আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আবারও যৌন নির্যাতনের অভিযোগ: বিভাগীয় প্রধানের পদ থেকে অপসারিত ড: সুদীপ্ত সরকার
গুরু পূর্ণিমার দিন সর্বত্র যখন ছাত্রছাত্রীরা নিজেদের শিক্ষক শিক্ষিকাকে গুরু জ্ঞানে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছে ঠিক তার আগের দিন আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপক যৌন নির্যাতনের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিভাগীয় প্রধানের পদ থেকে অপসারিত হলেন। আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাগ্রিকালচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান ড:সুদীপ্ত সরকারের বিরুদ্ধে তারই ছাত্রীকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। আশ্চর্য হলেও আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরনের অভিযোগ নতুন নয়। এর আগেও অন্য অধ্যাপকের বিরুদ্ধেও যৌন নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছিল। সমাজের মেরুদন্ড হিসেবে চিহ্নিত শিক্ষকদের এধরনের ঘটনায় বারবার জড়িত থাকার অভিযোগে স্বভাবতই সবাই স্তম্ভিত।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, সুদীপ্ত সরকার নির্যাতিতা মেয়েটিকে নানাভাবে বারবার যৌন প্রস্তাব দিয়েছেন। মৌখিক পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে সুদীপ্ত মেয়েটিকে তার প্রস্তাবে রাজি করানোর চেষ্টা করেন। আরো জানা যায়, মেয়েটিকে তিনি অফিস কক্ষে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসিয়ে রাখতেন। হোয়াটসঅ্যাপেও অনেক সময়ই যৌন উত্তেজক কথাবার্তা লিখেছেন বলে অভিযোগে প্রকাশ। ফেসবুকের মত সমাজিক মাধ্যমেও এই অধ্যাপক মেয়েটিকে নানাভাবে উত্যক্ত করেন বলে অভিযোগে জানা যায়। ডিগ্রী পরীক্ষা উতরে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে তাকে এই প্রস্তাবে রাজি করানোরও চেষ্টা চলে।
মেয়েটি এ ধরনের ঘটনাকে সামলে উঠতে না পেরে অসুস্থ হয়ে পড়ে। মেয়েটিকে রীতিমত মানসিক অবসাদের শিকার হয়ে অনেক দিন চিকিৎসাধীন থাকতে হয় হাসপাতালে।
গত কয়েক মাস ধরে এভাবে চলতে থাকার পর মেয়েটি এবার ঐ অধ্যাপকের বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস সঞ্চয় করে। তবে এবার সে এক্ষেত্রে আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইউনিয়নকেও সঙ্গে পায়। ছাত্র ইউনিয়নের সহযোগিতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা বৃহস্পতিবার এই ঘটনার প্রতিবাদ স্বরূপ রেজিস্ট্রার ও ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যকে ঘেরাও করে। তারা সুদীপ্ত সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে দাবি জানায়। এরপরই আসাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই অধ্যাপকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয়। বলা যায় পড়ুয়াদের চাপের কাছে নতি স্বীকার করে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য সুদীপ্ত সরকারকে বিভাগীয় প্রধানের পদ থেকে অপসারণ করেন। তবে শুধু অপসারণ নয় এই অধ্যাপককে চাকুরি থেকে বরখাস্ত করার দাবি জানায় ছাত্র ইউনিয়ন।
জানা যায়, এর আগেও এই ছাত্রীটি সুদীপ্ত সরকারের বিরুদ্ধে মুখ খোলার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে তাকে অভিযোগ প্রত্যাহার করতে বাধ্য করা হয়েছিল।
বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইউনিয়নের সাংবাদিক সম্মেলনে অ্যাগ্রিকালচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের এই পড়ুয়া গত কয়েক মাস ধরে তার উপর চলা নির্যাতনের বিষয়ে বিস্তারিত ভাবে উল্লেখ করে। ছাত্রীটি জানায় যে সুদীপ্ত সরকারের বিরুদ্ধে এর আগেও বারবার অভিযোগ জানানো সত্ত্বেও কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।
এদিকে ভয়-ভীতি দেখানোর জন্য অভিযুক্ত অধ্যাপকের দুজন ঘনিষ্ঠের বিরুদ্ধে পুলিশ ফাঁড়িতে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে হয়েছে বলেও জানান ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মিলন দাস। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে নির্যাতিতা ছাত্রী।
এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, এর আগেও আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক নিরাকার মল্লিকের বিরুদ্ধেও যৌন নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছিল। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক্সিকিউটিভ কাউন্সিল এই অধ্যাপককে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছিল। যদিও এ সিদ্ধান্ত এখনও কার্যকর করা হয়নি।অথচ তার আগেই এধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটল আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ে।
এভাবে বারবার অধ্যাপকের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ নিসন্দেহে বিশ্ববিদ্যালয় তথা সমাজের জন্য মঙ্গল জনক নয়।
Comments are closed.