
শিলচর মিশনের আকর্ষণ আজও তীব্র, পুজোতে মিশনে যাওয়া চাই-ই, জানালেন শিলচরের গীতশ্রী
রামকৃষ্ণ মঠ মিশনের পূজার সূত্রপাত ১৯০১ সালে স্বামী বিবেকানন্দের হাত ধরে। রঘুনন্দন স্মৃতিগ্রন্থ শাস্ত্রে যে নিয়ম বিধি আছে সেটিকে মেনে এই পূজা অনুষ্ঠিত হয় এবং আজ অবধি সেইধারা দুর্গাপুজোতে অব্যাহত আছে। রামকৃষ্ণ মঠ মিশনের অনেক কেন্দ্রে এই দুর্গাপূজার প্রচলন রয়েছে।
গৌহাটি রামকৃষ্ণ মিশন বেলুড় মঠের অন্তর্ভুক্ত হয় হাজার ১৯৬৮ সালে। ১৯৩৯ সালে শ্রীরামকৃষ্ণ সেবা সমিতি হিসেবে এই কেন্দ্রের সূত্রপাত। প্রাচীন তথ্য অনুযায়ী আনুমানিক ১৯৫০ এর দশক থেকে এই দুর্গাপূজা শুরু হয় বলে ধারণা করা হয়।এই পুজো মূলত আশ্রম এর সঙ্গে যুক্ত অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ অনুরাগী বা অনুরাগী ভক্তদের শারীরিক মানসিক এবং আর্থিক সহযোগিতার মাধ্যমেই সম্পন্ন হয়। তবে মূল নেতৃত্বে থাকেন আশ্রমের বা অন্য কেন্দ্র থেকে আগত সাধু ব্রহ্মচারীরা।
এই আশ্রমের মূল আকর্ষণ হচ্ছে অষ্টমী তিথিতে কুমারী পূজা। ওই দিনে আশ্রম প্রাঙ্গণ এক বিশাল জনসমুদ্রে রূপ নেয়। আসামের স্থানীয় মানুষ এই পুজোতে অংশগ্রহণ করেন। কুমারী পুজোতেও স্থানীয় অসমিয়া পরিবারের ব্রাহ্মণ কন্যারা প্রায় বছরই পূজিতা হয়ে থাকে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি।দুর্গা প্রতিমা আশ্রমেই প্রতি বৎসর নির্দিষ্ট শিল্পীরা তৈরি করার দায়িত্বে থাকেন এবং প্রতিমা তৈরি থেকে শুরু করে এই বিশাল কর্মযজ্ঞের ভারটি রামকৃষ্ণ ভক্ত মন্ডলী ও সাধারণ ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি বহন করেন।
সপ্তমী অষ্টমী নবমী এই তিনদিনই আশ্রমে আগতদের মধ্যে খিচুড়ি প্রসাদ ও সময় সাপেক্ষে মায়ের অন্ন ভোগও পরিবেশন করা হয়।
আনন্দ উৎসব বলতে মায়ের আবির্ভাব উপলব্ধি এখানের আনন্দ। মৃন্ময়ী মা সন্ন্যাসী ও ভক্তদের ভাবে হয়ে উঠেন চিন্ময়ী। ভক্তি ভাবই এই পূজার মূল মন্ত্র।শ্রী রামকৃষ্ণ বিবেকানন্দ বেদান্ত লিটারেচার-এর একটি বৃহৎ “বুক স্টল” এ পূজার প্রতিদিন ভক্তদের চাহিদা অনুযায়ী বই, ফটো ইত্যাদির পসরা নিয়ে বসেন সেবকরা। খুব অল্প মূল্যে ভক্তদের কাছে এগুলো বিক্রি করা হয়।
তিন দিন কি করে কেটে যায়, বোঝাই যায় না।দুর্গাপূজায় বেশিরভাগ সময় মিশনেই কাটে।শিলচর মিশনের কথা এসময় ভীষণ ভাবে মনে হয়।ওই দিনগুলো চোখের সামনে ভেসে উঠে। সবাই একসঙ্গে অঞ্জলি প্রদান, খিচুড়ি প্রসাদের জন্য লম্বা লাইন কত কি!সে আকর্ষণ আজও তীব্র।শিলচর মিশনের জন্য মন খারাপ হলেও গৌহাটি মিশনে গিয়ে মায়ের মুখ দেখেই মা আসার আনন্দে মেতে উঠি। তাই এখনও পুজোতে মিশন ছাড়া অন্য কিছু ভাবাই যায় না। মিশনের খিচুড়ি না খেলে মনে হয়, পুজোর আনন্দ অপূর্ণ রয়ে গেল। নবমীর সন্ধ্যায় মনে হয়, আবার এক বছর অপেক্ষায় থাকতে হবে মায়ের আগমনের। তবু মাকে বিদায় জানাতেই হয়। দশমীর দিন ঠাকুরের আরতির আগে আশ্রম পুকুরে দেবী প্রতিমা নিরঞ্জন করা হয়।
গীতশ্রী তরফদার পেশায় জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার।গুয়াহাটি মিশনের সঙ্গে জড়িত থাকায় ভাগ করে নিলেন গৌহাটি মিশনের দুর্গাপূজা নিয়ে কিছু কথা।
Comments are closed.