Also read in

এপারের উনিশ নিয়ে কি ভাবছেন ওপারের পরিজনরা, কিভাবে চলছে উনিশ স্মরণ!

সারা বিশ্বজুড়ে বাঙালির গর্ব উনিশে মে আর একুশে ফেব্রুয়ারি। উনিশে মে আমাদের আত্মাভিমানের জায়গা। অহংকারের আধার। রক্তে রাঙা উনিশ আমাদের চেতনায়, আমাদের অস্তিত্বে। সেই উনিশ শুধু আজ আর বরাক উপত্যকায় সীমাবদ্ধ নেই।সীমা আর সীমান্ত ছাড়িয়ে উনিশ পৌঁছে গেছে দেশ থেকে দেশান্তরে। চলছে সর্বত্র শ্রদ্ধায় শহিদ স্মরণ। চলুন জেনে নেই এপারের উনিশ নিয়ে কি ভাবছেন ওপারের পরিজনরা! কিভাবে চলছে উনিশ স্মরণ!

মো.মনির হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক,বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ, পরিচালক,তিতাস আবৃত্তি সংগঠন

বরাককে ছাড়িয়ে তিতাসের পাড়ে ১৯ মে স্মরণ

ত্রিপুরার গণমানুষের কবি অনিল সরকারের মাধ্যমেই মহান ১৯ মে,র সাথে আমার পরিচয় ঘটে। সাহিত্যপত্র সরোদ ছাপতে গিয়ে কবি জয়দুল হোসেন’র দেওয়া অনিল সরকারের কবিতায় যেমন পাই ১৯ মে,র মাতৃভাষা আন্দোলন তেমনি আগরতলায় তার সাথে সাক্ষাতেও তিনি এ নিয়ে অনেককিছু জানিয়েছেন। তিনি চাইতেন আসামের শিলচর,ত্রিপুরার আগরতলার বাইরেও যেনো ১৯ মে,র ভাষা শহীদদের স্মরণ করা হোক। তাঁর আকাঙ্খায় প্রাণিত হয়েই আমরা তিতাস আবৃত্তি সংগঠন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মহান ১৯ মে ভাষা শহিদদের স্মরণে উদ্যোগ নিতে শুরু করি। আমরা বিশ্বাস করি মহান ২১ ফেব্রুয়ারির ভাষা শহিদদের রক্তই মহান ১৯ মে ভাষা আন্দোলনকে প্রাণিত করে। ২০১৪ সালেই প্রথম তিতাস আবৃত্তি সংগঠন শহিদ মিনারে ফুল দিয়ে বরাক উপত্যকার বীর কমলা ভট্টাচার্য সহ ১১ ভাষা শহিদকে শ্রদ্ধা জানায়। বরাক নদীর প্রাণের ঢেউ আছড়ে পড়ে তিতাস নদীর পাড়ে। এ কর্মসূচি দেখে ২০১৫ সালে সংগঠনের আবৃত্তিকর্মী সাথী ও সজ্জা দু’বোন ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশন এলাকায় তাদের পরিচালিত পথশিশুদের স্কুলও তিতাস আবৃত্তি সংগঠনের সাথে যুক্ত হয়ে ১৯ মে উদযাপন করতে আগ্রহী হয়। এ বছর দুটো প্রতিষ্ঠান মিলে রেলস্টশন এলাকা থেকে মিছিল সহ আমরা ব্রাহ্মণবাড়িয়া কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে গিয়ে পুষ্পার্ঘ দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়ে কথা ও কবিতায় ভাষা শহিদ স্মরণ অনুষ্ঠান করি।

