১৪ দিনেও জেসি ইন্টারন্যাশনালে পৌঁছয়নি ডি এস এর নোটিশ ! সচিব অতনু বললেন, 'লিগ্যাল সেলের পরামর্শ মেনেই পাঠানো হবে নোটিশ'
স্টেডিয়াম সংলগ্ন জেসি ইন্টারন্যাশনাল এর সঙ্গে চুক্তি নিয়ে ইতিমধ্যেই একটা ঝামেলা চলছে শিলচর জেলা সংস্থার। আগের কমিটির শেষ জিবিতেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল জে সির ভাড়া বৃদ্ধি করা হবে। গত বছর ৩১ অক্টোবর জে সির সঙ্গে ফাস্ট ফ্লোর এর চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছে শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থার। এরপর নতুন করে চুক্তি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সংস্থা। আগের কমিটির শেষ জিবিতে সেটা পাশও হয়েছিল। নতুন চুক্তি অনুসারে জে সি ইন্টারন্যাশনালের ফার্স্ট ফ্লোরের প্রতি স্কয়ার ফুটের ভাড়া ধার্য করা হয়েছিল ২৫ টাকা। সেই অনুসারে আগের কমিটির পক্ষ থেকে জে সি কর্তৃপক্ষের কাছে নতুন চুক্তির নোটিশ পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল। যদিও সেটা মানতে রাজি হয়নি জে সি কর্তৃপক্ষ।
ইতিমধ্যে জেসি ইন্টারন্যাশনালের সঙ্গে সংস্থার সেকেন্ড ফ্লোর এর চুক্তির মেয়াদ ও শেষ হয়েছে। নতুন কমিটির প্রথম জিবিতে জেসির সঙ্গে চুক্তির অর্থ আরও বাড়িয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। গত ৯ সেপ্টেম্বরের গভর্নিং বডির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল জে সির সঙ্গে নতুন করে ৫০ টাকা স্কয়ার ফুটের চুক্তি করা হবে। তবে সেটা শুধু জেসি ইন্টারন্যাশনাল এর জন্য। এই চুক্তিতে জেসি কর্তৃপক্ষ রাজি না হলে বিডিং ডেকে নতুন কাউকে আরো বেশি দরে চুক্তি করবে সংস্থা। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে জিবি বৈঠকের ১৪ দিন পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত জে সি ইন্টারন্যাশনাল কর্তৃপক্ষের কাছে নতুন চুক্তির নোটিশই পাঠায়নি সংস্থা!
গত ৯ সেপ্টেম্বরের জিবি বৈঠকে জেসি ইন্টারন্যাশনাল এর ইস্যুটি ছিল দশটি এজেন্ডার মধ্যে সবচেয়ে বড় হাইলাইট। আগের চুক্তি অনুসারে প্রতি স্কয়ার ফুট ৩ টাকা করে দিচ্ছিল জেসি। যা বাজার দর থেকে অনেক কম। বাজার দর অনুসারে জেসির কাছ থেকে ভাড়া আদায় করলে সংস্থা অনেকটাই ‘আত্মনির্ভর’ হয়ে উঠবে। সংস্থার কোষাগারে প্রতিমাসেই এসে ঢুকবে মোটা অংকের টাকা। এতে লাভবান হবে স্থানীয় ক্রীড়াঙ্গনই। কিন্তু এমন একটা গুরুত্বপূর্ণ ইসুতেও গড়িমসি করছে সংস্থার নতুন কমিটি। কেন এতদিনেও জে সি কর্তৃপক্ষর কাছে নোটিশ পাঠানো হলো না ? এর জবাবে সচিব অতনু ভট্টাচার্য জানান, সংস্থার ৫ সদস্যের লিগ্যাল সেলের পরামর্শ মেনেই জেসি কর্তৃপক্ষের কাছে নতুন চুক্তির নোটিশ পাঠানো হবে। কিন্তু লিগাল সেলের কজন সদস্য শহরের বাইরে থাকায় এখন পর্যন্ত নোটিশ তৈরি করা যায়নি। লিগ্যাল সেলের সঙ্গে বৈঠকে বসেই নতুন চুক্তির নোটিশ তৈরি করে নেবে সংস্থা। তারপর সেটা পাঠিয়ে দেওয়া হবে জেসি ইন্টারন্যাশনাল কর্তৃপক্ষের কাছে।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, গত ১০ সেপ্টেম্বর সাংবাদিকদের কাছে জিবি ব্রিফিং এর সময় সচিব অতনু জানিয়েছিলেন, সংস্থায় এখন নাকি ক্রাইসিস পিরিয়ড চলছে। কারণ সংস্থার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ জে সি সহ আরো একাধিক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান থেকে ভাড়া আসছে না। অথচ ১৪দিন আগে জিবি-তে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরও স্টেডিয়াম সংলগ্নে থাকা জে সি ইন্টারন্যাশনালে নোটিশটুকু পৌঁছানো গেল না?
