প্রশাসনের তৎপরতায় নাগরিকত্ব বিলের বিরোধিতায় আহূত খিলঞ্জিয়া মঞ্চের সভা পন্ড : জনমনে স্বস্তি
আজ সকালে সোনাবাড়ি ঘাটে খিলঞ্জিয়া মঞ্চের আহ্বানে এক সভার আয়োজন করা হয়েছিল। সভায় ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা থেকে খিলঞ্জিয়া মঞ্চের তিন জন প্রতিনিধি হাজির হয়েছিলেন। খিলঞ্জিয়া মঞ্চের তরফে উপস্থিত হয়েছিলেন মৃণাল কান্তি হাজারিকা (প্রাক্তন আলফা নেতা) রুবুল দাস (খিলঞ্জিয়া মঞ্চের কোর কমিটি সদস্য) রঞ্জন নারায়ণ কুচ (চিলারায় সেনা, বঙাইগাঁও) ।
সোনাবাড়ি ঘাটের একটি বিবাহ বাসর ব্যাংকোয়েট হলে এই সভার আয়োজন করা হয়েছিল। সভা শুরুর প্রাক মুহুর্তে অতিরিক্ত পুলিশ অধীক্ষক রাকেশ রেড্ডির নেতৃত্বে পুলিশ এবং সিআরপিএফ বাহিনী এই তিনজন নেতৃস্থানীয়দের ভিতরে রেখে বাকি সবাইকে হল থেকে বের করে দেয় ।
তারপরে হলের ভেতরেই এই নেতৃবৃন্দ সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।
পরবর্তীতে তাদেরকে পুলিশ প্রহরায় শহরের বাইরে নিয়ে গিয়ে গৌহাটির উদ্দেশ্যে রওনা করে দেওয়া হয়।
সাংবাদিকদের সঙ্গে কথোপকথনে নেতৃবৃন্দ উষ্মা প্রকাশ করে বলেন যে আমরা কাছাড়ে এসে উপলব্ধি করতে পেরেছি যে মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল এর নেতৃত্বে গণতন্ত্রের প্রকাশ্যে হত্যা করা হচ্ছে। খিলঞ্জিয়া জনগোষ্ঠীর সাথে মতবিনিময় করবার জন্য এই মঞ্চের স্থানীয় কর্মকর্তারা এই সভার ব্যবস্থা করেছিলেন, কিন্তু দুঃখজনকভাবে জেলা প্রশাসন এবং পুলিশের মাত্রাতিরিক্ত তৎপরতায় এই সভা ভেস্তে গেল, তাদের উপর মানসিক চাপও সৃষ্টি করা হল। এমনকি যে সকল খাবারের বন্দোবস্ত করা হয়েছিল সেই খাবার থেকেও তাদের বঞ্চিত করা হল।
তারা আরো বলেন যে এতদঞ্চলে ও নাগরিকত্ব বিলের বিরোধিতায় অনেক সংগঠন এবং জনগণ রয়েছেন, কিন্তু নেতৃত্বের অভাবে ওরা সঠিকভাবে সংগঠিত হতে পারেনি। তাই তাদের সঠিক অবস্থান জানার জন্যই এই খিলঞ্জিয়া মঞ্চের সভা আহবান করা হয়েছিল। খিলঞ্জিয়া জনগোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষা করা তাদের কর্তব্যের মধ্যে পড়ে।
কথা প্রসঙ্গে তারা আরও জানালেন যে যৌথ সংসদীয় কমিটি মতামত গ্রহণ করার সময় তাদেরকে জিজ্ঞেস করেছিল যদি অন্যান্য দেশ থেকে আগত এই লোকেদের ভিন্ন রাজ্যে স্থান করে দেওয়া হয় তবে তাদের অবস্থান কি হবে । এর উত্তরে তারা জানিয়েছিলেন যে এই প্রস্তাবেও তারা সম্মত নন কারণ কাউকে গুজরাটের কোন স্থানে যদি জায়গা দেওয়া হয় তবে পরবর্তীকালে তারা অসম এসে আশ্রয় নেবে তাদের আত্মীয়-স্বজনের হাত ধরে এবং ভারতীয় নাগরিক হিসাবে স্বাভাবিকভাবেই অসমে বসবাস করার অধিকার লাভ করবে তখন তাদের আর আটকানো যাবেনা।
