Also read in

'মিসেস ইণ্ডিয়া ব্রেভ' খেতাব জিতে নজির গড়লেন শিলচরের মেয়ে সুকন্যা

‘ব্রেভ-বোল্ড-বিউটিফুল’ এই তিনটি শব্দের মাধ্যমে সাহসী বার্তা নিয়ে প্রতি বছর আয়োজিত হয় ‘মিসেস ইণ্ডিয়া ইউনিভার্স-সি ইজ ইণ্ডিয়া ২০১৮’ প্রতিযোগিতার। আর এই মর্যাদাসম্পন্ন আসর থেকে ‘মিসেস ব্রেভ’ খেতাবটি ছিনিয়ে আনলেন শিলচরের মেয়ে সুকন্যা ভট্টাচার্য সুরি। যা বরাক উপত্যকা সহ উত্তরপূর্বের ক্ষেত্রে অনন্য নজির।
দেশের অন্যতম মর্যাদাসম্পন্ন সুন্দরী প্রতিযোগিতা ‘মিসেস ইণ্ডিয়া ইউনিভার্স ২০১৮’  এর ফাইনালে নিজের স্থান নির্ধারিত করে আগেই ইতিহাস গড়েছিলেন শিলচরের মেয়ে সুকন্যা। বরাক উপত্যকা থেকে তিনিই প্রথম এই আসরের চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছার খ্যাতি অর্জন করেন। ১২ জুলাই থেকে ১৪ জুলাই দিল্লিতে ফাইনালটি অনুষ্ঠিত হয়। সারা দেশ থেকে মোট পয়তাল্লিশ জন প্রতিযোগি ফাইনালে বিভিন্ন স্তরে লড়াই করেন। এতে বিজয়ী হয়েছেন লুবনা খান। তিনি ডিসেম্বর মাসে ম্যানিলাতে হওয়া ‘মিসেস ইউনিভার্স ২০‍১৮’ আসরে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করবেন। তবে প্রতিযোগিতার অন্যতম খেতাব মিসেস ব্রেভ জেতাও মূল প্রতিযোগিতা জেতা থেকে কোনও অংশেই কম নয়।
বিবাহসূত্রে নিউজিল্যান্ডের বাসিন্দা সুকন্যা মালুগ্রামের প্রয়াত প্রকাশক হরিসাধন ভট্টাচার্যের নাতনি এবং শিলচর মহিলা কলেজের অধ্যাপিকা  প্রয়াত সুমিতা ভট্টাচার্যের মেয়ে।
তার কথায়, প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ সুন্দরী প্রতিযোগিতায় জিতে ফ্যাশন দুনিয়ায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে নয়। সমাজের বিভিন্ন অন্ধকারের বিরুদ্ধে আওয়াজ জোড়ালো করতে এবং মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতেই আসরটিতে অংশ নেন তিনি। এবার তার আওয়াজটি আরও জোরালো হয়েছে। সারা দেশ থেকে সাহসী এবং সমাজ সচেতন বিবাহিত মেয়েরা প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন, তাদের বিভিন্ন অনুভূতি আদানপ্রদান করেছেন। এতে পারিবারিক হিংসা রোধ করার যে সংকল্প নিয়েছিলাম তা আরও দৃঢ় হয়েছে বলে তিনি জানালেন।
 দাদু-দিদা এবং মায়ের কাছেই বড় হয়েছেন সুকন্যা আর তার ছোট বোন শুয়া। মনোযোগী ছাত্রী হওয়াযর পাশাপাশি নিবিড়ে গানের চর্চা করতেন সুকন্যা। মায়ের মৃত্যুর পর শক্ত হাতে পরিবারকে সামাল দেন। পরে দিল্লির ছেলে ভুপেশ সুরিকে বিয়ে করে নিউজিল্যান্ড পাড়ি দেন। ছেলে শিব এবং স্বামীকে নিয়ে চুটিয়ে সংসার করার পাশাপাশি বোন শুয়া আর দাদু দিদারও পাশেও ছিলেন সবসময়।
তিনি একজন হোটেল ম্যানেজমেন্টের ছাত্রী, নিউজিল্যান্ডের ‘ওয়ার্ল্ড ইন তাজ’ এবং ‘মারকিউরি’র মতো ৫-তারা হোটেলে কাজ করেছেন। এছাড়াও ব্যাংক অব নিউজিল্যান্ডেও কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। ভারতীয় টাকায় ৪৫ লক্ষ টাকার বার্ষিক প্যাকেজের চাকরি ছেড়ে দাদুর বানানো বিখ্যাত বানী প্রকাশনীকে আবার চাঙ্গা করে তুলতে স্বামী ভুপেশ সুরি এবং ছেলে শিবকে নিয়ে গতবছর শিলচর আসেন সুকন্যা। বিভিন্ন সামাজিক কাজের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে রাখেন এবং এর অন্যতম হচ্ছে ডমেস্টিক ভায়োলেন্স বা পারিবারিক হিংসার বিরুদ্ধে তার লড়াই।

