"সরকারের নীরব প্রশ্রয়ে আলফা এবং কৃষক মুক্তি মোর্চা উত্তেজনা ছড়াচ্ছে", আলাপচারিতায় বললেন বিধায়ক কমলাক্ষ
কংগ্রেস বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ বরাক উপত্যকার বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে সব সময়ই সরব। বিধানসভায়ও বিরোধী আসনে বসে বিভিন্ন সময়ে শিলচর রেল স্টেশনের নাম ভাষা শহিদ স্টেশনে পরিবর্তন, ভাষা শহিদদের সরকারি স্বীকৃতি, বন্যা ত্রাণ প্রভৃতি নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন উত্থাপন করে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছেন। অতি সম্প্রতি আলফা এবং সালফা নেতাদের বাঙালি বিরোধী বয়ানের বিরুদ্ধে তাকে আমরা সরব হতে দেখেছি।
এখানে উল্লেখ্য, আলফা নেতারা বিগত কয়েক দিন ধরে বিভিন্ন বয়ানে বাঙালিদের আক্রমণ করে চলেছেন।
বরাক বুলেটিনের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে বিধায়ক বললেন, সরকার বাঙালি ভোটারদের সাথে ভোটব্যাঙ্ক রাজনীতি করে চলেছে। তিনি আরও মত ব্যক্ত করেন যে রাজ্য সরকার বাঙালি বিরোধী মৃণাল হাজারিকা প্রমুখদের উৎসাহ যোগাচ্ছেন। সাক্ষাৎকারের সম্পাদিত অংশ তুলে ধরা হলো,
এই মুহূর্তে আপনাকে সরব হতে বাধ্য করল?
এখন পরিবেশটা এমন হয়ে উঠেছে যে বাঙালি কেউ কিছু বললেই ওদের বিরুদ্ধে মামলা করে দেওয়া হচ্ছে। *আলফার প্রাক্তন সদস্য অর্থাৎ সালফা মৃণাল হাজারিকা* বারবার বিভিন্ন ধরনের বিরূপ মন্তব্য করে চলেছেন,এর বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না । সুবোধ বিশ্বাসকে উত্তেজনা ছড়ানোর দায়ে ১৭-১৮ মাস জেলে ঢুকিয়ে রাখা হলো । অথচ একই কাজ করলেও এদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। তাহলে আমরা কোন দেশে আছি!
সরকারের ভূমিকাটা কি?
এই সরকার গঠনে বাঙালি, বরো সবাই ভোট দিয়েছিল; বিশেষ করে বাঙালিরা দু হাত ভরে ভোট দিয়েছিল। এখন বাঙালিদের এই হেনস্থাটা কেন! সর্বানন্দ সোনোয়াল এবং উনার সহযোগীরা ‘আসু’কে ভিত্তি করেই গড়ে উঠেছেন। ওদের এই মানসিকতাই কাজ করছে। হাজেলাকে সামনে রেখে পেছন থেকে ওরাই কলকাঠি নাড়ছেন। মুখে এক ধরনের কথা বলছেন আর কার্যক্ষেত্রে করা হচ্ছে ঠিক উল্টোটা। না হলে *মৃনাল হাজারিকা* ওরা বাঙালিদের হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য এই ধরনের কথা বলতে সাহস পেতেন না। ওদের বিরুদ্ধে আজ পর্যন্ত কেন আইনত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না! ভোট আদায়ের জন্য মুখে একটা কথা বলছে বাঙালিদের, আর উল্টোদিকে বাঙালিদের ধ্বংস করার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে।
প্রামাণ্য হিসেবে যে পাঁচটা নথি আপাতত স্থগিত রাখা হলো সেই বিষয়ে আপনি কি বলেন?
পনেরোটা নথি দিয়ে শুরু করে পাঁচটা বাতিল করে দেওয়া হলো। দুই কোটি ৯০ লক্ষ লোকের নাম খসড়া তালিকায় আসলো এই ১৫টি প্রামাণ্য নথির ভিত্তিতে। এখন ৪০ লক্ষ লোকের জন্য আলাদা নিয়ম করে পাঁচটা নথি বাতিল করার উদ্দেশ্যটা কি! উদ্দেশ্যটা হচ্ছে, প্রক্রিয়াটাকে জটিল করে তোলা। বিশেষ করে আসু এবং কৃষক মুক্তি মোর্চার ভূমিকাটা কি! এই যে ১৫টা নথি প্রামাণ্য হিসেবে গৃহীত হয়েছিল তা আসু সহ বিভিন্ন সংগঠনের সাথে আলাপ আলোচনা করেই নির্ধারিত হয়েছিল। এখন তো এই ব্যাপারে এরা কিছুই বলছে না। এনআরসির মাধ্যমে ভাষিক এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগণকে হেয় প্রতিপন্ন করা হচ্ছে। এনআরসিতে যাতে এদের নাম না আসে এই প্রচেষ্টা চলছে । ফুটবল খেলায় বিরতির সময় নিয়ম পাল্টে বলা হবে নাকি যে, এক দলে চারজন এবং অন্য দলে এগারো জন খেলবে! জনগণের সাথে এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সংগঠনের সরব হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু বাস্তবে তা না হয়ে জনগণের দৃষ্টিকে অন্যদিকে কৌশলে ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছে । আসু এবং কৃষক মুক্তি মোর্চা মুখে একটা কথা বলছে আর বাস্তবে করছে ঠিক তার উল্টো। এটা বাঙালিদের ধ্বংস করার একটা চক্রান্ত।
Comments are closed.