নুরুদ্দিন ক্রিকেটে চ্যাম্পিয়ন শিলচর, ইতিহাস রচনা করে রাজ্যের সেরা শমীক-রাহুলরা, বৃহস্পতিবার চ্যাম্পিয়নদের গ্র্যান্ড রিসেপশন
রাজ্যের ক্রিকেটে ইতিহাস রচনা করল শিলচর। দ্বিতীয়বারের মতো নুরুদ্দিন ট্রফি সিনিয়র আন্তঃজেলা ক্রিকেটের খেতাব ঘরে তুলল তারা। রাজ্যের ক্রিকেটে ফের সেরার আসন দখল করলেন শমীক দাস, রাহুল সিংরা।
বুধবার গুয়াহাটির বর্ষাপাড়া স্টেডিয়ামে ফাইনালের তৃতীয় দিন সকালেই জয়ের কাজটা সেরে নেয় শিলচর। অবশ্য বিশ্বনাথ চারিয়ালির বিরুদ্ধে জয়ের মঞ্চ গতকালই তৈরি করে নিয়েছিল শিলচর। বাকি ছিল শুধু আনুষ্ঠানিকতা। আজ সকালেই সেটাও সেরে নিল তারা। ফাইনালে তুলে নিল ১০ উইকেটের দারুন এক ঐতিহাসিক জয়। প্রত্যাশামতোই বিশ্বনাথ চারিয়ালির মিডল অর্ডার শিলচরের বোলিং লাইন আপের সামনে দাড়াতে পারেনি। তারা তৃতীয় দিনের খেলা শুরু করেছিল ওভার নাইট স্কোর ৪ উইকেটে ৯০ রান থেকে। শিলচরের স্কোর থেকে ১১ রানে পিছিয়ে ছিল তারা। আজ সকালে দ্বিতীয় ইনিংসে ১৪০ রানে অলআউট হয় বিশ্বনাথ চারিয়ালি। দ্বিতীয় ইনিংসের দুরন্ত বোলিং করেন অফস্পিনার রাম দাস। ৫ উইকেট শিকার করেন তিনি। তার বোলিং বিশ্লেষণ ছিল ১৮-১২-১৫-৫। রাহুল সিং নেন তিন উইকেট। ম্যাচে তার মোট শিকার সাত উইকেট। অধিনায়ক শমীক দাস নেন দু উইকেট।
জয়ের জন্য শিলচরের সামনে টার্গেট দাঁড়ায় ৪০। এই রান শুধু ৪.৫ ওভারেই তুলে নেয় শিলচর। দ্বিতীয় ইনিংসে শুভম মণ্ডল এর সঙ্গে ওপেন করতে নামেন অভিষেক ঠাকুরী। তিনি অপরাজিত থাকেন ২৫ রানে। আর শুভম অপরাজিত থাকেন ১৬ রানে।
দল চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় দারুণ খুশি শিলচরের কোচ রাজীব দাস। তিনি মনে করেন দলগত ক্রিকেট খেলেই এই সাফল্য এসেছে। বলেন, ‘আমি মনে করি শিলচরের ক্রিকেটের জন্য এটা এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত। ছেলেরা দারুন মানসিকতার পরিচয় দিয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে আমরা দলগত ক্রিকেট খেলেই চ্যাম্পিয়ন হয়েছি।’
শিলচরের কোচ জানান, জোনাল রাউন্ড থেকেই তিনি দলগত ক্রিকেট খেলার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন। ছেলেদের বুঝিয়েছিলেন সবাইকে একজোট হয়ে লড়তে হবে। তাহলেই মিলবে সাফল্য। রাজীব দাস বলেন, ‘করিমগঞ্জে জোনাল রাউন্ডের ম্যাচের সময় টিম মিটিংয়ে আমি ছেলেদের দলগত ক্রিকেট খেলার দিকে ফোকাস করতে বলেছিলাম। ব্যক্তিগত স্বার্থ নয়, দলের স্বার্থকে এগিয়ে রাখতে হবে। সেটাই কাজ দিয়েছে।’
সত্তিকারের অর্থেই কিন্তু শিলচর গোটা টুর্নামেন্টে দলগত ক্রিকেট খেলেছে। বিশেষ করে গুয়াহাটিতে ফাইনাল রাউন্ডে তো বটেই। মনে রাখতে হবে সেমিফাইনালে তেজপুরের বিরুদ্ধে শুভম মণ্ডল, অমিত যাদব ও জয়দীপ সিং দারুণ ব্যাটিং করেছিলেন। রাহুল সিং ম্যাচে নিয়েছিলেন মোট ৯ উইকেট। এর আগে তিনসুকিয়ার বিরুদ্ধে প্রচণ্ড চাপের মধ্যে দারুন একটা পার্টনারশিপ করেছিলেন প্রীতম দাস ও জয়দীপ সিং। যা ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল। সেই ম্যাচেও দারুন পারফর্ম করেছিলেন রাহুল। দখল করেছিলেন ১০ উইকেট। তিনি গোটা টুর্ণামেন্টে অসাধারণ ধারাবাহিকতা দেখিয়েছেন।সেই ম্যাচে দুটো ইনিংসেই ওপেনার অমন সিং হাফ সেঞ্চুরি করেছিলেন। ফাইনালেও প্রচণ্ড চাপের মধ্যে প্রথম ইনিংসে সঞ্জু ব্রহ্ম ও জয়দীপ সিং অসাধারণ দুটি ইনিংস খেলেছিলেন।
