৭ জুন থেকে অনশনে বসছে পৃথক বরাক ডিমান্ড কমিটি : পরিতোষ পাল চৌধুরীর আমরণ প্রয়াস 'পৃথক বরাক' আন্দোলন আবার জোরদার হচ্ছে।
নাগরিকত্ব বিল দ্রুত পাসের দাবিতে শিলচরে আমরণ অনশনে বসছে ‘পৃথক বরাক ডিমান্ড কমিটি’। শহিদ ক্ষুদিরাম মূর্তির পাদদেশে আগামী ৭ জুন থেকে এই কর্মসূচি শুরু হচ্ছে, গতকাল এক সাংবাদিক সম্মেলনে এমনটাই জানালেন কমিটির কর্মকর্তারা। ওই সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্য বক্তা ছিলেন বিশিষ্ট কবি-সাংবাদিক অতীন দাশ, আমরা বাঙালির সাধন পুরকায়স্থ এবং শুভদীপ দত্ত ।
পৃথক বরাক দাবি কমিটির মুখ্য উপদেষ্টা অতীন দাশ এই সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তব্য রেখে জানালেন যে ভারতীয় সংবিধানে উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্বের বিষয়ে কোন সংস্থান রাখা হয়নি এর ফলে দেশভাগের বলি হয়ে আসা বাঙালি হিন্দুদের প্রচন্ড হয়রানির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। বাঙালি হিন্দুরা বিশেষ করে আসামে আজও অগ্নিপরীক্ষা দিচ্ছেন নাগরিকত্ব ইস্যুতে। সাথে এনআরসির নাম করেও যথেষ্ট হয়রানী চলছে। তাই দেশভাগের বলি বাঙালি হিন্দুর একমাত্র রক্ষাকবচ হতে পারে এই নাগরিকত্ব বিল। এই বিল পাস হলে আসামের বাঙালিরা কিছুটা স্বস্তি পাবেন। তিনি আরো বলেন দ্বিজাতিতত্ত্বে দেশভাগ হয়েছে, নাগরিকত্বের প্রতিশ্রুতিও রয়েছে সংবিধানে কিন্তু দুঃখের বিষয় বাস্তুচ্যুতদের জন্য কোন বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়নি। তাই নাগরিকত্ব আইন বিল পাস হওয়া খুবই জরুরী। এদিন পৃথক বরাকের সেই অনেক পুরনো দাবির পক্ষে জোর গলায় সমর্থন জানালেন অতীন দাশ। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এখনই সঠিক সময় বরাক বিভাজনের, পৃথক রাজ্য হয়ে গেলে ঝামেলা অনেক কমে যাবে। এনআরসির নাম করে ব্রহ্মপুত্র ও বরাক উপত্যকার ভাষিক সংখ্যা সংখ্যালঘু জনগণকে যেভাবে চাপে রাখা হচ্ছে তাও তিনি সবিস্তারে বর্ণনা করেন।
তারপর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন আমরা বাঙালি দলের সাধারণ সম্পাদক সাধন পুরকায়স্থ। শ্রীপুর কায়স্থ বলেন, “কোন বাঙালি বিদেশি হতে পারেনা, দেশভাগের বলি বাঙালি হিন্দুরা । নেহেরু থেকে মোদি সবাই বাঙালি হিন্দুর সঙ্গে বৈষম্য করে চলেছেন, আজও নাগরিকত্ব নিয়ে অস্বস্তি কাটছেনা বাঙালি হিন্দুদের। বিশেষ করে অসমের বাঙালিরা বর্তমানে খুবই অস্বস্তিতে রয়েছেন; বাঙালি হিন্দু নাগরিকত্ব ইস্যুতে এবার ফয়সালা হওয়া দরকার। নাগরিকত্ব বিল নিয়ে যৌথ সংসদীয় কমিটি আসার পর থেকেই ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় প্রথম আওয়াজ ওঠে এ বিষয়টির বিরুদ্ধে । দেখা গেছে কর্মচারি পরিষদও আসুর সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিরোধ করছে নাগরিকত্ব বিলের। এক্ষেত্রে বরাকের কর্মচারি পরিষদ পৃথক অবস্থান নেওয়ায় তাদের ধন্যবাদ জানাই আমরা”
পৃথক বরাক দাবি কমিটির সভাপতি শুভদীপ দত্ত ওরফে মলয় বলেন “নাগরিকত্ব বিল অবিলম্বে পাস করতে হবে, এই বিল অবিলম্বে পাসের দাবিতে আমরা আগামী ৭ জুন আমরণ অনশনে বসব ক্ষুদিরাম মূর্তির পাদদেশে। পাশাপাশি নাগরিকত্ব বিলকে আমরা পূর্ণ সমর্থন জানাই, আমাদের দাবি এনআরসি নবায়নের নাম করে কোনো বাঙালি হিন্দুকে নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত করা চলবে না। তবে যদি কোন বাংলাদেশী মুসলিম ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের পর ভারতে আসেন তবে তাদের অবশ্যই বাংলাদেশে ‘পুশ ব্যাক’ করতে হবে- এক্ষেত্রে কোনো আপোষ করা চলবে না” । তিনি আরো বলেন যে ভাষা-সংস্কৃতি পৃথক হওয়া সত্বেও কেন অসমের সঙ্গে থেকে বরাক উপত্যকাবাসী অসমিয়া জাতীয়তাবাদীর চক্রান্তের শিকার হবে। এই উপত্যকায় অসমিয়া জনগোষ্ঠীর অস্তিত্ব অত্যন্ত নগণ্য, এই অবস্থায় অসমিয়াদের রক্ষাকবচের নামে এখানে অসম চুক্তি চাপিয়ে দেওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই। সংস্থার কর্মকর্তারা আরও বলেন, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে নির্যাতিত হয়ে এদেশে আশ্রয় নেওয়া উদ্বাস্তু হিন্দুদের নাগরিকত্ব প্রদানে এই কমিটির পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। গুজরাট এবং রাজস্থানের মত আমাদের এই উত্তর-পূর্ব ভারতেও নাগরিকত্ব আইন বলবৎ হওয়া জরুরী।
Comments are closed.