চলছে গরু সহ অন্যান্য পশু, নেশার ট্যাবলেট, ড্রাগস চোরাচালানের রমরমা : করিমগঞ্জ সীমান্ত কতটুকু সুরক্ষিত!
করিমগঞ্জে আন্তর্জাতিক সীমান্তের দায়িত্বে থাকা বিএসএফের ভূমিকা আজ প্রশ্নচিহ্নের মুখে । সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়ার কড়া সুরক্ষাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে ভারত বাংলাদেশ সীমান্তের সর্বত্রই যেন বাংলাদেশিদের দাপট । গরু পাচার, চোরাচালান, অনুপ্রবেশ সহ নানা অপরাধ সংগঠিত হচ্ছে প্রতিদিন, কিন্তু ঠুঁটো জগন্নাথের ভূমিকায় যেন বিএসএফ । এমনিতেই সীমান্ত শহর হিসেবে করিমগঞ্জ সংবেদনশীল জেলা ; কিন্তু সীমান্ত টপকে অসাধু পন্থা অবলম্বন করে প্রায়শই এ জেলায় ঘটে থাকে চোরাচালান ।
বর্তমানে করিমগঞ্জ জেলায় সীমান্ত সুরক্ষার দায়িত্ব বিএসএফের ০৭ এবং ৫৩ নং ব্যাটালিয়নের হাতে । বিগত চার মাস ০৭ ব্যাটেলিয়ন দায়িত্বে থাকার পর এবার দায়িত্বে আসছে ৫৩ নং ব্যাটেলিয়ন । এই রদ বদলের জন্য এ্যাডহক কোম্পানি তৈরি করে কিছু কিছু এলাকায় দায়িত্বে রাখা হয়েছে ।
তবে শুধু গরু পাচার নয় একই সঙ্গে সীমান্ত এলাকায় বসবাস করা লোকদের গৃহ পালিত পশু ও চুরি হচ্ছে । প্রতিবছরই কোরবানির ঈদের প্রাক্কালে করিমগঞ্জ জেলার ভারত-বাংলা সীমান্তে গরু মহিষ চুরির হিড়িক পড়ে, ব্যাতিক্রম নয় এবার ও। করিমগঞ্জ জেলার পাথারকান্দি থানাধীন আদমটিলা, লংগাই,পুতনি,মেদলি,কুকিতলালখিরা প্রভৃতি সহ নিলামবাজারের পশ্চিম প্রান্ত ,বর্মাগুল, ভেরিছড়া, বারোপুঁজি, গান্ধাই সহ আশপাশ এলাকায় এবং করিমগঞ্জ সদর থানার অন্তর্গত লাফাসাইল, দশনলি, জারাপাতা লক্ষীবাজার সহ বেশ কিছু এলকায় গরু পাচার ও চুরির হিড়িক পড়েছে। শুধু আদমটিলা থেকে গত এক সপ্তাহে ২৫ থেকে ৩০ টি গরুচুরির ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্য একটি শিবের ষাঁড়ও রয়েছে। অভিযোগ বাংলাদেশী চোরের দল এসে এই চুরিকান্ড সংঘটিত করছে।স্থানীয়রা জানান,ঈদ ছাড়াও গত এক বছরে প্রায় দেড় হাজারের অধিক গরু চুরি হয়েছে বিএসএফ’য়ের নাকের ডকা দিয়ে। বিগত মে মাসে ০৭ বিএন বিএসএফের অধীনে থাকা সন্দেশ ক্যাম্পে লাগোয়া বাড়ী থেকেই অনুরুপ ভাবে চুরি হয় জোড়া মহিষ । ফেন্সিং কেটে দুষ্কৃতিকারীদের দল মহিষ নিয়ে যায় ওপারে । শেষে অবশ্য পক্ষকালের মধ্যে চাপে পড়ে বিএসএফ বাংলাদেশ থেকে উদ্ধার করে মহিষ । মাস তিনেক আগে উত্তর করিমগঞ্জের বলিদারা গ্রামের গৃহস্থের বাড়ী থেকে বলদ গরু চুরি হলে শেষে বাংলাদেশে পাচার করা হয়েছে বলে জানা যায় । তেশুয়া সীমান্তে তখন ধরা পড়ে বর্ডার রোডের নীচে দিয়ে হিউম পাইপের সুড়ঙ্গ দিয়ে এসব পাচার করে চোরাকারবারিরা । নদী পথ, সড়ক পথ, সুড়ঙ্গ, নালা সব জায়গাতেই যেন পুরো অবাধ বিচরণ চোরাকারবারি দের । বাংলাদেশে পাচার করতে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের পন্থা অবলম্বন করে এরা ।
গরু পাচার মানব পাচারের সাথে জমে উঠেছে মদ, নেশাজাতীয় ট্যাবলেট, যৌন উত্তেজক ট্যাবলেটের ব্যবসা ও । প্রায় সময় নদীর জল থেকে পলিথিনের প্যাকেটে ফেলে দেওয়া নেশা জাতীয় উরুকল নামের ট্যাবলেট, কফ শিরাফ, বিদেশি মদ আটক করে থাকে বিএফএফ । স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠে যে বর্ডার রোডে রাত্রের অন্ধকারের ফ্লাড লাইট জ্বললেও কিভাবে ফেন্সিং কাটার সুযোহ পায় চোরাকারবারিরা । এক কিলোমিটার পর পর পোস্ট থাকলেও কেনই বা নিধিরাম সর্দারের ভূমিকায় সীমান্ত সুরক্ষা বাহিনী । গত একমাস থেকে ৫৩ বিএসএফের আওতায় থাকা আদমটিলা এলাকাতে গরু পাচারের মাত্রা অনেকটা বৃদ্ধি পেয়েছে । পাথারকান্দি থানায় গরুচুরির ঘটনার একাধিক মামলা করার পরও ফাইল বন্দি হয়ে পড়ে রয়েছে মামলাগুলি। নাম মাত্র তদন্ত করে লালফিতে বন্দি করে রাখা রয়েছে ফাইল গুলো। গরীব খেটে খাওয়া শ্রমিকদের মামলা গুলি । করিমগঞ্জের ভারত-বাংলা সীমান্ত বিএসএফের ভূমিকা নিয়ে সন্ধেহ দেখা দিয়েছে কারন গরু মহিষ এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নানা অসামাজিক কাজ যেমন ড্রাগস পাচার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে ।
এখানে প্রশ্ন থাকছে ফ্লাড লাইট, ঘন ঘন সেন্ট্রি পোস্ট, দিনে রাতে বিএসএফ স্পেসিয়াল টিমের টহল থাকা সত্বেও কিভাবে বর্ডার রোডকে কাজে লাগায় চোরাকারবারিরা । এক্ষেত্রে বিভিন্ন এলাকায় বিএফএফের সঙ্গ দিতে আসাম পুলিশের চৌকি গুলিতে সেকেন্ড লাইন ডিসেন্স নিয়োগ থাকলেও এদের ভূমিকাই বা কি ? না দুটি সুরক্ষা এজেন্সি কে ম্যানেজ করে সীমান্তে অব্যাহত চোরাচালান। সীমান্ত সুরক্ষা নিয়ে কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকারের সদিচ্ছা থাকলে ও স্থানীয় সুরক্ষা এজেন্সিগুলোর ভূমিকা একেবারেই উৎসাহব্যঞ্জক নয়।
Comments are closed.