মেধা তালিকায় স্থান করে নেওয়া শিলচরের তিন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কিছুক্ষণ
দশম শ্রেণী কিংবা দ্বাদশ শ্রেণীর ফলাফল ঘোষণায় ছাত্র তথা অভিভাবকদের চিন্তার পাশাপাশি শিক্ষক, পাড়াপরশি সহ সবারই উদ্বেগ, কৌতুহলের শেষ থাকে না। বরাক উপত্যকায় দশম শ্রেণীর পরীক্ষায় তেমন সাড়া জাগানো ফলাফল না হওয়ায় দ্বাদশ শ্রেণীর ফলাফলে সবার চোখ আটকে ছিল। ভালো কিছু করে দেখানোর দায়িত্বটাও যেন তাদের উপরই বর্তে ছিল।বলাবাহুল্য ওরা ওদের দায়িত্ব পালনে সফল হয়ে মা বাবা তথা বরাক উপত্যকাবাসীর মুখ উজ্জ্বল করেছে। আসাম উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা কাউন্সিল(এএইচএসইসি) এর দ্বাদশ শ্রেণীর পরীক্ষায় ৫ জন শিক্ষার্থী মেধা তালিকায় স্থান করে নিয়ে রাজ্যের শিক্ষা ক্ষেত্রে বরাক উপত্যকার মান বাড়িয়েছে।
বরাক বুলেটিন ডট কম বিজ্ঞান বিভাগে চতুর্থ স্থান দখলকারী শিলচরের পৃথ্বীরাজ দে, বানিজ্য বিভাগে ষষ্ঠ স্থানাধিকারী সায়ন পাল, সপ্তম স্থানাধিকারী কুন্তলা গুপ্ত, বিজ্ঞান বিভাগে অষ্টম স্থানাধিকারী করিমগঞ্জের ম: শাকিল আক্তার ও অষ্টম স্থানাধিকারী হাইলাকান্দির যশ সারদাকে বিশেষ ভাবে অভিনন্দন জানাচ্ছে। ফলাফল ঘোষণার পর আমাদের প্রতিনিধির সঙ্গে মেধা তালিকায় আসা শিলচরের তিন জন ছাত্রছাত্রী এই সাফল্যে তাদের প্রতিক্রিয়া, সাফল্যের পেছনে তাদের প্রচেষ্টা, আগামীতে ক্যারিয়ার ঘিরে তাদের পরিকল্পনা সহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন। সাক্ষাৎকারের নির্বাচিত অংশটুকু তুলে ধরা হলো।
পৃথ্বীরাজ দে, চতুর্থ স্থান, বিজ্ঞান বিভাগ
তোমার এই সাফল্যের পেছনে কার অবদান সবচেয়ে বেশি?
মা বাবা দুজনেরই। মা পদার্থ বিদ্যা নিয়ে পড়েছেন বলে অনেক সময়ই আমাকে সাহায্য করতে পেরেছেন। বাবা চাকরির সুবাদে ধর্মনগরে আছেন বলে প্রায়ই ফোনে আমাকে বিভিন্ন ভাবে উৎসাহিত করতেন।তাছাড়া শিক্ষকরা আমাকে ভীষন ভাবে সাহায্য করেছেন এই ক্ষেত্রে।
এই পরীক্ষার জন্য কবে থেকে বিশেষ ভাবে নিজেকে তৈরি করতে শুরু করলে?
কাউন্সিলের পরীক্ষার জন্য ১৫ জানুয়ারি থেকে সঠিকভাবে প্রিপারেশন নিতে শুরু করেছি।
এরকম ফলাফল হবে বলে আশা করেছিলে?
না,না। মোটেই না। কারণ আমার মা বলেন, আশা করতে নেই, তাহলে নিরাশ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। you should do your best……..
পড়াশুনার বাইরে কি করতে তোমার ভালো লাগে?
এই দুই বছরতো ঘরের বাইরে কিছু করিনি। ঘরে বসে পড়ার অবসরে কখনও টিভি দেখেছি, কখনও কম্পিউটারে গেম খেলেছি ও বই পড়েছি। তবে ক্রিকেট, বেডমিন্টন খেলতে ভালো লাগে। পেন্টিংও করি।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?