জেলা প্রশাসনের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে তারা মতামত ব্যক্ত করেন, “জেলাশাসক ও পুলিশ অধীক্ষক বিজেপি এবং আরএসএস এর হয়ে কাজ করছেন এবং এতদঞ্চলে গণতন্ত্রের হত্যা করা হচ্ছে। যৌথ সংসদীয় কমিটির আগমনের ফলে এখানে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে শান্তি-সম্প্রীতির বাতাবরণ নষ্ট হয়েছে।
সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেই আমরা এই সভা করা থেকে বিরত হয়েছি আজ”।
আমাদের প্রতিনিধি জেলা শাসক এস লক্ষ্মনন এর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি আমাদের প্রতিনিধিকে জানান
“গণতান্ত্রিক অধিকার সবারই আছে যতক্ষণ পর্যন্ত তা অন্যের অধিকারকে খর্ব না করে। পুলিশ কোথাও বল প্রয়োগ করেনি, কারুর প্রতি কোনো খারাপ ব্যবহারও করেনি । আমরা শুধু শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার চেষ্টা করেছি এবং আমি মনে করি কারোর কোনো ক্ষতি না করেই আমরা এতে সফল হয়েছি। একটা ছোট স্ফুলিঙ্গ থেকেই অনেক বড় আগুনের সৃষ্টি হয়। কিছু লোক এতে খারাপ পেতে পারে , ওদের মনে ক্ষোভেরও সৃষ্টি হতে পারে কিন্তু প্রশাসনের তরফ থেকে আমি সরকারি ভাবে বলতে পারি যে আমরা শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য যা প্রয়োজন তাই করেছি”।
এদিকে এই ঘটনার পরে কয়েকজন লোক মিলে একটা সভা করে “নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল ২০১৬ বিরোধী ঐক্যমঞ্চ” নামে একটি সংস্থা গঠন করে।
ওদের এক প্রেস বিবৃতিতে জানা যায় যে ওই সভায় সভাপতি হয়েছেন মনমোহন বর্মন, কার্যকরী সভাপতি আশিক উদ্দিন বড়লস্কর, সহ-সভাপতি ফিরোজ আহমেদ চৌধুরী, মৌলানা আব্দুল খালিক, সাধারণ সম্পাদক অরিজিৎ সিং, সম্পাদক খেলেন্দ্র রাজবংশী, প্রচার সম্পাদক নাজিম উদ্দিন লস্কর, মনত ওরাং, শহীদুল হক লস্কর প্রমুখ। এদের নিয়ে ২৫ জনের এক কার্যকরী কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই সংস্থা আগামীতে নাগরিকত্ব বিল- ২০১৬ এর বিরোধিতা করে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলবে বলে প্রেস বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।
এই প্রসঙ্গে এখানে উল্লেখ্য যে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল নিয়ে এমনিতেই রাজ্যের দুই উপত্যকার মধ্যে মেরুকরণ হয়ে চলেছে। ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় যেখানে বিলের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ ধ্বনিত হচ্ছে, বরাক উপত্যকা ঠিক তার উল্টো অবস্থানে দাঁড়িয়ে আছে। যৌথ সংসদীয় কমিটির শুনানির সময় এই অবস্থানটা আরো স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এই সন্ধিক্ষণে বরাক উপত্যকায় নাগরিকত্ব বিলের বিরোধিতায় খিলঞ্জিয়া মঞ্চের আহবানে এই সভা নিয়ে কিছুটা চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছিল ।
Comments are closed.