
পশুবলি প্রথার বিরুদ্ধে কল্পার্নব আজ সত্যাগ্রহে শ্যামানন্দ আশ্রমে, বিতর্ক
*পশুবলি প্রথার বিরুদ্ধে কল্পার্নব আজ সত্যাগ্রহে শ্যামানন্দ আশ্রমে, বিতর্ক*
পশুবলি পূণ্য না অপরাধ, ধর্মীয় আচরণ না নৃশংসতা , এই নিয়ে বিতর্ক চলছে অনেকদিন ধরেই। পণ্ডিতেরা বিভিন্ন শাস্ত্রীয় উদ্ধৃতি দিয়ে এর যৌক্তিকতা তুলে ধরছেন, আবার পশুপ্রেমী তথা অনেক সাধারণ মানুষ এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠছেন। আবার অনেক পশুপ্রেমীরাও আছেন যাদের রেস্তোরাঁয় গিয়ে চিকেন বিরিয়ানি বা কষা মাংস না হলে একেবারেই চলে না। বরাক উপত্যকায়ও এই বিতর্ক বেশ জোরদার হয়ে উঠেছে এনআইটির এই ছাত্রটির সৌজন্যে। সপ্তমীতে কল্পার্নব নব কাঁচাকান্তি মন্দিরের সামনে একেবারেই একা পশু বলির বিরুদ্ধে সত্যাগ্রহ করেন। আজ মহা নবমীতে শিলচরে শ্যামানন্দ আশ্রমের সামনেও সত্যাগ্রহ করবেন এমনটাই জানিয়েছেন। এখানে উল্লেখ করা যায় যে সব শ্যামানন্দ আশ্রমে নবমীতে মোষ বলি দেওয়া হয়। আজ দুপুরেও মোষ বলি হওয়ার কথা রয়েছে।
বরাক বুলেটিনের প্রতিনিধি এই নিয়ে কল্পার্নব গুপ্ত এবং আরো দুই একজন বুদ্ধিজীবীর মতামত গ্রহণ করেছেন।
‘সত্যাগ্রহী’ কল্পার্নব জানালেন, পশু বলির বিরুদ্ধে তার আন্দোলনের এই চিন্তাধারা গত কয়েক মাস ধরেই মনে দানা বেঁধেছে ; কোনও সংস্থার পক্ষ থেকে তিনি এটা করছেন না। তিনি আরও জানান, “দুর্গাপুজোয় অসংখ্য পশু বলি হয়ে থাকে, তাই আমি প্রতিবাদের জন্য এই সময়টাকে বেছে নিয়েছি। পশু বলি একটি বর্বর প্রথা, কিছু পাওয়ার ইচ্ছায় ঈশ্বরের নামে বলি দেওয়াকে কিছুতেই সহ্য করা যায় না । আমি চাই এই প্রথা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করা হোক, সপ্তমীতে আমি কাঁচা কান্তি মন্দিরের সামনে প্রতিবাদ জানিয়েছিলাম। আজ আমি শ্যামানন্দ আশ্রমের সামনে প্রতিবাদ জানাবো, আজ ওখানে মোষ বলি হওয়ার কথা”।
আমাদের প্রতিনিধি জিজ্ঞেস করলেন যে,
*গত কয়েক মাস ধরে যদি আপনার মনে এটা এসে থাকে, তবে ঈদুজ্জোহার সময় প্রতিবাদ করলেন না কেন* উত্তরে গুপ্ত জানালেন, ধর্মীয় সংস্কার সাধন কোনো বাইরের লোক করতে পারে না, নিজের ধর্মের সংস্কার নিজেই করতে হয়। যারা ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী তারাই এই ব্যাপারটা দেখবেন, আমি না । তাছাড়া ইসলাম একটা বিশ্বাসকে ভিত্তি করে গড়ে ওঠা ধর্ম যা হিন্দু ধর্ম নয়। গুপ্ত আরও জানালেন, এখন পর্যন্ত তিনি কোন সংগঠন বা কোন ব্যক্তির পক্ষ থেকে কোন ধরনের বিরোধিতার সম্মুখীন হননি । যদি সে রকম কিছু হয় তাহলে তিনি প্রশাসনের সহায়তা চাইবেন, তবে তার এই আন্দোলন নিয়ে প্রশাসনের সাথে এখন পর্যন্ত কোনো যোগাযোগ করেননি বলে তিনি জানালেন।
আমরা তারপর কথা বললাম শ্যামানন্দ আশ্রমের দুর্গাপুজোর পুরোহিতের সঙ্গে। তিনি আমাদের জানালেন, “আশ্রমে মহিষ বলি শাস্ত্রীয় বিধি মেনে যথোচিত ভাবে সম্পন্ন হবে। আমি প্রতিদিন চণ্ডীপাঠ করছি এবং চন্ডীতেও বলির কথা লেখা আছে।”
“বেদে উল্লেখিত বিভিন্ন শাস্ত্রীয় বিধান গুলো খুবই জটিল, তাই আমরা সহজ ভাষায় বলতে পারি, আমরা যা কিছু খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করি তা সব আমরা ঈশ্বরের প্রতি নিবেদন করে গ্রহণ করে থকি ; তা নৈবেদ্যই হোক বা পশুই হোক। ‘কৃষ্ণ বাঁশি বাজাবেন, আর মা কালী পাঠাও খাবেন’ ।পশু প্রেমীরা যদি সর্বত্র পশু নিধন বন্ধ করতে পারেন এবং সবাইকে শাকাহারি বানিয়ে দিতে পারেন, তবে তো ভালোই। আর নইলে এটা একটা সস্তা জনপ্রিয়তা অর্জনের কৌশল ছাড়া আর কিছুই নয়।”
“শ্যামানন্দ আশ্রম একটি ব্যক্তিগত সম্পত্তি, এতে ভক্তরাও আসেন। এটা কোন সংস্থা বা কারোর সৌজন্যে গড়ে ওঠেনি। তাই ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে, ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা যায় না। কারুর কোনো প্রতিবাদ করার থাকলে আশ্রমের প্রধান জিতেন্দ্র ব্রহ্মচারীকে লিখে পাঠাতে পারেন, কারণ তিনি সাধারণের সামনে আসেন না। তিনিই এই ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকারী”, বলে গেলেন একশ্বাসে শিক্ষক পুরোহিত।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বর্তমানে রেলওয়েতে কর্মরত এনআইটি প্রাক্তন ছাত্র এই বিষয়ে মতামত ব্যক্ত করে বললেন, “আমি বেদের বিভিন্ন অধ্যায়গুলো খুব ভালোভাবে অধ্যয়ন করেছি এবং তাই আমি চাই এই প্রথা বন্ধ হোক। বৈদিক সভ্যতায় কোথাও এই ধরনের কোনো নির্দেশনা নেই, হিন্দু শ্রুতিতেও এই নিয়ে কোনও উল্লেখ নেই। এটা একটা আদিম উপজাতি প্রথা যা বন্ধ করা উচিত।
Comments are closed.