'এই মুহূর্তে নিজেদের অভ্যন্তরীণ ঝামেলায় নয়, বানভাসি মানুষের দিকে ফোকাস করা উচিত শাসক গোষ্ঠীর', তমাল কান্তি বণিক
সম্প্রতি বরাক উপত্যকা সফরকালে মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মার একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় খুব ভাইরাল হয়েছিল। ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের খোঁজ খবর নিতে ১০ দিনের মোট তিন বার বরাক উপত্যকা সফরে এসেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। শেষবারের সফরে তিনি গিয়েছিলেন করিমগঞ্জের শনবিল এলাকায় ও। সেই সফরকালে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন মন্ত্রী জয়ন্তমল্ল বড়ুয়া, পাথারকান্দির বিধায়ক কৃষ্ণেন্দু পাল এবং রাতাবাড়ির বিধায়ক বিজয় মালাকার। এনডি আরএফ-য়ের বোটে চড়ে বানভাসি এলাকা ঘুরে দেখছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই সফরের প্রতিটি মুহূর্ত মুখ্যমন্ত্রীর ফেসবুক পেজে লাইভ হচ্ছিল। সেই সফরেরই একটি ভিডিও নিয়ে তোলপাড় বরাকের রাজনীতি। সোশ্যাল মিডিয়ায় সেই ভিডিও রীতিমত ভাইরাল।
সেই ভিডিওর পর কিছুটা দিন কেটে গেলেও এর রেশ যেন এখনো রয়ে গেছে। বললে ভুল হবে না বরাকের রাজনীতিতে এর প্রভাব এখন পড়তে শুরু করেছে। বিশেষ করে সেই ভিডিওর পর তো শাসকগোষ্ঠীর অন্তঃকোন্দল প্রকাশ্যে এসে গেছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় এ নিয়ে শিলচরের সাংসদ বিধায়ককে প্রচুর ট্রোল করা হচ্ছে। বিরোধী পক্ষও শাসকগোষ্ঠীকে একহাত নিচ্ছে। তারাও শিলচরের সাংসদ ও বিধায়কের সমালোচনা করছেন।
ঘটনাটি নিয়ে এবার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলেন বিরোধী দলনেতা তথা কাছাড় জেলা কংগ্রেসের সভাপতি তমাল কান্তি বণিক। তিনি বলেন, ‘দেখুন, সেদিন মুখ্যমন্ত্রীর সফরকালে একটি ভিডিওর মাধ্যমে যা প্রকাশ্যে এসেছে সেটা শাসকগোষ্ঠীর অভ্যন্তরীণ বিষয়। এ নিয়ে আমি কিছু বলবো না। যা কিছু প্রকাশ্যে এসেছে, জনগণ এর বিচার করবেন।’
শনবিল এলাকায় সফরের সেই ভিডিওতে কৃষ্ণেন্দু পাল মুখ্যমন্ত্রীকে বলতে শোনা যায়, ‘শিলচরের লিডাররা কোনো কাজ করেননি।’ মূলত শিলচরের সাংসদ রাজদীপ রায় ও বিধায়ক দীপায়ন চক্রবর্তীকে উদ্দেশ্য করেই এই কথা বলেছিলেন পাথারকান্দির বিধায়ক। এর জবাবে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এদের উপর শিলচরের মানুষের এত ক্ষোভ ছিল।’ মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্যকে সামনে রেখেই নেটিজেনরা শিলচরের সাংসদ ও বিধায়ককে আরো ট্রোল করতে শুরু করেন। বরাকের শাসক গোষ্ঠীতেও সেই ভিডিওর পর ফাটল দেখা দিয়েছে। ভয়াবহ বন্যার সময় শিলচরের সাংসদ – বিধায়ককে কাছে পাননি, সবদিক থেকেই এমন অভিযোগ উঠতে শুরু করে।
তমাল বাবু মনে করেন, গোটা উপত্যকা বিশেষ করে কাছাড় জেলা এখনো ভয়াবহ বন্যার রেশ কাটিয়ে উঠতে পারেনি। এখনো শহরের অনেক জায়গায় বন্যার জল রয়ে গেছে। গ্রাম কাছাড়ের পরিস্থিতি তো এখনও ভয়াবহ। তাই এখন সরকারের উচিত ছিল মানুষের কাছে কিভাবে ত্রান সামগ্রী পৌঁছানো যায়, সেদিকে ফোকাস করা। তবে এই মুহূর্তে শাসক দল নিজেদের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়েই ব্যস্ত।
কাছাড় কংগ্রেসের সভাপতি ত্রাণ সামগ্রী বন্টন নিয়েও প্রশ্ন তুলেন। তিনি বলেন, ‘গতকাল একটি কাজে আমরা জেলাশাসকের কার্যালয়ে গিয়েছিলাম। সেখানে দেখলাম, আশ্রম রোডের কিছু পুরুষ ও মহিলা ত্রাণ সামগ্রী বন্টন নিয়ে অভিযোগ জানাচ্ছেন। তাদের অভিযোগ ছিল, গত পাঁচ দিনে তাদের শুধু দেড় কেজি চাল ও ১০০ গ্রাম তেল দেওয়া হয়েছে। সেই এলাকায় ত্রাণ বন্টনে দুর্নীতির অভিযোগ করছিলেন তারা।’ তমাল বাবু বলেন, ‘এই মুহূর্তে যারা ত্রাণ সামগ্রী পায়নি, তাদের কাছে কিভাবে দ্রুত ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছানো যায় সেদিকে সরকারের নজর দেওয়া উচিত।’
বিরোধী দলনেতা অভিযোগ করেন, সরকার ত্রাণ সামগ্রী বন্টন নিয়েও রাজনীতি করছে। তিনি বলেন, ‘ত্রাণ বন্টনের বিষয়টাকে এমন ভাবে তুলে ধরা হচ্ছে যেন একটা নির্দিষ্ট পার্টির পক্ষ থেকে এগুলো দেওয়া হচ্ছে। আসলে বিষয়টা তো মোটেও সেরকম নয়। এগুলো তো জনগণেরই টাকা; জনগণের দেওয়া ট্যাক্স থেকেই সরকার এই ত্রাণ বন্টন করছে।’ এখানেই না থেমে তিনি আরো বলেন, ‘এস ডি আর এফের সিস্টেম বলছে, কেউ মারা গেলে তাকে ৪ লক্ষ এবং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকলে তাকে ১২,৪০০ টাকা সাহায্য বাবদ সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া হবে। এই সিস্টেম তো এস ডি আর এফের ফরমাতেই রয়েছে। অথচ পুরো বিষয়টাকে এমন ভাবে দেখানো হচ্ছে যেন একটা পার্টির পক্ষ থেকে এইসব দেওয়া হচ্ছে।’
Comments are closed.