Also read in

ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালের রায়ে ১০২ বছরের বৃদ্ধ কার্যত বন্দি, একটু সহানুভূতি কি তিনি পেতে পারেন না ?

আলজাইমারে আক্রান্ত ১০২ বছরের অসহায় বৃদ্ধকে অমানবিকভাবে ‘ডি’ ভোটার সাজিয়ে গত তিন মাস ধরে বন্দি করে রাখা হয়েছে শিলচর ডিটেনশন ক্যাম্পে। আলজাইমারে আক্রান্ত এই বৃদ্ধের চলাফেরার কোনো সামর্থ নেই, কাউকে চেনারও শক্তি নেই।একশ বছর আগে চন্দ্রধর দাস যখন জন্ম নিয়েছিলেন তখন শুধু ভারতবর্ষই ছিল; ছিলনা বাংলাদেশ বা পাকিস্তান। তাই তার কাছে ভারত বাংলাদেশ বা পাকিস্তানের ভৌগলিক, রাজনৈতিক সীমারেখা কোনও অর্থ বহন করে না। নামে ডিটেনশন ক্যাম্প হলেও এটা একটা বন্দি শিবির, যেখানে কারাবন্দিদের থেকেও অসহায় অবস্থায় রাখা হয় এদের। শতায়ু এই বৃদ্ধের কাছে ৫ অক্টোবর,১৯৬৬ ইং তারিখে আগরতলা থেকে ইস‍্যু করা নাগরিকত্বের প্রমাণ পত্র(সিটিজেনশিপ সার্টিফিকেট) রয়েছে। । এই অবস্থায় তাকে ডি-ভোটার সাজিয়ে বন্দি করে রাখা হয়েছে। ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালের ২/১/২০১৮ তারিখে প্রদত্ত রায়ে(কেস নং ৯৯৭/১৬) উল্লেখ করা হয়েছে যে যেহেতু তিনি তার ভারতীয় নাগরকিত্বের সমর্থনে যথেষ্ট প্রমাণ দাখিল করতে পারেন নি তাই তাকে অবৈধ প্রব্রজনকারি ঘোষণা করা হলো । একজন স্মৃতিভ্রংশ রোগী, যার বয়স শতাধিক তিনি কি করে রাষ্ট্রশক্তির কাছে প্রমাণ করবেন যে তিনি ভারতীয়। তার নামের ডি ভোটার মামলাটি শিলচরের ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে ৬-এ বিচারাধীন, কিন্তু ট্রাইব্যুনাল ৬-এ সরকারি আইনজীবী না থাকায় আটকে আছে। এই অবস্থায় চন্দ্রধর দাসের মেয়ে নিয়তি রায় কাছাড়ের জেলা শাসকের কাছে এক আবেদন জানিয়ে তাকে শিলচর মেডিক্যাল কলেজ বা কোনো সরকারি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে অনুরোধ জানিয়েছেন। সর্বশেষ খবরে জানা গেছে যে তাকে প্রশাসনের উদ্যোগে হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।

 

The daughter is moving pillar to pillar to support her father

 

কাছাড় জেলার ধলাইয়ের বড়ই বস্তিতে বসবাসরত চন্দ্রধর দাসের পিতার নাম শিরিশ দাস।

এদিকে রাজ্যের বন, পরিবেশ ও মৎস্য বিভাগের মন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্য এ ব্যাপারে আমাদের প্রতিনিধিকে স্পষ্ট ভাবে বলেন,
“নাগরিকত্ব সমস্যা সমাধানের জন্য যেসব প্রক্রিয়া সরকারি তত্ত্বাবধানে চলছে সেসব কাজে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি রেখে চলা দরকার। ১০২ বছরের বয়োজ্যেষ্ঠা ব্যক্তিকে ডিটেনশন ক্যাম্পে রেখে নাগরিকত্ব পরীক্ষা করার পক্ষে আমি অভিমত পোষণ করিনা। আমার আবেদন, বৃদ্ধ ব্যক্তিটির সঙ্গে মানবিক ভাবে আচরন করা হোক। তাঁর বিরুদ্ধে যে মামলাটি রয়েছে তা সহজে নিষ্পত্তি করে তাঁকে সুরক্ষিত ভাবে বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হোক। আমি এব্যাপারে সংস্লিষ্ট আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলব।”

অন্যদিকে এই নিয়ে শিলচরের সাংসদ সুস্মিতা দেবের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি আমাদের জানান, “১০২ বছরের বৃদ্ধ ব্যক্তির বিরুদ্ধে যদি অভিযোগ থেকেও থাকে, তাঁর সঙ্গে মানবিক ব্যবহার করা রাষ্ট্রের কর্তব্য। বৃদ্ধ ব্যক্তির কাছে বেশ কিছু তথ্য রয়েছে যা প্রমাণ করে যে তিনি ভারতীয়, এটা শুনেছি। তবে তিনি যদি এব্যাপারে ব্যর্থও হন, তবু তাঁর পাশে রয়েছি আমরা। আমি নিজে উনার পরিবারের সঙ্গে দেখা করবো এবং আইন মেনেই যাতে ব্যক্তিটিকে এই যন্ত্রণা থেকে উদ্ধার করা যায় এই ব্যবস্থা করব।”

এখানে উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি শিলচরের অদূরে নির্বাচনী সভায় এসে ঘোষণা করেছিলেন যে তিনি ডিটেনশন ক্যাম্প গুড়িয়ে দেবেন, তাও খুবই স্বল্প সময়ের মধ্যে ।সেই ঘোষণা ঘোষণাই রয়ে গেল। চন্দ্রধর দাস এখনও অসহায় অবস্থায় জীবনের অন্তিম প্রহর গুণছেন।

 

Documents submitted by Chandradhar Das

Comments are closed.