২০০৭-০৮ মরশুমে প্রকাশ ভগতের নেতৃত্বে প্রথমবার নুরুদ্দিন ক্রিকেটে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল শিলচর। তারপর ২০১২ সালে ফাইনালে খেললেও শেষ রক্ষা করতে পারিনি। ২০০৭-০৮ মরশুমে চ্যাম্পিয়ন দলের একমাত্র সদস্য হিসেবে এবারও দলে রয়েছেন শমীক দাস। তিনসুকিয়া ম্যাচ পর্যন্ত দলের নেতৃত্বে ছিলেন প্রীতম দাস। তারপর সেমিফাইনাল ও ফাইনালে শিলচর দলকে নেতৃত্ব দিলেন শমীক। আর দল দ্বিতীয়বারের মতো চ্যাম্পিয়ন হলো। কাজেই শমীকের জন্য এই মুহূর্তটা বিশেষ। তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে কি অনুভূতি হচ্ছে সেটা ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না। শিলচর যখন প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল আমি সেই দলে ছিলাম। এবার আমার নেতৃত্বে দল চ্যাম্পিয়ন হলো। এ থেকে খুশির আর কি হতে পারে।’ ফাইনালে বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য পারফরম্যান্স থাকলেও প্রথম ইনিংসে সঞ্জু ব্রহ্মর ইনিংসটাকে এগিয়ে রাখছেন অধিনায়ক শমীক। তিনি বলেন, ‘ট্রফি কিভাবে জিততে হয়, সেটা ভালো করে জানা রয়েছে সঞ্জুর। এর আগেও গুয়াহাটির হয়ে নুরুদ্দিন ট্রফি জিতেছে সঞ্জু। ফাইনালের প্রথম ইনিংসে ও সেই অনুসারেই ব্যাটিং করেছে। ওর সেই ইনিংসটাই কিন্তু আমার মতে পার্থক্য করে দিয়েছে। অবশ্য জয়দীপ সিং ও খুব ভালো ব্যাটিং করেছিল।’
এদিকে শিলচর চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় খুশির হাওয়া বইছে জেলা ক্রীড়া সংস্থায়। দল চ্যাম্পিয়ন হওয়ার খবর আসার পর থেকেই সংস্থার কর্মকর্তারা একে অপরকে অভিনন্দন জানাচ্ছেন। চ্যাম্পিয়নদের অভিনন্দন জানিয়েছেন শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি বাবুল হোড়, সচিব বিজেন্দ্র প্রসাদ সিং, ক্রিকেট সচিব নিরঞ্জন দাস। কাছাড় মাস্টার্স গেমসের সভাপতি চন্দন শর্মা।
শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থার সচিব বিজেন্দ্র জানান, চ্যাম্পিয়নদের জন্য গ্র্যান্ড রিসেপশনের প্রস্তুতি নিচ্ছে সংস্থা। বৃহস্পতিবার সকালে সড়ক পথে রওনা দেবে শিলচর দল। বিকেলের দিকে পৌঁছানোর পর শিলচর রেল স্টেশনে নামবে তারা। সেখানে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানাবে চাম্পিয়ন শিলচর দল। এরপর তাদের নিয়ে এক বিজয় মিছিল আয়োজন করা হবে। এই বিজয় মিছিল শহরের সেন্ট্রাল রোড, প্রেমতলা, শিলংপট্টি ও পার্ক রোড হয়ে সংস্থায় ফিরবে। সেখানে চ্যাম্পিয়ন দলের প্রত্যেক সদস্য ও কোচিং স্টাফ কে মিষ্টিমুখ করাবেন সংস্থার কর্মকর্তারা। এরপর শুক্রবার সন্ধ্যায় সংস্থার কনফারেন্স হলে চাম্পিয়ন দলকে এক জাঁকালো সংবর্ধনা জানানো হবে।
Comments are closed.