এখন ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি নেওয়ার ইচ্ছে। তারপর আমি আই এস হওয়ার চেষ্টা করব।
সায়ন পাল, ষষ্ঠ স্থান, বানিজ্য বিভাগ
পরীক্ষার আগে কত ঘন্টা পড়াশোনা করতে? কতজন প্রাইভেট টিউটর রেখেছিলে?
আমি দিনে ৪/৫ ঘন্টা পড়াশোনা করতাম। আমার তিন জন প্রাইভেট টিউটর ছিলেন।
তোমার রোল মডেল কে?
আমার বাবা। তিনি নিজে একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী।
সোস্যাল মিডিয়ার প্রভাব সম্পর্কে কি মনে হয় তোমার? এতে পড়াশোনার ক্ষতি হতে পারে?
মানুষ যেভাবে এটাকে বাজে বলে আমি কিন্তু তা মনে করি না। অনেক তথ্য পাওয়া যায়, সাম্প্রতিক কালের ঘটনাবলী সম্পর্কে জানা যায়।আসলে এটা নিজের উপর নির্ভর করে। শুধু ফটো আপলোড করার জন্য যদি এই মিডিয়া ব্যবহার করা হয় তাহলে অবশ্যই এটা আমাদের জন্য হেল্পফুল হবে না।
ভবিষ্যত পরিকল্পনা কি?
সি এ পড়ার ইচ্ছে, কলকাতায় গিয়ে।
কলকাতায় কেন? আসামে কেন পড়বে না?
আসামে সি এ র কোচিং ততটা ভালো না। তাই কলকাতায় পড়তে চাই। তবে কলকাতায় পড়াশোনা করলেও চাকরি কিন্তু আসাম তথা শিলচরে করতে চাই।
কুন্তলা গুপ্ত, সপ্তম স্থান, বানিজ্য বিভাগ
এই পরীক্ষা ঘিরে কি ধরনের প্রত্যাশা ছিল?
পরীক্ষা খুবই ভালো হয়েছিল, কিন্তু মেধা তালিকায় আসব বলে আশা করিনি।
পরীক্ষার জন্য তোমার স্ট্র্যাটেজিটা কি ছিল?
তেমন বিশেষ কিছু ছিল না।তবে কলেজে ক্লাসগুলো ভালভাবে এটেন্ড করেছি। ক্লাসেই সবকিছু বুঝে নেওয়ার চেষ্টা করতাম।আসলে ক্লাসে মনোযোগ থাকলে পরে কোনো সমস্যা হয় না।
কবে থেকে পরীক্ষার জন্য প্রিপারেশন নিতে শুরু করলে?
সেভাবে প্রিপারেশন কোনদিনই নেই নি। অনেকে বলে ৮/১০ ঘন্টা পড়ার জন্য। আমি কোনদিন ৮/১০ ঘন্টা পড়েছি বলে মনে পড়ছে না। আমি ৫/৬ ঘন্টাই পড়েছি।
পড়ার বাইরে আর কি কর? তোমার প্রিয় লেখক কে?
গান ও নাচ করি। প্রিয় লেখক সত্যজিৎ রায়। তাছাড়া ফিকশন নভেল পড়তে ভালো লাগে।
নভেলগুলো মোবাইলে পড় না ছাপা বই হিসেবে পড়?
মোবাইলে বই পড়তে আমার একটুকু ভালো লাগে না।বই পড়ার স্বাদটুকু এতে পাই না।হাতে নিয়ে বই পড়ার মজাটাই আলাদা।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?
দিল্লি ইউনিভার্সিটিতে এ্যাপ্লাই করব। তারপর বি কম করে ব্যাঙ্কিং সেক্টরে যাব।
ব্যাঙ্কিং সেক্টরে নির্দিষ্ট কোনো স্থানে পৌঁছানোর গোল রয়েছে?
না, গোল থাকলে না পৌঁছাতে পারলে হতাশা আসবে।তাই গোল স্থির বা আশা করতে নেই, নিজের বেস্ট টা দিয়ে যাও। তারপর যা হওয়ার হবে।
Comments are closed.