তিন হাজার মানুষ নিয়ে শক্তি প্রদর্শন পুরসদস্য অসীম দাসে, ২৪ ঘণ্টায় দোষীদের না হলে সড়ক অবরোধের হুমকি
পুরসদস্য অসীম দাস নির্দোষ, তাঁর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক চক্রান্ত চলছে। তরুণ ছাত্রছাত্রীরা দিনের আলোয় অশ্লীল কার্যকলাপ করছিল, এসবে বাঁধা দেওয়াতেই তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আমরা এর সুবিচার চাই, ২৪ ঘন্টার মধ্যে দোষীদের গ্রেফতার না করলে হাইলাকান্দি রোড এবং সোনাই রোড অবরোধ করে আন্দোলন করা হবে”, এভাবেই হুমকি ছুঁড়ে দিলেন ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের কয়েক হাজার মানুষ।
প্রায় তিন হাজার মানুষ শনিবার সন্ধ্যায় হাইলাকান্দি রোড হয়ে মিছিল করে গিয়ে রাঙ্গিরখারি থানা ঘেরাও করেন। তাঁদের অভিযোগ, অসীম দাসের বিরুদ্ধে মামলা করার মানে এলাকার প্রত্যেক নাগরিকের বিরুদ্ধে মামলা করা। অথচ জনবসতি এলাকায় এসে দিনের আলোয় অসংযত কার্যকলাপ করে তাঁরাই এবার মামলা করছে।
উল্লেখ্য, শহরের স্বচ্ছতা এবং পরিবেশের উন্নতির জন্য একদল পড়ুয়া মিলে বৃহস্পতিবার এক অভিযান আয়োজন করেছিল। তবে তাঁরা শিলচর পুরসভার ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে এসে পুরসদস্য অসীম দাসের কাছে শারিরীক ভাবে নিগ্রহের শিকার হয়েছে বলে অভিযোগ তাঁদের।
এদিন বিকালে রাঙিরখাড়ি থানায় অসীম দাসের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন তারা। দলটিতে বিভিন্ন বয়সের ছাত্রছাত্রী ছিল যারা হোয়াটসঅ্যাপে স্বচ্ছ শিলচর নামের গ্রুপ বানিয়ে স্বচ্ছতা অভিযান চালানোর পরিকল্পনা করেছিল। তাঁরা জেলাশাসক ডাঃ এস লক্ষ্মণন, পুরপতি নীহারেন্দ্র নারায়ণ ঠাকুর এবং পুরসভার কনসারভেন্সি বিভাগের দায়িত্বে থাকা পুরসদস্য রাজেশ কুমার দাসের সঙ্গে ও যোগাযোগ করেছিল। প্রথমে ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে কাজটি শুরু করার ইচ্ছা প্রকাশ করলে পুরপতি তাঁদেরকে পুরো কমিশনার অসীম দাসের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। তাই তারা বৃহস্পতিবার হাইলাকান্দি রোডে অসীম দাসের কার্যালয়ে পৌছায়। সেখানে নিজেদের পরিকল্পনার কথা জানালে, তিনি প্রথমেই এটি খারিজ করে দেন। তরুণ-তরুণীরা এব্যাপারে আরও কথা বলতে চাইলে অসভ্য ভাষায় গালাগাল দিতে শুরু করেন অসীম। এতে তরুণরা বেরিয়ে রাস্তায় চলে আসেন। তবে হঠাৎ করেই অসীম এবং তার সহযোগীরা এসে ছাত্রছাত্রীদের মারতে শুরু করে। তাঁরা মেয়েদের পর্যন্ত মারতে থাকে। এতে পালিয়ে বাঁচে তরুণ দলটি। সঙ্গে সঙ্গে রাঙিরখাড়ি থানায় এজাহার দিয়ে অভিযোগ দায়ের করে তারা। পাশাপাশি জেলাশাসক, পুরপতি এবং বিজেপির বিভিন্ন নেতাদেরও ব্যাপারটি জানানো হয়।
তবে অসীম দাসের মতে, দুই তরুন যুগল এদিন প্রকাশ্যে এমন কিছু কার্যকলাপ করছিল যা এলাকায় সাধারণ মানুষের সহ্য হয়নি এবং তারাই এদের উপর চড়াও হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতেই তাঁকে হস্তক্ষেপ করতে হয়। তিনি বলেন, দাস কলোনি সংলগ্ন এলাকায় এদিন সকাল সাড়ে এগারোটা নাগাদ ঘনিষ্ঠভাবে মেলামেশা করতে দেখা যায় চার তরুন-তরুণীকে । এলাকার মানুষ এতে অস্বস্তি বোধ করেন, তারা বাঁধা দিতে গেলে তরুণীরা বাজে ভাষায় কথা বলে। তারা বলে ‘এটা তোমাদের বাবার রাস্তা নাকি, আমরা প্রাপ্তবয়স্ক, আমাদের আটকানো ঠিক নয়’। এতে এলাকার মানুষ রেগে গিয়ে তাঁদের মারতে শুরু করেন। “পরিস্থিতি সামাল দিতে আমি তড়িঘড়ি করে সেখানে যাই। তারা আমাকেও গালিগালাজ করে এবং পরে আমার নামে মামলাও করেছে বলে শুনেছি। পুলিশ নিরপেক্ষ তদন্ত করুক তাহলেই আসল তথ্য বেরিয়ে আসবে।”
তবে এই জনোজোয়ারকে অনেকেই শক্তি প্রদর্শন বলে মনে করছেন। পুরপতি নীহারেন্দ্র নারায়ণ ঠাকুর এবং জেলাশাসক জানান যে ওই তরুণ-তরুণীরা আগেই জানিয়েছিল তাঁরা শহরের স্বচ্ছতা নিয়ে কাজ করতে চায়। তবে এধরনের ঘটনা অবাঞ্ছিত এবং দুঃখজনক বলে মনে করেন তারা। পুলিশ সুপার রাকেশ রৌশন থানা ঘেরাওয়ের ঘটনাটির নিন্দা জানিয়েছেন। তবে বিষয়টির নিরপেক্ষ তদন্ত হবে বলে আস্বাস দেন তিনি।
Comments are closed.