করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কা সামলে কিছুটা হলেও ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে ভারত। গত কয়েকদিনে দৈনিক সংক্রমণের হার ক্রমশই নিচের দিকে। দেশের অনেক শহরেই ইতিমধ্যে কোচিং ক্যাম্প ও অ্যাকাডেমির প্রশিক্ষণও শুরু হয়ে গেছে। গোটা বরাক সহ কাছাড়েও সংক্রমণের হার কমছে। তবে রাজ্যের অন্যান্য জেলার তুলনায় কাছাড় সহ আরও ৩-৪ টি জেলায় দৈনিক সংক্রমণের হার এখনো বেশি। ফলে কাছাড় সহ আরও ৩-৪ টি জেলা রাজ্য সরকারের কড়া নজরদারিতে রয়েছে। এমনকি এইসব জেলাতে পুরোপুরি লকডাউনের সম্ভাবনাও রয়েছে। আগামী দু-একদিনের মধ্যেই এনিয়ে চিত্রটা পরিষ্কার হয়ে যাবে। তবে ফের একবার যদি কাছাড়ে পুরোপুরি লকডাউন ঘোষণা করে রাজ্য সরকার তাহলে স্থানীয় খেলাধুলার ক্ষেত্রে বিরাট ক্ষতি হয়ে যাবে।
মিনি লকডাউন এর জেরে এমনিতেই শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থার গেট বন্ধ। সব ধরনের খেলাধুলাই এই মুহূর্তে বন্ধ রয়েছে। বছরের এই সময়টায় গোটা দেশে ঘরোয়া ক্রিকেট বন্ধই থাকে। তাই ক্রিকেটারদের তেমন ক্ষতি হচ্ছে না। তবে অ্যাথলিট এবং ফুটবলারদের বিরাট ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে। বছরের এই সময়টাতে আন্তঃজেলা স্তরে বিভিন্ন অ্যাথলেটিকস টুর্নামেন্ট হয়ে থাকে। তবে মিনি লকডাউন থাকায় গোটা রাজ্যের সঙ্গে কাছাড়েও সব ধরনের অ্যাথলেটিক্স ইভেন্ট বন্ধ রয়েছে। গ্রামেগঞ্জে অ্যাথলিটরা চর্চায় থাকলেও শহরে তো পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে অ্যাথলেটিক্স। গতবছরও লকডাউন থাকায় গৃহবন্দি অবস্থায় থাকতে হয়েছিল স্থানীয় অ্যাথলিটদের। এবার সেরকম পরিস্থিতি না থাকলেও শহরের প্রতিটি মাঠের গেট বন্ধ থাকায় চর্চা করতে পারছেন না অ্যাথলিটরা।
এই যখন পরিস্থিতি তখন নতুন করে পুরোপুরি লকডাউন ঘোষণা হলে আরও একটা মরশুম মার খাবেন অ্যাথলিটরা। গত ক’দিন থেকেই দেশে করোনা সংক্রমনের হার নিম্নমুখী হওয়ায় একটা আশার আলো দেখতে পেয়েছিলেন স্থানীয় ক্রীড়াবিদরা। তবে কাছাড়ে পুনরায় লকডাউন এর সম্ভাবনা দেখা দেওয়ায় ফের চিন্তিত হয়ে পড়েছেন অ্যাথলিটরা।
সবচেয়ে খারাপ অবস্থা তো ফুটবলারদের। গত কয়েকদিন থেকে ঘরোয়া ভাবে নিজেদের মধ্যে প্র্যাকটিস শুরু করেছিলেন শিলচরের অধিকাংশ ফুটবলার। নিজেদের ফিট রাখতে সকালে জগিং এবং মাঠে গিয়ে ফুটবল নিয়ে হালকা প্র্যাকটিস শুরু করেছিলেন। কিন্তু নতুন করে লকডাউন এর সম্ভাবনা দেখা দেওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছেন তারা। করোনা আবহেই ইতিমধ্যে নিজেদের অ্যাকাডেমির প্রশিক্ষণ শুরু করেছিল উধারবন্দের টেবিল টেনিস ক্লাব ও শিলচর ফুটবল অ্যাকাডেমি। তবে পুনরায় লকডাউন ঘোষণা হলে সেই প্রশিক্ষণ বন্ধ করতে হবে টি টি ক্লাব ও শিলচর ফুটবল অ্যাকাডেমিকে।
সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, এই দুটি ক্লাব ও অ্যাকাডেমির প্রশিক্ষণ শুরু হবার ফলে কিন্তু স্থানীয় ক্রীড়ামহলে এক বিরাট ইতিবাচক বার্তা পৌঁছে ছিল। পুনরায় মূলস্রোতে ফেরার এক আশা জন্মেছিল। কিন্তু লকডাউন হয়ে গেলে সবকিছুই মাটি হয়ে যাবে। ফুটবলের ক্ষেত্রে এ বছর অক্টোবর পর্যন্ত একটা সম্ভাবনা রয়েছে। তবে তার জন্য অন্তত জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে হবে। তার আগে অবশ্যই শুরু হতে হবে আনলক প্রক্রিয়া। কিন্তু ফের একবার যদি পুরোপুরি লকডাউন হয়ে যায় তাহলে মূলস্রোতে ফেরার প্রক্রিয়াটা বিরাট ধাক্কা খাবে। বিশেষ করে ফুটবলের ক্ষেত্রে। কারণ মরশুমের এই সময়টা ফুটবলের জন্য পিক আওয়ার। আর যতই সময় যাচ্ছে ততই পুনরায় মরশুম শুরু করার সম্ভাবনা কমছে। এমন অবস্থায় স্থানীয় ক্রীড়ামহল এর জন্য আগামী দু একটা দিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ হতে যাচ্ছে। কাছাড়ের লকডাউন সম্ভাবনা নিয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা কি সিদ্ধান্ত নেন, আপাতত সেদিকেই তাকিয়ে স্থানীয় ক্রীড়াবিদরা।
Comments are closed.