২০১৬ সাল থেকে তিতাস আবৃত্তি সংগঠন শহরের প্রাণকেন্দ্র গভর্নমেন্ট মডেল গার্লস স্কুলের শহিদ মিনারে ১৯ মে’র ভাষা শহিদ স্মরণ অনুষ্ঠান নিয়মিত উদযাপন শুরু করে। এবছর শুধুমাত্র সংগঠনের কর্মীরা শহিদ মিনারে ফুল দিয়ে ও খালি গলায় কবিতা পড়ে। ২০১৭ সালে এসে পরিসর বড় হয়। বেড়ে যায় আনুষ্ঠানিকতা। এ বছরই প্রথম সাউন্ড সিস্টেম এনে-চেয়ার টেবিল সাজিয়ে-ব্যানার ফেস্টুন লাগিয়ে-অতিথি আমন্ত্রণ করে ভাষা শহিদদের শ্রদ্ধা জানানো হয়। এদিন ছিলো শুক্রবার। আয়োজনটি ছিলো সকালে। শহরের অনেক বিশিষ্টজনই আমাদের আমন্ত্রণে সাড়া দিয়েছিলেন। শহরের অন্যান্য দু,একটি আবৃত্তি সংগঠনও যুক্ত হয়ে কবিতায় অংশ নেয়। তিতাস আবৃত্তি সংগঠনের শিল্পীরাও ১৯ মে’র কবিতা আবৃত্তি করেন অন্তর দিয়ে। ঘটা করে করায় এখানের অনেক বিশিষ্টজনেরা প্রথমবারের মতো আসামের শিলচরের মহান ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে অবগত হন। ২০১৮ সালে আমাদের অনুরোধে সাড়া দেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার গণমানুষের নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি। তিনি আসায় ১৯ মে’র অনুষ্ঠানের ব্যাপকতা বেড়ে যায়। প্রচুর রাজনৈতিক নেতাকর্মীও নতুনভাবে ১৯ মে সম্পর্কে জানতে-বুঝতে চেষ্টা করেন। ঢাকা থেকে সাড়া দেন বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক আন্দোলনের পুরোধা নেতৃত্ব বরেন্য আবৃত্তিশিল্পী হাসান আরিফ। ত্রিপুরার ধর্মনগর থেকে আসেন লেখক জ্যোতির্ময় দাস,আবৃত্তিশিল্পী নিলোৎপল গোস্বামী ও নির্ঝর পাল। এ বছর জেলা প্রশাসক রেজওয়ানুর রহমান,অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইকবাল হোসেন,জেলা আওয়ামিলিগ’র সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আল মামুন সরকার সহ অনেক গুণীজন উপস্থিত হয়ে অসমের বাংলা ভাষা শহিদদের শ্রদ্ধা জানান। ২০১৯ সালেও প্রচুর বৃষ্টি উপেক্ষা করে ১৯ মে উদযাপিত হয় ব্যাপকভাবে। প্রধান অতিথি ছিলেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফ। উদ্ধোধন করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামিলিগ সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার। আমন্ত্রিত আবৃত্তিশিল্পী ছিলেন বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ যুগ্ম-সম্পাদক কাজি মাহতাব সুমন।

তিতাস আবৃত্তি সংগঠনের কর্মীরা বিশ্বাস ও শ্রদ্ধা থেকেই ১৯ মে উদযাপন করেন। শ্রদ্ধায়-ভালোবাসায় উচ্চারণ করেন একুশ-উনিশের পংক্তিমালা। স্বপ্ন দেখেন,শুধু পুরো বাংলা নয় বিশ্বজুড়েই উচ্চারিত হবে ১১ ভাষা শহিদের নাম। জয় হোক ১৯ মে’র।জয় হোক বাংলাভাষার।

বাছির দুলাল, সহকারি পরিচালক, তিতাস আবৃত্তি সংগঠন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, বাংলাদেশ

৫২ আর ১৯ যেন একসূত্রে গাঁথা একটা মালা

মানুষের মৌলিক চাহিদার মতোই ভাষা একটা চাহিদা। বাকি ৫টা চাহিদায় কিছু ঘাটতি থাকলেও সময় এবং জীবন চলে যায় টেনেটুনে।কিন্তু ভাষায় সামান্য আঁচ লাগলে তা কখনোই সহ্য হয়না। কারণ বাংলাদেশের স্বাধীনতার বীজ বপন হয়েছিল ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়েই। একথা আজ প্রায় সবারই জানা। কিন্তু খুব স্বাভাবিক একটা বিষয়, মানুষ ক্ষুধায় কাতর হলেও এভাবে আন্দোলিত হয়না। এইরকম আরেকটি আন্দোলন আমাদের আলোড়িত করে ১৯৬১ সালের ১৯মে। শিলচরের আন্দোলন পুরো ভারতবর্ষে সে-রকম কোন প্রভাব ফেলেনি। কারণ এই আন্দোলন শুধুই যেন বাংলার জন্য। কিন্তু একটি ভাষাকে সম্মান দিতে এতো তাজাপ্রাণ রক্তাক্ত হলো, শহিদ হলো তা নিয়ে যেন মাতামাতি শুধুই শিলচর আর কলকাতার কিছু বিজ্ঞজনের। পুরো পৃথিবীতে একটাই নজরানা জিইয়ে রাখলো বাংলাভাষা।

৫২ আর ১৯ যেন একসূত্রে গাঁথা একটা মালা। আপনি প্রয়োজনে অন্য ভাষা ব্যবহার করতেই পারেন আধুনিক বিশ্বে। কিন্তু ঘরে রাস্তায়, আড্ডায়, যাত্রাপথে অন্য ভাষার ভিড়ে যখন বাংলা হারিয়ে যায় তখন বীর শহিদদের আত্মা যেন কেঁপে উঠে। খটকায় পড়ে নয়, ভালোবেসেই বাংলাটা উচ্চারণ করুন, দেখবেন এই ভাষা কতটা গভীর কতটা প্রিয়তমার প্রিয়।

১৯মে’র আত্মদান পৃথিবীর সবাই জানুক। পৃথিবীর সবাই তাদের একদিন স্যালুট জানাক। শহিদের আত্মা শান্তি পাক ভালোবাসায় আর শ্রদ্ধায়।

Comments are closed.