গাম লেনিন সিং। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুবাদে ট্রফিসহ ৩৫ হাজার টাকা পায় অরুণাচল এস এস। রানার আপ শিলচর স্পোর্টিং পেয়েছে ট্রফিসহ ২৫ হাজার টাকা।

Comments are closed.