 

‘মিসেস ইউনিভার্স ইন্ডিয়া ২০১৮’ এর ফাইনালে পৌঁছে ইতিহাস গড়লেন শিলচরের মেয়ে সুকন্যা 

তার  কথায়, ছোটবেলা থেকে বিভিন্ন ভাবে চারপাশের মানুষকে অত্যাচারের শিকার হতে দেখেছি। যখন সামর্থ্য হয়েছে নিজের মতো করে মানুষের পাশে দাড়ানোর চেষ্টা করেছি। তবে একটু বেশি কিছু করার তাগিদ ছিল। যখন এই প্রতিযোগিতার কথা শুনলাম, জানতে পারলাম যে তারা সামাজিক অত্যাচারের বিরুদ্ধে এক অভিনব উপায়ে আওয়াজ তুলে যাচ্ছেন। তখন এতে অংশ নেওয়ার কথা ঠিক করি। প্রথমদিকে নিজেই ভিডিও বানিয়ে ওনলাইনে মিসেস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতায় পাঠাই। তবে ভাবতেই পারিনি যে এভাবে ফাইনাল পর্যন্ত পৌঁছে যাবো। 
এসব ব্যাপারে আমার স্বামী ভুপেশ সব সময় পাশে থেকে সাহায্য করে গেছে। সুন্দরী প্রতিযোগিতায় কি করে নিজেকে তুলে ধরতে হয় সেসব তো জানতামই না। তবে আমার লক্ষ্য হচ্ছে পারিবারিক অত্যাচারের বিরুদ্ধে লড়ে যাওয়া। সমাজে পারিবারিক অত্যাচারের বিরুদ্ধে আওয়াজ গড়ে তোলাই আমার আসল উদ্দেশ্য।
বিদেশে বাংলা গানের আসরে অনেকবার মায়ের শেখানো গান গেয়েছেন তিনি। এখনও প্রিয় দাবা খেলা নিয়ে সময় কাটাতে ভালবাসেন সুকন্যা।
প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে গিয়ে দেশের সেরা ডিজাইনারদের সঙ্গে সময় কাটাতে পেরেছেন। নিজেকে অনেক বেশি গোছাতে শিখেছেন। পাশাপাশি সৌন্দর্য কিভাবে সমাজের মানুষের কাছে সহজে বার্তা পৌঁছে দিতে সাহায্য করে তা বুঝতে পেরেছেন। এবার নিজের উপলব্ধি কাজে লাগিয়ে আরও বেশি শক্তি নিয়ে এগিয়ে যাবেন সুকন্যা।
রবিবার দিল্লি থেকে ব্যস্ততার মধ্যেও কথা বলেন সুকন্যা। এতো জাকজমক এবং আনন্দের মধ্যেও তার মন শিলচরেই পড়ে আছে বলে জানালেন তিনি।

Comments are closed.