জেসি ইন্টারন্যাশনালের ফার্স্ট ফ্লোরের আয়তন হবে আনুমানিক আট হাজার বর্গফুট। গতবছর অক্টোবরে চুক্তির মেয়াদ পর্যন্ত এর ভাড়া বরাদ্দ ছিল মাসে প্রতি বর্গফুট তিন টাকা করে। অর্থাৎ আট হাজার বর্গফুটে প্রায় চব্বিশ হাজার টাকা। এই মুহূর্তে সার্কিট হাউস রোডে এধরনের বাণিজ্যিক ভবনের ভাড়ার বাজার দর হচ্ছে প্রতি বর্গ ফুটে কমেও সত্তর থেকে আশি টাকা। ডিএসএ যদি নতুন চুক্তিতে একেবারে কম করেও প্রতি বর্গফুট চল্লিশ টাকা করে দর ধার্য করে তবে প্রতিমাসে ভাড়া হিসেবে গুনতে হবে প্রায় সোয়া তিন লক্ষ টাকা।
ইতিমধ্যে সংস্থার সঙ্গে জেসির সেকেন্ড ফ্লোরের চুক্তির মেয়াদ ও শেষ। সেটির দরও ছিল নামমাত্র। নতুন চুক্তি অনুসারে সেই ফ্লোরের প্রতি স্কয়ার ফুটের ভাড়া হবে ৫০ টাকা করে। দু’টো ফ্লোরের ভাড়া নবীকরণ যদি হয়, তবে মাসে গিয়ে দাঁড়াতে পারে প্রায় কমেও ছয় লক্ষ টাকা। বছরে ৭২ লক্ষ। কোষাগারে এই অর্থ এলে ডি এস এর চেহারাই বদলে যেতে পারে। বদলে যেতে পারে গোটা সিস্টেমটাই। এতে লাভবান হবে খেলোয়াড় থেকে শুরু করে স্থানীয় ক্লাবগুলোও। অথচ এমন একটা ইস্যুতে গরিমসি করছে সংস্থার নতুন কমিটি।
জিবি বৈঠকে হুট করে একলাফে ভাড়া দ্বিগুণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। এরপর থেকেই স্থানীয় ক্রীড়াঙ্গনে প্রশ্ন উঠছে, শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থা কি ইচ্ছে করেই আইনি জটিলতা সৃষ্টি করতে চাইছে? সেজন্যই কি একলাফে ভাড়া দ্বিগুণ করা হয়েছিল। অনেকেই মনে করেন, সংস্থার এমন সিদ্ধান্তের ফলে লাভ জেসি কর্তৃপক্ষরই হবে। এনিয়ে মামলা আদালতে গেলে মামলার নিষ্পত্তি হতে অনেক বছর লাগবে। তখন আদালতে পুরনো চুক্তি অনুসারেই ভাড়া দিয়ে যাবে জেসি কর্তৃপক্ষ। ফলে প্রশ্ন উঠছে ডি এস এ আইনি জটিলতা সৃষ্টি করে কি সংস্থার সবচেয়ে বড় আয়ের রাস্তাই বন্ধ করে দিচ্ছে?
Comments are closed.